মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যু বেড়েই চলেছে। শুক্রবার আরও তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। এই নিয়ে গত দু’দিনে সদর হাসপাতালে ১৩ টি শিশুর মৃত্যু হল। সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক জেলার সমস্ত চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করে দিয়েছেন। ছুটিতে থাকা সমস্ত চিকিৎসককে দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার নিদের্শ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে মা ও শিশু ছাড়া বাইরের লোকজন ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মালদহ সদর হাসপাতালের সুপারকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নিদের্শ পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তার মোকাবিলার জন্য সাময়িক ভাবে জেলার সমস্ত চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার যে সমস্ত চিকিৎসক ছুটিতে রয়েছেন তাদের দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এ ছাড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শিশুদের আরও ভাল চিকিৎসা দিতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজন বিশেষজ্ঞ, কয়েকদিন আগে সেচ্ছাবসর নিয়ে বসে যাওয়া এক শিশু বিশেষজ্ঞ এবং মিল্কি ব্লক হাসপাতাল থেকে এক চিকিৎসককে তুলে এনে শিশু বিভাগের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মালদহ সদর হাসপাতালে ০-২৮ দিনের শিশুদের রাখার জন্য আলাদা বিভাগ খুলে সেখানে মা ও শিশু ছাড়া বাইরের কারও ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যেভাবে শিশু বিভাগের মধ্যেই মা ও শিশুর সঙ্গে পরিবারের লোকেরা একই শয্যায় বসে থাকছেন তাতে শিশু আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন কর্তারা। শুক্রবার সকালে বৈষ্ণবনগরের মুজিবুল ও তাঁর স্ত্রী হাসনারা বিবি দেড় মাসের শিশুপুত্র সারিকুলকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। শিশুটির শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। সকাল ৯টায় শিশুটির মৃত্যু হয়। সকাল ৯টায় হবিবপুরের পার্বতীডাঙার পরেশ সাহানি ২৮ দিন বয়সী শিশুপুত্রকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করার দুই ঘন্টার মধ্যে মারা যায়। ওই একই সময়ে লেবার রুমেই ঝাড়খন্ডের রাজমহলের জয়ন্তী মন্ডল শিশুপুত্রের জন্ম দেন। তার পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়। সদর হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “সকালে তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তিনটি শিশুই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে মারা গিয়েছে। চিকিৎসকদের কিছুই করার নেই। গত দুই দিনে সদর হাসপাতালে যে সমস্ত শিশুর মৃত্যু হয়, একটি ক্ষেত্রেও কারও গাফিলতির প্রমাণ মেলেনি। যে শিশু বিশেষজ্ঞ ছুটিতে ছিলেন তাঁকে অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করে বসে থাকা শিশু বিশেষজ্ঞকেও বুঝিয়ে কাজে যোগ দেওয়ানো হচ্ছে। শিশু বিভাগে শিশু চিকিৎসকদের যে অভাব ছিল আপাতত তা কেটে গিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিশু মৃত্যুর ঘটনা কমে যাবে। পর পর ১৩ টি শিশু মারা যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে সদর হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শিশু বিভাগে ঢোকার মুখে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী। মা ও শিশু ছাড়া কাউকে ওই বিভাগে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, চিকিৎসক থেকে নার্স জুতো খুলে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পড়ে শিশু বিভাগে ঢুকছেন। শিশু বিভাগের ভর্তি শিশুর পরিবারের লোকেরা ওয়ার্ডের ভিতরেই যথেচ্ছভাবে খাওয়া দাওয়া করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শিশু বিভাগের ভিতরে সমস্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকী, শিশুর মাকেও ওয়ার্ডের বাইরে এসে খাবার খেতে হচ্ছে। |