দাম মিলছে না, শঙ্কায় চাষিরা
তিন বিঘা জমির ধান পেকেছে কয়েক সপ্তাহ হল। কাটানোর মজুর পাচ্ছেন না। নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামেও খোঁজ করেছেন। বিঘা প্রতি সাতশো টাকা মজুরি দিতে চেয়েছেন। তবু কেউ রাজি হচ্ছে না। খেতের ধান কেমন করে ঘরে তুলবেন এখন সেই চিন্তায় দিশেহারা ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা গ্রামের সিপিএম নেতা শিরেন রায়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে। আর নয়। জমি ফেলে রাখব তবু ভাল। চাষ-আবাদ করব না।” শুধু শিরেনবাবু নয়। ময়নাগুড়ির ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে একই ছবি। একদিকে ফসলের দাম মিলছে না। সার, কীটনাশক, বীজের দাম বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে খেতের কাজে নতুন প্রজন্মের মন টানছে না। দিনমজুরের আকাল। ওই দুইয়ের ফাঁদে পড়ে ব্লকের কৃষি ব্যবস্থাই যেন সংকটের মুখে। গ্রামের ছেলেরা বেশি রোজগারের আশায় দল বেধে পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। অনেকে জমির কাজ ছেড়ে শহরে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। ফলে বাড়তি মজুরি দিয়েও লোক মিলছে না। বিপাকে চাষিরা। আলু চাষ শুরু করবেন কিনা সেটাও তাঁরা ঠিক করে উঠতে পারছেন না। বাজারের পরিস্থিতি দেখে অনেকে চাষ আবাদের ভাবনা লাটে তুলে জমি ফেলে রেখে অন্য কাজের খোঁজ শুরু করেছেন। যেমন, বার্নিশ গ্রামের দেবেন দাস। তিনি ঠিক করেছিলেন চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন। সেই মতো প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু বাজারের খোঁজ নিতেই মাথা ঘুরে যায়। চাষ করা জমিতে হাত লাগাতে আর সাহস হয়নি তাঁর। দেবেনবাবু বলেন, “একে গ্রামে মজুর মিলছে না। তার উপরে বাইরে থেকে মজুর এনে চাষ করাতে যে খরচ হয় ফসল বিক্রি করে সেটা উঠছে না। এর চেয়ে ঢের ভাল অন্য কাজ করা।” দোমহনি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি রতন রায় পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে মাধবডাঙার শিরেনবাবুর মতোই সমস্যায় পড়েছেন। তিনি জানান, বিঘা প্রতি জমি থেকে প্রায় ১২ মন ধান মিলবে। সার, বীজ, কীটনাশক, দিনমজুর মিলিয়ে যে খরচ হয়েছে তার অর্ধেকও ধান বিক্রি করে পাবেন না। কারণ, ধানের দাম নেমে দাঁড়িয়েছে ২৭০ টাকা মন। মজুরের সমস্যা নিয়ে চাষিদের মতো উদ্বিগ্ন কৃষিকর্তারাও। ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, “মজুরের অভাব যে বেড়েছে সেটা বিভিন্ন রিপোর্টে ধরা পড়ছে। ওই পরিস্থিতিতে এ বার আলু চাষ অনেকটাই কমবে। সমস্যার মোকাবিলার জন্য প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষিকে বেশি লাভজনক করার চেষ্টা চলছে।” গত বছর ময়নাগুড়িতে চার হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। এ বার অর্ধেক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কৃষি কর্তারা জানান, সবাই ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়নি। বাড়িতে যারা আছে তাঁদের বেশিরভাগ জমিতে কাজ করতে চায় না। যে মজুরি মিলছে তা দিয়ে সংসার চলে না। কিন্তু ওই সমস্যার সমাধান তাঁদের অজানা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.