|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
নিউ মার্কেট |
বদ্ধ কূপ |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
বিরাট এলাকা জুড়ে মার্কেট কমপ্লেক্স। কিন্তু মার্কেটের দু’টি তলে ভেন্টিলেশন থাকলেও বাকি দু’টি তলে কোনও ভেন্টিলেশনই নেই। যে দু’টি তলে আছে তা-ও মান্ধাতার আমলের। অভিযোগ উঠেছে, ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাজারটির একটি অংশে দু’-দু’বার আগুন লাগার পরেও বাজারের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নতুন করে তৈরি করেনি কলকাতা পুরসভা। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নিউ মার্কেট বা এস এস হগ মার্কেট কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভেন্টিলেশন শুধুমাত্র নতুন কমপ্লেক্সে রয়েছে। দু’টি তল মিলিয়ে মোট ১৪টি ব্লোয়ার। আর বাকি দু’টি তলে কোনও রকমের ভেন্টিলেশনই নেই। চার তলা এই মার্কেটের নতুন কমপ্লেক্সের এক-একটি তল প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুটের। দু’টি তল মিলিয়ে দোকান ৪২৫টির মতো। এক-একটি দোকানের আয়তন ১০০ বর্গফুট। ফলে জিনিসে ঠাসা অপরিসর জায়গা ভিড়ের সময়ে গরম আর বদ্ধ হয়ে ওঠে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার নেবে বলে অভিযোগ বাজারের দোকানদারদের। তার উপর কমপ্লেক্সের ভিতরে দোকানের সারির মধ্যে ফাঁকা জায়গাও দখল করে ফেলেছেন বেশ কিছু দোকানদার। এক দিকে অপরিসর জায়গা, সেই সঙ্গে কিছু দোকানদারের সচেতনতার অভাব দুইয়ে মিলিয়ে কলকাতার প্রাচীন এই বাজারের ভিতরের নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি শোচনীয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরসভার তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। |
|
ফাইল চিত্র |
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “নিউ মার্কেটে সমস্যা আছে ঠিকই। কিন্তু শুধু পুরসভার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরকর্তৃপক্ষ একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই তাঁদের আমরা আলোচনার জন্য জানিয়েছি।”
নিউ মার্কেটে প্রথম বার আগুন লাগার পরে বাজারটি দু’ভাগে ভাগ করা হয় পুরনো এবং নতুন কমপ্লেক্স। পুরসভা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুরনো এবং নতুন মিলিয়ে এই মার্কেট কমপ্লেক্সের মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৬৯১। যার মধ্যে ৯১৫টি দোকান নতুন কমপ্লেক্সে এবং ১ হাজার ৭৭৬টি পুরনো কমপ্লেক্সে। চারতলার নতুন কমপ্লেক্সের মাটির নীচের আর প্রথম তলে ইতিমধ্যেই ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু অনেক জায়গাতেই সেই ভেন্টিলেশন সব সময় কাজ করে না বলে অভিযোগ খোদ দোকানদারদের। আর ভেন্টিলেশন বলতে কিছু ব্লোয়ার। কিন্তু সেই ব্লোয়ার এমন জায়গায় লাগানো রয়েছে যে গরম হাওয়া বাইরে বেরনোর জায়গা না পেয়ে ভিতরেই ঘুরপাক খায়। ফলে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে ভিড়ের সময় দু’টি তলই মানুষের ভিড়ে গরম এবং বদ্ধ হয়ে ওঠে। আর তিন ও চার তলায় এখনও কোনও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাই নেই। এই বাজারের উপরের তল দু’টিতে চার দিকের ছোট ছোট কাচের জানলাই ভরসা।
১৯৮৬-তে বড় আগুন লাগার পরে পুড়ে যাওয়া অংশে নতুন কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই সময় নতুন করে বাজার তৈরি করা হলেও বাজারের ভেন্টিলেশন এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অত্যাধুনিক ভাবে তৈরি করা হয়নি। শুধু তাই নয়, জানা গেল পুরনো আর নতুন কমপ্লেক্স মিলিয়ে মোট প্রবেশপথ ৫৮টি। এতগুলি প্রবেশপথ থাকা সত্ত্বেও কোনও গেটই কিন্তু তিন-চার ফুটের বেশি চওড়া নয়। মাত্র তিনটি গেটই একটু বেশি চওড়া। কিন্তু, সেই গেটগুলিও বাইরের দিক থেকে হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। |
|
ছবি : পিন্টু মণ্ডল |
হগ মার্কেটের নতুন কমপ্লেক্সের দোকানদারদের দু’-দু’টি অ্যাসোসিয়েশন। মাটির নীচে আর প্রথম তলের অ্যাসোসিয়েশন ‘নিউ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক রাজেন গুপ্ত বললেন, “ভেন্টিলেশনের জন্য যে ব্লোয়ার তা বহু দিন কাজ করছিল না। সম্প্রতি সারানো হয়েছে। কিন্তু এতে ভেন্টিলেশনের কতটা কাজ হচ্ছে তা পুরসভার লোকজনই জানেন। তবে আমাদের দাবি, পুরো মার্কেট কমপ্লেক্সটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা। না হলে এই বদ্ধ ভাব কাটানো সম্ভব নয়।” অন্য দিকে, এস এস হগ মার্কেট ওনার’স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আজিম সিদ্দিকির বক্তব্য, “আমরা পুরসভাকে বলেছি যাতে নিউ মাকের্টের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নতমানের করে পুরো কমপ্লেক্সটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়া হয়।”
নিউ মার্কেটে সঠিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে কি না জানতে চাইলে দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “আমি আমার দফতরকে বলেছি নিউ মার্কেটের প্রতিটি তলায় ঠিকঠাক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে। যদি কোনও ত্রুটি পাওয়া যায় আমরা পুরসভাকে বলব ব্যবস্থা নিতে। ভেন্টিলেশনের বিষয়টি পুরোপুরি পুরসভার এক্তিয়ারে।” |
|
|
|
|
|