হাড়ে হাড়ে টের পাবেন
ভিতর থেকে সুস্থ আর বাইরে থেকে সুন্দর’ ফিটনেস-এর এই সহজ সরল সত্যকে উপেক্ষা করা যায় না। শারীরিক ফিটনেসকে উপভোগ করতে চাইলে সুস্থ, সবল, শক্তপোক্ত ও মজবুত হাড় গঠনে উদ্যোগী হতে হবে। দেহের হাড়ের কর্মক্ষমতার যে কোনও পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোর ওপর সব সময় একটা প্রভাব ফেলে। ছিদ্রযুক্ত, দুর্বল ও ভঙ্গুর হাড় তৈরি হয়ে অত্যধিক আঘাতপ্রবণ অবস্থায় চলে আসার মতো এক প্রকার নিঃশব্দ ঘাতক রোগ হল অস্টিয়োপরোসিস। একে প্রতিরোধ করতে পুষ্টিকর খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা বিপুল ভাবে সাহায্য করে। অল্প বয়স থেকেই মজবুত হাড় গড়তে উদ্যোগী হলে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসে। শুরুটা তাই অল্প বয়স থেকেই করতে হবে।
• বোন মিনারেল ডেন্সিটি (BMD) নির্ণয়ের মাধ্যমে দেহের হাড়গুলি কতটা শক্তপোক্ত, তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। এর জন্য চিকিৎসকরা DXA স্ক্যানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সংখ্যা ব্যবহার করে হাড়ের ঘনত্ব মাপা হয়। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাকে বলা হয় T-Score। T-Score মাইনাস ১-এর ঊর্ধ্বে হলে স্বাভাবিক। মাইনাস ১ থেকে মাইনাস ২.৫-এর মধ্যে T-Score কে বলা হয় অস্টিয়োপেনিয়া। মাইনাস ২.৫-এর নীচে যে কোনও সংখ্যাই অস্টিয়োপোরোসিস হিসেবে ধরা হয়।
কোনও লক্ষণ দিয়েই প্রাথমিক ভাবে হাড়ের দুর্বলতা চেনা যায় না। তাই অস্টিয়োপেনিয়া বা অস্টিয়োপোরোসিস প্রকৃত অর্থেই এক নীরব রোগ। আপনি হয়তো জানবেনই না যে, আপনার হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। যত ক্ষণ পর্যন্ত অতিরিক্ত পরিশ্রম, আচমকা ওঠানামা করা বা পড়ে যাওয়ার কারণে হাড় ভেঙে না যায়। ভেবে দেখুন, কবে হাড় ভাঙবে, তত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, নাকি আগে থেকেই চেষ্টা করবেন?
• ভবিষ্যতে অস্টিয়োপেনিয়া বা অস্টিয়োপোরোসিসকে প্রতিরোধ করে, হাড়কে সুস্থ, সবল রাখার কৌশল হিসাবে, সারা পৃথিবী জুড়ে বোন-লোডিং এক্সারসাইজ প্রাধান্য পাচ্ছে।
• হাড়কে মজবুত করতে, হাড়ের ভরকে (বোন মাস) বাড়িয়ে তুলতে এটি বিশেষ ধরনের ব্যায়াম। এ ক্ষেত্রে দেহের ওজনকে কাজে লাগিয়ে হাড়গুলির ওপর ধীরে ধীরে চাপ ফেলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে শরীরেও একটা বেন্ডিং, স্ট্রেচিং আর টুইস্টিং-এর প্রভাব দেওয়া হয়। শুধু হাড়গুলির ওপর চাপ ফেলা নয়, ব্যায়ামের সময় কতটা স্বাচ্ছন্দ্য, বৈচিত্র এবং গতিকে বজায় রাখছেন, সেটাই মূল বিষয়। প্রতি দিন অনুশীলন করতে হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে অথবা শুয়ে বোন-লোডিং করা যায়। হিপবোন, কব্জি, পুরোবাহু, শিরদাঁড়ার হাড়ের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। হাড়ের জন্য ব্যায়ামকে এই ভাবে সাজান যে, প্রথমে ‘ওয়ার্ম আপ’ দিয়ে শুরু করে পরে একে একে ‘স্ট্রেচিং অ্যান্ড ফ্লেক্সিবিলিটি’, ‘বোন-লোডিং’, ‘ব্যাক এন্ড টামি’ এবং শেষে ‘কুল ডাউন’ আসবে। মনে রাখবেন, হাঁটা, জগিং, বা সিঁড়িতে ওঠা নামা (স্টেপস) করা বা বেশ কিছু যোগাসন আপাতদৃষ্টিতে পায়ের ও শিরদাড়াঁর হাড়ে চাপ ফেলে। এই সব ব্যায়াম কখনই বোন-লোডিং এক্সারসাইজ নয়। বোন-লোডিং হাড়কে মজবুত করার নির্দিষ্ট ব্যায়াম। এটি হাড়ের ভর বাড়ানোর জন্যই কাজ করে। তাই ‘ট্রেডমিল’, ‘জগিং’, ‘স্টেপস’, বা ‘যোগাসন’ অবশ্যই করবেন, কিন্তু কখনই বোন লোডিং-এর পরিবর্ত হিসেবে নয়।
• সব সময় উচিত এক জন প্রশিক্ষিত ট্রেনার-এর সামনে অনুশীলন করা। বাড়িতে করা প্রায় সম্ভব নয়। প্রশিক্ষিত ট্রেনার বাড়ি এসে কী আর শেখাতে চান? তাই যেখানে প্রশিক্ষিত ট্রেনার-এর সাহায্য পাবেন, সেখানেই ভর্তি হয়ে যান। আজকাল একটা নতুন ট্রেন্ড হয়েছে। অনেকেই গর্ব করে বলেন যে, ‘জিম করি না যোগ করি’! ভাবটা এমন যে, কত পুণ্যের কাজ করছেন। আর যাঁরা জিমে যাচ্ছেন, সবাই যেন পাপ করছে। অষ্টাঙ্গ যোগে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, যমঃ (Mental Hygiene) ও নিয়মঃ (Physical Hygiene) কঠোর ভাবে না মেনে চললে পরবর্তী ধাপে যোগাসন, প্রাণায়াম, বা যোগমুদ্রার সুফল পাওয়া যায় না। যোগ তো করছেন, কিন্তু যমঃ ও নিয়মঃ কতটা মানছেন? প্রকৃত ফিট থাকতে চাইলে, সব কিছুর থেকে ভালটা গ্রহণ করতে হবে। যাঁদের চেহারা ও গড়ন দেখে সবাই অনুপ্রাণিত হচ্ছে, তাঁদের ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৯৫ জনই জিমে যান। আর হ্যাঁ, তাঁরা যোগটাও জিমেই করেন। ভেবে দেখুন, ‘ওয়েটট্রেনিং’, ‘ক্যালিসথেনিক্স’, ‘পাওয়ার টোনিং’, ‘পিলাটিস’, ‘কার্ডিয়োভাসকুলার ট্রেনিং’, ‘সারকিট ট্রেনিং’, ‘রিলাক্সারসাইজ’, ‘ফেশিয়াল ওয়ার্ক-আউট’, ‘পাওয়ার যোগা’, ‘প্রাণায়াম’ জিম ছাড়া সব একই সঙ্গে কোথায় পাবেন?
• হাড়ের জন্য চাই ঠিক মতো খনিজ পদার্থ যুক্ত খাবার। তিন ভাগের দুই ভাগ বোন টিস্যু তৈরি হয় ক্যালসিয়াম ও Hydorxapatite দিয়ে। তাই ছোট থেকেই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে। তাড়াতাড়ি হাড়ের ভর বৃদ্ধি আর বয়সকালে হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির রোধ করতে ক্যালসিয়াম দরকার। আর ক্যালসিয়ামের কাজকে ত্বরান্বিত করতে ভিটামিন-সি-এর যোগান কম হলে চলবে না। আমন্ড, ডুমুর, কলা, পালং শাক, সয়াবিন, মুগ ডাল, শুকনো খেজুর, স্কিমড মিল্ক, টক দই, চিজ, মাছ, কড লিভার তেল, কমলালেবু, মুসাম্বি, পাতিলেবু এবং আমলকি নিয়মিত আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু করে রাখার চেষ্টা করুন।
• ভিটামিন-ডি’র পরিমাণ ঠিক রাখতে একটু-আধটু রোদেরও প্রয়োজন। আমাদের দেশের নেচারোপ্যাথরা বহু যুগ ধরে সূর্যকিরণকে স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। হটযোগ শাস্ত্রে, সূর্যের তেজকে ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও বলছে, সকাল সাতটা থেকে ন’টা পর্যন্ত সূর্যের আলোয় অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ কম থাকে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। যা হাড়কে মজবুত ও শক্তপোক্ত রাখে।
• মনে রাখবেন, বোন-লোডিং এক্সারসাইজ করলে রাতারাতি হাড়ের পরিবর্তন হয় না। সময় দিতে হবে। ফল পাওয়ার জন্য নিয়মিত ভাবে বেশ কিছু দিন অনুশীলন করতে হবে। ঘনঘন কোমরের ব্যথা, ঘাড়ের ব্যথা, কব্জি ও হিপবোন ভেঙে যাওয়া কিংবা দাঁতের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শুরু হলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কারণ, তখন বোন-লোডিং-এর মতো এক্সারসাইজ-এর প্রতিরোধে কাজ হবে না। সরাসরি প্রতিকার চাই। তা ছাড়া, বোন-লোডিং কখনওই হরমোন চিকিৎসার বিকল্প নয়। অথবা রজঃনিবৃত্তির পর ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির পরিপূরক নয়। তাই এক বার অস্টিয়োপেনিয়া বা অস্টিয়োপোরোসিস-এ আক্রান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা ঠিক ফুড মিনারেল সাপ্লিমেন্ট-এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অবহেলা করলে হাড়ের যে কোনও ছোট সমস্যা কিছু দিনের মধ্যে ঘাতক আকার নিতে পারে।

যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.