নামে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। কিন্তু আর পাঁচটা মেডিক্যাল কলেজের মতো পদ্ধতি মেনে কাজ হয় না। ফলে পরিষেবার উন্নয়ন ঘটানো যায়নি। পরিষেবার উন্নয়ন ঘটাতে অন্য মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মতোই মেদিনীপুরেও পরিকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
কী ভাবে সম্ভব সেই ভোলবদল? ওই একাংশ চিকিৎসকের বক্তব্য, সপ্তাহে ৬ দিন না হোক, কমপক্ষে ৫ দিন অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে সব চিকিৎসককে। সপ্তাহে এক দিন কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের সুপারকে নিয়ম করে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। যেখানে বিভাগের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত প্রয়াসের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সপ্তাহে ক’জন রোগীর অস্ত্রোপচার হল, ক’জন ‘সিরিয়স’ রোগী সুচিকিৎসায় সেরে উঠলেন, ক’জনকেই বা ‘রেফার’ করা হল এবং কেন, কোন কোন রোগীর অস্ত্রোপচার করা যায়নি ও কেন---এ সব নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হলে সমাধান সূত্র মিলবে, পরিষেবার মনোন্নয়ন হবে বলেই আশা ডাক্তারদের একাংশের। পাশাপাশি, তাঁদের বক্তব্য, বিভাগীয় প্রধানদেরও বিভাগের সব চিকিৎসককে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করতে হবে। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড বসানো দরকার, সেটা নিয়ে যেমন আলোচনা প্রয়োজন তেমনই বিভাগের খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধানও ওই আলোচনায় হতে পারে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
‘স্ক্রুটিনি আউটডোর’-এর প্রস্তাবও রয়েছে। যেখানে মেডিক্যাল অফিসার ও হাউসস্টাফরা রোগী দেখে ঠিক করবেন কোন রোগীকে কোন চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হবে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ জ্বর বা মাথাব্যথা নিয়েও অনেকে হাসপাতালে আসেন। তেমন রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠানো অপ্রয়োজনীয়। সাধারণ রোগী দেখতেই বিশেষজ্ঞের সময় বয়ে গেলে ‘সিরিয়স’ রোগীর চিকিৎসাই প্রকারান্তরে উপেক্ষিত থেকে যায়। সে কারণেই প্রাথমিক একটা নির্বাচন (স্ক্রুটিনি) প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ।
চব্বিশ ঘণ্টা প্যাথলজি চালু রাখা, জরুরি-বিভাগেও শয্যার দাবিও রয়েছে। যেখানে সব বিভাগের চিকিৎসকেদেরই ‘রাউন্ড’ দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন বলেও অনেকেরই অভিমত। জরুরি-বিভাগে সব বিভাগের চিকিৎসক এলে কোন রোগীকে কোন বিভাগে পাঠানো হবেতা ঠিক করতে কালক্ষেপও হবে না। বিভাগ থেকে বিভাগে ঘোরাঘুরির হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন রোগীরাও।
সেই সঙ্গে ‘সুপার স্পেশালিস্ট’ ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর উপরেও জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। মেদিনীপুর মেডিক্যালে এই মুহূর্তে এ রকম চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দু’জন। এক জন পেডিয়াট্রিক সার্জেন সুকুমার মাইতি। অন্য জন জেনারেল মেডিসিনের সলিলকুমার পাল। সুকুমারবাবুকে এখন আবার অধ্যক্ষের বাড়তি দায়িত্বও সামলাতে হয়। সেই চাপ নিতে গিয়ে চিকিৎসায় আগের মতো সময় দিতে পারেন তিনি। অন্য দিকে সলিলবাবু আবার আড়াই-তিন দিনের বেশি থাকেন না। মেডিক্যাল কলেজ হয়েও এখানে তাই রোগীদের সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা মেলার সুযোগ কম। এই দু’জনকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি অন্তত এক জন নিউরো সার্জেন ও এক জন কার্ডিয়োলজিস্ট প্রয়োজন। আধুনিক যন্ত্রপাতি ফেলে না রেখে কাজে লাগানোর দাবিও উঠছে।
|