প্রশাসনকে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সে অভিযোগ প্রশাসনের কোন স্তরে পৌঁছল বা আদৌ পৌঁছল কি না--জানার উপায় ছিল না। এই সমস্যা মেটাতেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এ বার চালু করল ‘সমাধান’। একটি সরকারি ‘হেল্পলাইন’। শুক্রবার পুরুলিয়া সদরে ‘সমাধান’ পরিষেবার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “এটা খুবই ভাল ব্যবস্থা। সবাইকে জানিয়ে দিন।” পাশে থাকা মুখ্যসচিব সমর ঘোষের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “পুলিশেরও এই ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়। ভাল হয়, থানায় থানায় থাকলে।” এ দিনই বলরামপুরের সভাতে গিয়ে জেলার সাধারণ মানুষের ‘মুশকিল-আসান’ হিসেবে ‘সমাধান পরিষেবা’ চালু করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী আছে ‘সমাধান’-এ? উদ্বোধন করার আগে এই পরিষেবা সম্পর্কে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহের কাছে জানতে চেয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসকের ব্যাখ্যা, “কেউ রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কার্ড পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছেন না, তা-ও জানতে পারছেন না। তখন তিনি ‘সমাধান’-এ ফোন (৯৪৩৪০৩৬৬৬৬) করলে তা লিপিবদ্ধ হবে। অভিযোগকারীকে সঙ্গে সঙ্গে এসএমএস করে অভিযোগের একটি নম্বর দেওয়া হবে (যেমন টেলিফোন নিয়ে অভিযোগ জানালে একটি ‘ডকেট’ নম্বর দেওয়া হয়) এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদেরও এসএমএস করে অভিযোগটি জানানো হবে। ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হবে।” জেলাশাসক নিজের মোবাইল থেকে ‘সমাধান’-এর নম্বরে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে অনুরোধ করেন। ফোন ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রশাসনের এই উদ্যোগ খুব ভাল। শুভেচ্ছা জানাই।”
কী কারণে এই উদ্যোগ? জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলায় প্রশাসনের তরফে অভিযোগ গ্রহণকেন্দ্র থাকলেও সেখানে শুধু অভিযোগ গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু কার্যত সেই অভিযোগ কোথায় পৌঁছল, তা জানার ব্যবস্থা ছিল না। অভিযোগের ‘নিষ্পত্তি’ হলেও অভিযোগকারী তাতে সন্তুষ্ট কি না, তা-ও জানার উপায় ছিল না। ফলে, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির কাজের উৎকর্ষ মাপা সম্ভব হচ্ছিল না। তাঁর কথায়, “জেলার আমজনতার আরও কাছে পৌঁছতেই এই ব্যবস্থা চালু করা হল।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘ইউনিসেফ’ ও ‘জেলা সূচনা বিজ্ঞানকেন্দ্র’ যৌথ ভাবে এই পরিষেবার পরিকাঠামো তৈরি করেছে। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা জেলা সূচনা বিজ্ঞানকেন্দ্রের কর্মী সিদ্ধার্থ সেন ও ভাস্কর রায় জানান, মোবাইল বা ল্যান্ড ফোন থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযোগকারী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা আধিকারিক ও সংশ্লিষ্ট বিডিও-কে এসএমএস করে ‘ডকেট’ নম্বর-সহ তথ্য জানানো হবে। অভিযোগকারীর মোবাইল না থাকলে তাঁর কাছ থেকে তিনি খবর পেতে পারেন এমন কোনও মোবাইল বা ল্যান্ডলাইনের নম্বর সংগ্রহ করে নেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা না গেলে অভিযোগটির ‘অবস্থা’ অভিযোগকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। কাজটি আটকে থাকলে, কেন তা আটকে রয়েছে তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে। সমস্যার সমাধান হলে অভিযোগকারী তাতে সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাওয়া হবে। তিনি সন্তুষ্ট না হলে ফের তা নতুন অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। অভিযোগকারীর সঙ্গে ‘সমাধান’-এর প্রতিনিধির এ সংক্রান্ত কথোপকথন www.samadhan.net.in এই ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। |