|
সঙ্গীত সমালোচনা... |
|
দুই বাংলার আবেগ
বারীন মজুমদার |
দুই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে নানা অনুষ্ঠান, আলোচনা ও সভা সমাবেশ হয় প্রায়ই। কিন্তু দুই বাংলার লোকগান ও কবিতা নিয়ে এক অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ভারত বাংলাদেশ সংস্কৃতি সংসদ ‘মিতালী’। সম্প্রতি শিশির মঞ্চে ‘পুব-পশ্চিম’ শিরোনামে। অনুষ্ঠানের মূল শিল্পী ছিলেন আবৃত্তিতে শোভনসুন্দর বসু ও সঙ্গে তাঁর আবৃত্তির দল ‘বৃষ্টি’। লোকগানে মেয়েদের দল ‘মাদল’। সমবেত গান ‘বসন্তে কি শুধু ফোটা ফুলের মেলা’ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দুই বাংলার কবিতায় মাটির সোঁদা গন্ধ, দেশপ্রেম ও পেলে আসা পিতৃভূমির ব্যাকুলতায়, ব্যঞ্জনায় রচিত হয়ে গেল অনুষ্ঠানের মূল সুর। এবং তা শোভনসুন্দরের কবিতার মধ্য দিয়েই। কবিতার আবৃত্তিগুলির সঙ্গে লাইভ মিউজিক ও রিদমের ব্যবহার যুক্ত করল এক অন্য মাত্রা।
অচিন্তকুমার সেনগুপ্তের ‘পুব-পশ্চিম’, কবীর সুমনের ‘বাংলাদেশ’ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের নানা ছন্দে তালে নিবদ্ধ কবিতাগুলির আবৃত্তিতে শোভন যে মর্মস্পর্শী ছবি আঁকলেন তাতে এক অজানা আবেগ স্পর্শ করে। বিশেষ করে তাঁর ‘হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন ও উপস্থাপনার গুণে অনবদ্য। ‘বৃষ্টির’ সঙ্গীত পরিচালক ও যন্ত্রশিল্পী রাজা সেনগুপ্তও এই অনুষ্ঠানে ধন্যবাদার্হ্য হয়ে রইলেন।
শেষে পরিবেশিত হয় মেয়েদের লোকগানের দল ‘মাদল’ এর অনুষ্ঠান। ‘আহা আজি এ বসন্তে’ রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়াও বেশ কিছু সুন্দর লোকগান তাঁরা পরিবেশন করেন। বাউল গান, ভাদু পরবের গান, মনসা ভাসানের গান, লালন ফকিরের গান ও ভাওয়াইয়া গানগুলিতে ‘মাদল’ অনন্য। এর পর তপন রায় শোনান কয়েকটি লোকগীতি।
|
পরিণত রাগ চিন্তা
আশিস চট্টোপাধ্যায় |
|
রিদ্ম-এর দু’দিনব্যাপী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসেছিল বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। প্রথম দিনে সুজিত সাহার তবলা লহরার একটি সিডি-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন চিত্রাভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় তবলা লহরায়। বাজান সুজিত। প্রথমে তিনতাল পরে ধামার। পরিচ্ছন্ন হাতের বোলের সাবলীল আদায় শ্রোতাদের আনন্দ দেয়। হারমোনিয়ামে হিরণ্ময় মিত্র সুনাম রাখেন। পরবর্তী শিল্পী সুগত মার্জিত সুরেলা কণ্ঠে পরিণত রাগ চিন্তা নিয়ে দুর্গা রাগের রসোত্তীর্ণ বিশ্লেষণ করেন। তাঁর শেষের দু’টি নিবেদন বেহাগ ও নন্দকোষে রাগাশ্রয়ী বাংলা গান খেয়ালের মতোই আদরণীয় হয়। হারমোনিয়াম ও তবলায় যথাযোগ্য সঙ্গত করেন হিরণ্ময় ও অরবিন্দ ভট্টাচার্য। নন্দকোষ বাজান সুব্রত রায়চৌধুরীও। তাঁর সেতারে রাগটি প্রাণবন্ত রূপ পায়। সঙ্গে তবলায় ছিলেন সুজিত। দ্বিতীয় সন্ধ্যার প্রথম অনুষ্ঠান রিদ্ম-এর শিল্পীদের সুজিতের পরিচালনায় তাল বিচিত্রা উপভোগ্য উপহার। সরোদের অনুষ্ঠানে ঝিঁঝিটির আলাপ, দু’টি বন্দিশ ও শেষে মিশ্র পিলু পেশ করেন আবির হুসেন। সুরেলা, নান্দনিক বাজনা। সুসঙ্গত করেন সুরজিৎ সাহা। দু’দিনের সমাপ্তি শিল্পী তুষার দত্ত শোনান ইমন খেয়াল। তুষারের সুসংহত সুরেলা বিস্তার, সাবলীল তানকর্তব ও বিচিত্র লয় গঠন নজর কাড়ে। সুজিতের তবলা, গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের হারমোনিয়াম শিল্পীকে সুখকর সাহচর্য দেয়।
|
লোকগানের ভাষা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে আসে উজানিয়া গানের দল। নাজমুলের কণ্ঠে শোনা যায় ‘তোমার আমার মুখের ভাষা বাংলা ভাষা’ গানটি। ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ উচ্চারিত হয় পাপিয়ার কবিতায় ও নাজমুলের গানে। এই গানটির কথা লিখেছেন ও পার বাংলার ফজল-এ-খোদা ও সুর দিয়েছেন আব্দুল জব্বার। উজানিয়ার ‘ও আমার পাশের বাড়ির ভাই’ গানটির সঙ্গে দেখা যায় অনুপমের নৃত্য। বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার ট্র্যাডিশন ফুটে ওঠে নাজমুলের গাওয়া ‘একদিন এই সোনার বাংলায় ছিল গোলায় গোলায় ধান’ এবং তমালির কবিতায়। এই দিন সন্ধ্যায় উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি ও পার বাংলার বিশিষ্ট লোকশিল্পী কিরণচন্দ্র রায়ের গান। শেষ পর্বে শোনা যায় উজানিয়ার নিজের গান।
|
বিবেকানন্দের প্রিয় গান
শতরূপা চক্রবর্তী |
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে রবিচ্ছায়া পরিবেশন করল গীতিআলেখ্য ‘জীবনের ধ্রুবতারা’। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষ এবং স্বামীজির আসন্ন বর্ষের প্রতি সম্মান জানিয়ে রবিচ্ছায়ার এই প্রয়াস প্রশংসনীয়। সমবেত কণ্ঠে ‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি’ দিয়ে শুরু। সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্রের পরিশীলিত কণ্ঠের নিবেদনে ‘মহা সিংহাসনে বসি’ এবং ‘কালী কালী বল রে আজ’ অনুষ্ঠানে এক অন্য মাত্রা যোগ করে। এ দিনের অনুষ্ঠানে শ্রীপর্ণা চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘মরিল মরি’ গানটি অনেক দিন পরে শোনা গেল। সুছন্দা ঘোষের বলিষ্ঠ কণ্ঠে ‘তাহারে আরতি করে’ এক কথায় অনবদ্য। বিশ্বরূপ রুদ্রের কণ্ঠে ‘তোমারি তরে মা’ অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে ভাষ্যপাঠের দায়িত্বে ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। যন্ত্রাণুষঙ্গ পরিচালনার দায়িত্বে অমিতাভ ঘোষের অবদান প্রশংসনীয়।
|
শান্তিনিকেতন ঘরানায়
শিখা বসু |
সম্প্রতি শিশির মঞ্চে বাসবী বাগচি শোনালেন বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত। নির্বাচিত কিছু গানের মধ্যেও তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন প্রকৃতি নির্ভর ব্যাকুলতা। তাঁর কণ্ঠে প্রথম গান ‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল’। সুন্দর তৈরি গলায় সেই গান যেন এক অন্য মাত্রা পায়। এর পর তিনি গাইলেন ‘আমারে যদি জাগালে আজি নাথ’, ‘কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ় মেঘের ছায়া খেলে’। তবে দু’-একটি গানে যান্ত্রিক ত্রুটি শিল্পীর কণ্ঠকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। তবে শ্রোতাদের মনে থাকবে তাঁর গাওয়া শেষ দু’টি গান। ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘আমার দিন ফুরালো’। শিল্পীর মুন্সিয়ানা প্রশংসনীয়।
|
সবাই মিলে খালি গলায় |
অনুষ্ঠান শেষে সল্টলেকের পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের একাংশ সরাসরি উঠে এলেন মঞ্চে। শ্রোতাকুলের অভিনন্দনের লক্ষ্য ছিলেন রবিছন্দম সংস্থার অল্প বয়সী গায়কেরা। তিতাস চক্রবর্তী,স্বাগতা দাস বসাক, আশিস সরকারেরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কখনও মিউজিক ট্র্যাকের সঙ্গে, কখনও একদম খালি গলায় গাইলেন রবীন্দ্রনাথের ২৫টি রঙ্গব্যঙ্গের গান। সরস তথ্য দিয়ে, গানে সঙ্গ দিয়ে উজ্জ্বল হয়ে রইলেন পরিচালক অলক রায়চৌধুরী। |
|
|
ছন্দনীড়ের সুনাম |
সল্টলেকের রবীন্দ্র-ওকাকুরা হলে তৃপ্তি সেন পরিচালিত ছন্দনীড় মঞ্চস্থ করল নাটক ও নাটকের গান। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটকের কৌতূহলোদ্দীপক ইতিহাস, এমনকী প্রকাশকালও। বাল্মীকি প্রতিভা, প্রায়শ্চিত্ত, ডাকঘর, রাজা, রক্তকরবী, চিরকুমার সভা, তাসের দেশ, চণ্ডালিকা ইত্যাদি নাট্যাংশ পর পর পরিবেশিত হল। দেবাশিস রায়ের পরিচালনায় নাট্যাংশগুলি অভিনীত হল এবং সঙ্গে গান। একক গানে অলক রায়চৌধুরী, আবির চট্টোপাধ্যায়, তৃপ্তি সেন, সুছন্দা ঘোষ তাঁদের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। সমবেত গানে উপযুক্ত তালিমের পরিচয় মেলে। অভিনয়ে ছিলেন দেবাশিস রায়, রিংকু রায়, শম্ভু দে, সুস্মিতা সেন ও দিতিপ্রিয়া সরকার। শেষে রেকর্ডে রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠে ‘তবু মনে রেখো’ অনুষ্ঠানটিকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দেয়।
|
বৈচিত্রপূর্ণ মিলন |
সম্প্রতি অন্তরা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সমর সাহার সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করলেন নির্মাল্য রায়। তিনি প্রথমে রাগ পুরিয়া কল্যাণ বিলম্বিত ও দ্রুত খেয়াল পরিবেশন করেন। এর পর মালকোষ রাগের তিল্লানা পরিবেশন করেন। শিল্পীর সরগমের কারুকার্য খুবই বৈচিত্রপূর্ণ। এর পর অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিল্পী গেট কিনডে বাঁশিতে পরিবেশন করলেন রাগ আভাগী। তবলায় ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। |
|
|
মনে পড়ে তাঁকে |
কাকলি নিবেদিত দেবদুলাল স্মরণ অনুষ্ঠানে ভারত সেবাশ্রমের প্রধান মহারাজ স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ উপস্থত ছিলেন। সে দিনের অনুষ্ঠানে ‘তাহারে ভুলিবে বল কেমনে’ অতুলপ্রসাদের এই গানটি শোনালেন সুপর্ণা ঘোষ। দেবদুলালের পছন্দের শিল্পী ছিলেন নিশীথ সাধু। তিনি শোনালেন তেমনই বেশ কিছু রজনীকান্তের গান। ‘আমার চেয়েও অসাধারণ তুমি’ গানটি তাঁর কণ্ঠে অনবদ্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল বেশ কিছু গান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দ্রা সরকার, শিপ্রা ঘোষ, কৃষ্ণা সাহা প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য।
|
দু’জনে চব্বিশ |
|
‘বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সুতপা ভট্টাচার্য এবং অজন্তা সিংহের গান শ্রোতাদের মনে গভীর রেখাপাত করে। চব্বিশটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ও সংলাপের মাধ্যমে। সংকলন ও রচনায় অজন্তা সিংহ। পাঠে ছিলেন ঊষসী সেনগুপ্ত, অনিন্দিতা মিত্র ও আশিস হাজরা। আধুনিক গানের শিল্পী হয়েও সুতপা এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাঁর কণ্ঠে ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি’ ও ‘হায় রে ওরে যায় না কি জানা’ শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অজন্তার গাওয়া ‘বঁধু কোন আলো’ ও ‘মেঘের পরে মেঘ’ গান দু’টি সঠিক নির্বাচন। তবলায় শুভাশিস ভট্টাচার্য, কী বোর্ডে সুজিত। অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘উইভাস’। |
|