|
|
|
|
চাইল্ড প্রডিজি |
চাচা নেহরু, লাল গোলাপ, স্কুলে ক্লাস নেই, মজা-ই মজা কাল বাদে পরশু
শিশু দিবস। আর সেই শিশুরা? যারা আশৈশব
প্রতিভার
আধার?
অসামান্য, অবিশ্বাস্য,
ব্যাখ্যার অতীত প্রতিভা? ‘চাইল্ড প্রডিজি’র কিছু গল্প। হয়তো অভিশপ্ত শৈশবেরও।
|
প্রতিভার মাসুল দিয়ে গেলেন, আশৈশব |
সলজ্বুর্গ শহরের প্রিন্স আর্চবিশপের দরবারি অর্কেস্ট্রার অন্যতম বাদক লিয়োপোল্ড। ১৭৫৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তাঁর পুত্রসন্তান জন্মাল। কন্যা মারিয়া তখন পাঁচ। ওই বয়েসেই দিব্যি বাজায়। লিয়োপোল্ডের মনে আশা, পুত্রটিও দিদির মতোই দক্ষ বাজিয়ে হবে। মিউজিকের বাড়ি, ছোট্ট ছেলে শুরু থেকেই খুব বাজনা শোনে। তার বয়েস যখন চার, লিয়োপোল্ড আবিষ্কার করলেন, একটা কাগজে অনেক হিজিবিজি, আঁকিবুঁকির মধ্যে যেন একটি মিউজিকাল স্কোর। ভাল করে পড়ে দেখলেন, সত্যিই তা-ই। কিন্তু একেবারে অন্য রকম কম্পোজিশন, বাজানো বেশ কঠিন। চার বছরের ছেলে এসে বাজনার সামনে বসল এবং পুরো কনচের্তোটি দিব্যি বাজিয়ে দিল। হ্যাঁ, একটা আস্ত কনচের্তো লিখে ফেলেছিল সে।
স্তম্ভিত লিয়োপোল্ড পুত্রকে নিয়ে উঠেপড়ে লাগলেন। প্রত্যেক দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস। তার সঙ্গে যত রকমের সুর আর কম্পোজিশন আর বাজনা শোনানো সম্ভব, তাকে
শোনানো। অতঃপর ১৭৬২। ছ’বছরের ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাবা। এক শহর থেকে আর এক শহর, গণ্যমান্য মানুষদের সামনে বিস্ময়বালককে পেশ করেন, সে অদ্ভুত সব কীর্তি দেখায়। কি-বোর্ডের কাপড় চাপা দিয়ে নির্ভুল বাজায়, নানা রকম ঘণ্টা, ঘড়ির আওয়াজ শুনে মুহূর্তে ঠিক ‘নোট’টি বলে দেয়, কখনও-না-শোনা যে কোনও কম্পোজিশন এক বার শুনে পুরো স্কোরটা নিখুঁত লিখে ফেলে এবং বাজিয়ে শোনায়। অবিশ্বাস্য, অলৌকিক। একে বয়েস ছয়, তার ওপর চেহারাটাও খুব ছোটখাটো, উঁচু আসনে বসে খুদে মানুষটা তার গোল গোল মোটা মোটা ছোট ছোট আঙুলগুলো দিয়ে ম্যাজিক দেখাচ্ছে শ্রোতারা সম্পূর্ণ হতবাক। সংগীতপ্রেমী ইয়োরোপে শিশুর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। বড় বড় দরবারে, রাজসভায় ডাক পেল সে। ওই বছরেই লিন্জ শহরে তার প্রথম পাবলিক কনসার্ট। পরের বছর আবার সংগীত সাফারি। এ বার প্যারিস। সেখানে প্রকাশিত হল বালকের প্রথম কম্পোজিশন, মুদ্রিত আকারে। স্রষ্টার বয়স আট।
এই শিশু এর পর কিশোর হবে, তার পর যুবক, তার পর... না, তার আর পর নেই। ১৭৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত্রি একটা নাগাদ উলফগাং আমাডিউস মোৎসার্ট যখন বিদায় নিলেন, তখন তাঁর বয়স ছত্রিশ। কিন্তু সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতস্রষ্টাকে কি আর বয়েস দিয়ে ধরা যায়?
পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের দুনিয়ায় কম বয়েসে প্রতিভার চমকপ্রদ বিকাশ অনেক দেখা গেছে, বিশেষ করে মোৎসার্টের যুগে। শিশু যন্ত্রী তার বাবা কিংবা শিক্ষকের সঙ্গে শহরে শহরে ঘুরে দারুণ বাজনা শুনিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করছে, এমন নজির খুব কম ছিল না। কিন্তু মোৎসার্টের গল্পটা, তিনি মোৎসার্ট বলেই, অনন্য। এবং সেই কাহিনিতে নিহিত আছে এক গভীর বিষাদ। সে এক অজাতশৈশব শিশুর কাহিনি। চার বছর বয়েসে যদি কোনও শিশুর অলোকসামান্য প্রতিভা আবিষ্কৃত হয়, যদি আবিষ্কারক পিতৃদেব সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েন, তা হলে তো শৈশব জন্মানোরই সুযোগ পেল না, তাই না? কেবল কঠোর অনুশীলনের রুটিন নয়, প্রতিভার মাসুল আরও নানা ভাবে দিতে হত ওই শিশুকে। সে ট্রাম্পেটের আওয়াজে ভয় পেত। স্বাভাবিক ভয়। কিন্তু এই স্বভাব তো তার সংগীতচর্চায় ক্ষতি করবে। তাই লিয়োপোল্ড মোৎসার্ট এক দিন হঠাৎ শিশুর কানের একেবারে কাছে প্রবল নিনাদে ট্রাম্পেট বাজিয়ে দিয়েছিলেন। ভয় কেটেছিল হয়তো, কিন্তু শিশুমনের ক্ষয়ক্ষতি?
বিপুল ক্ষতি হয়েছিল শরীর এবং মন, দুইয়েরই। ছত্রিশ বছরের জীবনে আমাডিউস প্রায় কখনওই পুরোপুরি সুস্থ থাকেননি, তার পিছনে ছোটবেলার ওই অমানুষিক রুটিনের দায় এড়ানোর কোনও উপায় নেই। বিশেষ করে, সে কালের ইয়োরোপে ঘোড়ার গাড়িতে শহরে শহরে ঘুরে বেড়ানোর ক্লান্তি, শৈত্য, যন্ত্রণা, একটা ছয়, সাত, আট বছরের বালকের অসহনীয় নয়?
আর মন? সারা জীবন মনে মনে এক শিশুই থেকে গিয়েছিলেন আমাডিউস, কঠোর কঠিন বাস্তবের মোকাবিলায় ক্ষণে ক্ষণে পর্যুদস্ত হয়েছেন তিনি, আমৃত্যু।
মোৎসার্টের প্রতিভা সব অত্যাচার জয় করেছে। মূল্য দিতে হয়েছে মোৎসার্টকে। আশৈশব। |
চলো নিয়ম মতে? শিশু বলল, ‘না’ |
মোৎসার্টের সঙ্গে আশ্চর্য মিল তাঁর। লুডউইগ ভ্যান বেঠোফেন-এর (১৭৭০ - ১৮২৭) কথা বলছি। লুডউইগ-এর বাবা জোহানও ছিলেন আর্চবিশপের দরবারে অন্যতম বাদক। এখনকার জার্মানির বন শহরে। শিশুপুত্রকে বড় মাপের শিল্পী তৈরি করবেন, এটাই তাঁরও স্বপ্ন। না, কেবল বড় শিল্পী নয়, মোৎসার্টের মতো বড়। সল্জবুর্গের বিস্ময়বালকের কথা তখন গোটা ইয়োরোপে ছড়িয়ে পড়েছে, আর বন তো ঘরের কাছেই। অতএব পুত্রের জ্ঞান হতে না হতেই শুরু হল তার সংগীত শিক্ষার আসর। এবং হতাশ করল না সেই শিশু। সব ব্যাপারে অন্যমনস্ক, অগোছালো, কিন্তু সংগীত তার প্রাণ। সাত বছর বয়েসে স্কুলে পাঠানো হল। নিতান্ত অমনোযোগী, অনিচ্ছুক। বছর তিন চার পরে স্কুল ছেড়েই দিল ছেলে। ইতিমধ্যে ১৭৭৮ সালে প্রথম পাবলিক কনসার্ট দিল লুডউইগ ‘ছ’বছরের শিশুর বাজনা’ বলে প্রচার করা হল। শিল্পীর বয়েস তখন আসলে আট, কিন্তু মোৎসার্ট ছ’বছরেই তাঁর প্রথম পাবলিক কনসার্ট দিয়েছিলেন, আর জোহান ভন বেঠোফেন দেখাতে চাইছিলেন, তাঁর পুত্র মোৎসার্টের সমান!
কিন্তু স্বভাব মানে স্ব-ভাব। আর, লুডউইগ ভ্যান
বেঠোফেন বড় বেশি নিজের মতো। সংগীত তাঁর ধ্যানজ্ঞান, কিন্তু সেই সংগীত সম্পর্কে অন্য কারও নির্দেশ তিনি মানতে রাজি নন। একেবারে শৈশব থেকেই তিনি নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে অতিমাত্রায় নিশ্চিত। কম্পোজিশন তৈরির নানা নিয়ম প্রচলিত ছিল তখন, কোন স্বরের সঙ্গে কোন স্বর লাগানো যায়, কোনটি যায় না, সে বিষয়ে বাঁধা গত ছিল। বেঠোফেন সে সব মানবেন না, তিনি ‘নিষিদ্ধ’ মিলন ঘটিয়ে দিলেন। বড় বড় বিশেষজ্ঞরা বললেন, এ হয় না, এমনটা ব্যাকরণসম্মত নয়, স্বীকৃত নয়। তরুণ, কার্যত কিশোর বেঠোফেন বললেন হয়, আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি।
এটাই বেঠোফেন। সারা জীবন তিনি নিজের মতো থেকেছেন। মোৎসার্ট নিজের সৃষ্টি নিয়ে কখনও আপস করেননি, কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তিনি ব্যক্তি হিসেবে বড়মানুষদের কাছে নিচু হতে পারতেন, হয়েছেনও। বেঠোফেন পারেননি। তাঁকে তাঁর শর্তে গ্রহণ করতে হবে, সমান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, এটাই তাঁর প্রথম শর্ত। আশৈশব। |
বয়েস সাত, কঠিন অঙ্ক, মুহূর্তে সমাধান |
গল্পটা অনেকেই জানে। বা জানে না। গল্প নয়, সত্যি। সেই যে অঙ্কের টিচার প্রাইমারি ক্লাসে ঢুকলেন, আর ছাত্রদের একটা অঙ্ক কষতে দিলেন। কঠিন নয় প্রশ্ন। যোগফল নির্ণয়। তবে ঝামেলার বটে।
১+২+৩+৪+৫+...+৯৬+৯৭+৯৮+৯৯+১০০=? যোগ করো একের পর এক সংখ্যা, সমানে মনে রাখো সমষ্টি, চলো
এগিয়ে। কোনও এক ধাপে ভুল হলেই সব গোলমাল।
নাহ্, তা হল না একটি ছেলের বেলায়। হল না, কারণ ক্লাসের সব বাচ্চা যে-ভাবে কষতে গেল অঙ্কটা, ও হাঁটল না সে পথে। হাঁটল না, কারণ আর সবাই যে-ভাবে দেখল প্রবলেমটাকে, ও সে ভাবে দেখল না মোটেই। ১+২+৩+৪+...+৯৭+৯৮+৯৯+১০০। কে বলেছে উত্তর পেতে সমানে করে যেতে হবে যোগ? সমষ্টি তো মিলতে পারে অন্য পথেও। আর, সে পথটা যে অনেক সুন্দর। এবং মসৃণ। কী রকম? কেন, ১+১০০=১০১; ২+৯৯=১০১; ৩+৯৮=১০১; ৪+৯৭=১০১। এ রকম জোড়ায় জোড়ায় যে আলাদা করা যায় সংখ্যাগুলোকে। প্রত্যেক জোড়ার সমষ্টি ১০১। মোট জোড়া ৫০টি। তা হলে ব্যস। ১+২+৩+৪+...+৯৭+৯৮+৯৯+১০০=১০১×৫০=৫০৫০। যে তির্যক দৃষ্টিতে প্রবলেমটার দিকে তাকাল ছেলেটি, তার পোশাকি নাম আজকের দুনিয়ায় ‘আউট অব দ্য বক্স থিঙ্কিং’। প্রতিযোগিতা-জর্জর এই যুগে যা নাকি সাফল্যের মূল মন্ত্র। তবে, শুধু সে কারণে তাকে সেলাম জানানো উচিত নয়। সত্যি ঘটনার এই উদাহরণ থেকে বরং যে-শিক্ষা মেলে, তা হল জিনিয়াস ৯৯% পরিশ্রম আর ১% প্রেরণা নয়, জিনিয়াসের সবচেয়ে বড় পুঁজি তার দৃষ্টিক্ষমতা। কোনও জিনিস হরিপদ কেরানি যে-ভাবে দেখে, আকবর বাদশা সে ভাবে দেখেন না।
দৃষ্টিক্ষমতার মাহাত্ম্য বোঝাতে যে সত্যি ঘটনার উদাহরণ টানা হল, তা দ্বিগুণ বিস্ময়কর এ কারণে যে, এর নায়কের বয়েস মাত্র সাত বছর। হ্যাঁ, কার্ল ফ্রিডরিখ গাউস তাঁর শৈশবেই ক্লাসে গণিতের শিক্ষককে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন নিজের প্রতিভায়। শিক্ষক চাইলেন গণনার ভারে ছাত্রদের জর্জরিত করতে। তারা সবাই খেল হিমশিম। ব্যতিক্রম এক শিশু। মুহূর্তের মধ্যে সে দিল সমাধান। দেবেই। প্রত্যূষ যে মধ্যাহ্নের দূত। যে জার্মান গণিতজ্ঞ পরে আশ্চর্য সাফল্যের নিদর্শন উপহার দেবেন সংখ্যাতত্ত্ব, রাশিবিজ্ঞান, বীজগণিত, জ্যামিতি, ভূ-পদার্থবিদ্যা, তড়িৎবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, এমনকি আলো গবেষণাতেও এত কীর্তির জন্য যাকে বলা হয় ‘গণিতের রাজপুত্র’ তার প্রতিভার দ্যূতি তো বিচ্ছুরিত হবে শৈশবেই। |
শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করি যদি |
গণিতজ্ঞেরা, গডফ্রে হ্যারল্ড বলেছিলেন, রচনা করেন ছন্দ। সুতরাং, তাদের সঙ্গে ভেদ নেই কবি বা শিল্পীর। তবে, হার্ডি এও বলেছিলেন যে, ছন্দ সৃজনের উপকরণে কবি বা শিল্পীর সঙ্গে বিস্তর ফারাক গণিতজ্ঞের। শব্দ কিংবা
রং নয়, গণিতজ্ঞ ছন্দ রচনা করেন ধারণা দিয়ে। চাক্ষুষ উপলব্ধি নয়, অনুমান এবং কল্পনা তার ব্রহ্মাস্ত্র।
প্রখর চিন্তায় গণিতের নতুন নতুন ভুবন আবিষ্কারের ক্ষমতায় প্রাতঃস্মরণীয় শ্রীনিবাস রামানুজন প্রতিভার চমক দেখিয়েছিলেন বাল্যেই। প্রাইমারি পরীক্ষায় জেলায় প্রথম এই ছাত্রটি হাই স্কুলে গণিতের শিক্ষককে চমকে দিয়েছিলেন চিন্তার শক্তিতে। শিক্ষক ক্লাসে আলোচনা করছিলেন গণিতের এক আটপৌরে সত্য। কোনও সংখ্যাকে তা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ১। এ সব ক্ষেত্রে যে উদাহরণ চালু, তাও দিয়েছিলেন শিক্ষক। তিনটে আপেল তিনজনকে ভাগ করে দিলে প্রত্যেকে পাবে একটা করে। শুনে বালক রামানুজনের প্রশ্ন: তা হলে, শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলেও কি ফল হবে ১? কাউকে কোনও আপেল না দিলেও কি প্রত্যেকে পাবে একটা করে?
২০১২ সালে রামানুজনের জন্মের ১২৫ বর্ষপূর্তি। এখনও পণ্ডিতরা আতিপাতি করে খুঁজছেন তাঁর খেরোর খাতাগুলি। যাতে একের পর এক ফর্মুলা কিংবা প্রমাণের ছড়াছড়ি। যাদের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কী প্রক্রিয়ায় ও সব গণনা করে বের করতেন রামানুজন?
গণিতজ্ঞ মার্ক কাৎখ্ বলেছিলেন, জিনিয়াস দু’জাতের। প্রথম জাতের জিনিয়াসের সাফল্যের ব্যাখ্যা: অতিরিক্ত বুদ্ধি, বেশি পরিশ্রম। দ্বিতীয় জাতের জিনিয়াসের ব্যাখ্যা নেই। রামানুজন দ্বিতীয় জাতের জিনিয়াস। |
বন্ধু হবে? ভাল দাবা খেলতে পারো তো? |
নিউ ইয়র্ক। ১৭ অক্টোবর ১৯৫৬। মুখোমুখি দুই দাবাড়ু। ডোনাল্ড বায়ার্ন এবং রবার্ট ফিশার। ডোনাল্ডের বয়স ছাব্বিশ, দাবার দুনিয়ায় নামজাদা, তিন বছর আগে ইউ এস ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ফিশার তেরো বছরের নবীন কিশোর। এগারো নম্বর চালে একটা ছোট্ট ভুল করে ফেললেন ডোনাল্ড। এবং আর ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন না, আটত্রিশ নম্বর চালে মাত হয়ে গেলেন। মাত হওয়াটা বড় কথা নয়, তেরো বছরের প্রতিদ্বন্দ্বী যে খেলাটা খেলল, তা প্রায় অবিশ্বাস্য। দাবার ইতিহাসে সেটি ‘শতাব্দীর খেলা’ আখ্যা পেয়েছে।
এর দু’বছর পরেই রবার্ট গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন, পনেরো বছরে গ্র্যান্ডমাস্টার সেই প্রথম। এবং দেখতে দেখতে কিংবদন্তি ১৯৭২ সালে রুশ প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস স্প্যাসার্ককে হারিয়ে কেবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ নয়, ঠান্ডা লড়াইটাই যেন জিতে নিলেন ববি ফিশার (১৯৪৩-২০০৮)।
ছ’বছর বয়েসে দাবায় হাতেখড়ি। কিছু দিনের মধ্যেই দেখা গেল, আর কিছুতেই ছেলের মন নেই, স্কুলের পড়া মানে ‘স্রেফ সময় নষ্ট’, বন্ধু হওয়ার এক এবং একমাত্র শর্ত ভাল দাবা খেলা জানতে হবে। ভয়ানক রকমের অসামাজিক এক শিশু। শেষ দিন অবধি ও রকমই ছিলেন মানুষটি। |
|
|
|
|
|