|
|
|
|
রাসে মেতেছে ময়না |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
‘উত্থান একাদশী’ থেকেই শুরু হয়েছিল যাত্রা। ভোর রাতে রাজবাড়ির কুলদেবতা শ্যামসুন্দর ও রাধিকা নৌকায় যান রাসমঞ্চে। এই ক’দিন সেখানেই দিনভর চলেছে পুজো-আর্চা, ভজন-কীর্তন, নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তবে ঠিক সূর্যাস্তের আগে ফিরতে হবে মন্দিরে। তাই সন্ধ্যা নামার আগেই শ্যাম-রাধিকাকে নিয়ে আসা হয় রাজবাড়ির মন্দিরে।
ময়নাগড়ের রাজবাড়ির সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রণব বাহুবলীন্দ্র বলেন, “প্রতিবছর কার্তিক মাসের উত্থান একাদশীতে শুরু হয় নৌ-রাসযাত্রা। কুলদেবতা শ্যামসুন্দর ও রাধিকা যুগল ভাবে নৌকায় যাত্রা করেন। সারাদিন রাসমঞ্চে থাকার পর সুর্যাস্তের আগেই নৌকায় করে ফিরিয়ে আনা হয় মূল মন্দিরে। ৮ দিন ধরে এ ভাবেই চলে রাসযাত্রা।” কিন্তু পূর্ণিমায় রাসমঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় না শ্যামসুন্দর-রাধিকাকে। এ দিন নৌ-রাসযাত্রা। তাই রাস পূর্ণিমায় আয়োজন করা হয় নৌকাবিহারের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শ্যামসুন্দর-রাধিকাকে নিয়ে সাজানো নৌকা ঘোরে রাজবাড়ি সংলগ্ন জলাশয়ে। সঙ্গে ছিলেন রাজবাড়ির সদস্যেরা। ভজন-কীর্তন চলেছে নৌকার মধ্যেই। চারদিকে তখন ফাটছে আতসবাজি। ময়নার প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন এই বর্ণময় রাসযাত্রা দেখতে হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। সান্ধ্য রাসযাত্রা উপলক্ষে আলোয় সেজে ওঠে গোটা রাজবাড়ি এবং সংলগ্ন জলাশয়। পূর্ণিমায় আতসবাজির রোশনাইয়ে চলে নৌ-বিহার।
আগে রাসযাত্রার সমস্ত আয়োজন করতেন রাজপরিবারের সদস্যেরাই। আজ তা সর্বজনীন। তাই রাস ঘিরে ময়নার মানুষের উন্মাদনা কম নয়। ময়নার বাহুবলীন্দ্র রাজপরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর রাসযাত্রা ঘিরে প্রতিবছর মেলা বসে রাসমঞ্চ সংলগ্ন ময়দানে। আয়োজন করা হয় নানা ধরনের অনুষ্ঠানের। রাজপরিবারের উদ্যোগে নৌ-রাসযাত্রার আয়োজন হলেও বছর তিনেক আগে রাসমেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদকে। রাসপূর্ণিমায় মেলার উদ্বোধন করেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি গাঁধী হাজরা। তার আগে বিকেলে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে আসে মেলা প্রাঙ্গনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, ময়নার বিধায়ক ভূষণ দোলই, নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে ও জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি মামুদ হোসেন।
প্রতিবছরই বিভিন্ন জায়গা থেকে কুটিরশিল্পের পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হন বিক্রেতারা। এ বারও বসেছে রকমারি জিনিস ও খাবারের দোকান। মাঠের অন্য দিকে মঞ্চ করে চলেছে কীর্তন, বাউল, পালাগান, যাত্রা, আলোচনাসভা। ফলে প্রথম দিন থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে মেলায়। ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে মেলা। রাসমেলা কমিটির সম্পাদক বিমান পণ্ডা বলেন, “রাস উৎসব ঘিরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনক্ষেত্র তৈরি হয় ময়নায়। মেলার এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে আমরাও বদ্ধপরিকর।” |
|
|
|
|
|