মুম্বইয়ের সংস্থার হাতে শিলিগুড়ির কয়েকশো বাসিন্দার প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তও। পুরসভার কাজে সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়েছিলেন তিনি। শহরে ফিরেই সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেছেন। শুক্রবার মেয়র বলেন, “যা শুনছি, অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অবসরপ্রাপ্তদেরও প্রতারণা করা হয়েছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করব। এই প্রতারণার ঘটনায় জড়িতরা যাতে কোনও ভাবেই ছাড়া না-পান সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হব।” কয়েকদিন আগে শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মাও প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেন। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই ধরনের একটি সচেতনতামূলক সভার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। শিলিগুড়ির বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামার কথা জানিয়েছে। শিলিগুড়িতে ফিরে মেয়রও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করায় প্রতারিতরা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মুম্বইয়ের ওই সংস্থাটি শিলিগুড়িতে কয়েকজন এজেন্ট নিয়োগ করে এই ব্যবসায় নামে। প্রতারণার ঘটনার পরে অনেকেই গা ঢাকা দেয়। যেভাবে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে তাতে কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরের হস্তক্ষেপ এবং নজরদারি প্রয়োজন। মেয়র সেই কাজে উদ্যোগী হলে সমস্ত অভিযুক্তকেই ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। প্রতারণার ঘটনাটি যে বড় মাপের, সে কথা প্রথম থেকেই দাবি করছে পুলিশও। গত ২১ অক্টোবর শিলিগুড়ি পুলিশ মুম্বইয়ের ওই প্রতারণা সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশা জীবন সাহেবরাম চৌধুরী, জীবন বিমা নিগমের কর্মী রাজীব ভদ্র, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী রণবীর দাস এবং দেবব্রত পালকে গ্রেফতার করে জেলা করার পরে ওই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। কী ভাবে এবং কত লক্ষ টাকা অভিযুক্তরা আত্মসাত করেছে তা খুঁজে বার করতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ দফায় দফায় জেরা করছে। পুলিশের দাবি, জেরায় তাঁরা রণবীর দাসের স্ত্রী একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন। ওই অ্যাকাউন্টে মোট ৩৯ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীর স্ত্রী কী ভাবে এত টাকা পেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা। কোথায়, কাকে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এর আগে রণবীরের অন্য একটি অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানা যায়, সেখানে একদিনে জমা পড়েছিল ১৫ লক্ষ টাকা। আর এক অভিযুক্ত রাজীব ভদ্রের একটি জমির দলিলও পুলিশ খুঁজে বার করেছে। ওই জমিটি শিলিগুড়ির শিবমন্দির এলাকার। ৩ কাঠার ওই জমিটি গত বছরের অক্টোবর মাসে কিনেছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। ওই জমিটি চলতি বছর তিনি বিক্রির চেষ্টাও করেছিলেন। গোঁসাইপুরের এক স্কুল শিক্ষকের কাছে বায়না বাবদ ৬০ হাজার টাকাও নিয়েছিলেন। পুলিশ এই দিন চার জন অভিযুক্তকেই শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করেছিল। বিচারক সন্তোষ পাঠক রাজীব ভদ্রকে পুলিশ হেফাজত ও অন্যদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। |