এ যেন শাঁখের করাত!
বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে মাঝপথে তা চুরি হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও বিল মেটাবেন না এক শ্রেণির গ্রাহক। আবার এ সবের সমাধান না করে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎও দিয়ে যেতে হবে। কারণ, প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বণ্টন কোম্পানির উপরে। অথচ গ্রামাঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো হচ্ছেই না, উল্টে প্রতি মাসে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আর এই টানাপোড়েনে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এখন দিশেহারা অবস্থা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার সংস্থার কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, বিধায়ক ও সাংসদদেরও সহযোগিতা চাইছেন কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছা না থাকলে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এই দশা কাটবে না বলে মনে করেছেন বিদ্যুৎ দফতরের অফিসাররা।
গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ চুরি কেন তা বন্ধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি?
কোম্পানির এক কর্তা বলছেন, চুরি বন্ধ করার সব থেকে কার্যকর উপায় হল বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বাধায় সেটাই করা যাচ্ছে না। সংযোগ কাটতে গেলে আক্রান্ত হচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা। সব ক্ষেত্রে প্রশাসনের সাহায্যও মিলছে না। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিলেও ঘুর পথে পরিবারের অন্য কারও নামে ফের সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে বণ্টন কোম্পানির কর্মীদের একাংশের যোগসাজশ থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ।
এর আগেও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিদ্যুৎ কর্তারা। গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়াতে তাঁদেরও সঙ্গে নিয়ে প্রচারে নামার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। কারণ পঞ্চায়েত সদস্য-বিধায়ক-সাংসদদের কাছে বিদ্যুৎ সংস্থার চেয়ে স্থানীয় মানুষের ‘স্বার্থই’ আগে। তাঁরাই ভোটার। বণ্টন সংস্থার প্রচারে তাই জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ দেখা যায়নি। কিন্তু নিরুপায় হয়ে ফের তাঁদেরই দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বণ্টন সংস্থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পে ৯০ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দেয় কেন্দ্র। বাকি অর্থ স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে রাজ্যগুলির কাছে আসে ‘রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন’ থেকে। কিন্তু সারা বছর ভর্তুকিতে বিদ্যুতের জোগান দিয়ে যেতে হয় বণ্টন কোম্পানিকেই। প্রতিটি রাজ্যেই গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৭% লোকসান হতে পারে বলে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ধরে নিয়েছে। চুরি-সহ অন্যান্য কারণে রাজ্যে বণ্টন কোম্পানির সেই ক্ষতি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে গড়ে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশে। কোনও কোনও এলাকায় তা ৬০ শতাংশেরও বেশি। নতুন সরকারও গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজে আরও গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বণ্টন কোম্পানিকে।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ করে বণ্টন কোম্পানির এলাকা যত বাড়ছে, রাজস্ব ঘাটতিও ততই বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুৎ চুরিও। এ সবের জন্য গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সংস্থার যে আয় হওয়ার কথা, কোনও কোনও জেলা থেকে তার অর্ধেক টাকাও ঘরে আসছে না। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বার্ষিক লোকসান ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তার জন্য গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি এক শ্রেণির গ্রাহকদের বেপরোয়া মনোভাবকেও দায়ী করেছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীন রিপোর্টটি এ বার রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে সংস্থার ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তা জানতে চাইবে বণ্টন কোম্পানি।
|
কোথায় কেমন ক্ষতি |
অঞ্চল |
ক্ষতির পরিমাণ* |
লাভপুর (বীরভূম) |
৭৫ |
মুরারই (বীরভূম) |
৭৭ |
সারেঙ্গা (বাঁকুড়া) |
৭৩ |
আমতা (হাওড়া) |
৬৫ |
মেমারি (বর্ধমান) |
৬৬ |
ধাত্রীগ্রাম (বর্ধমান) |
৬৫ |
* শতাংশে |
|