পূর্ব কলকাতা
অটো-রাজ
যার যেমন খুশি
বিপদের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ, যেমন খুশি ভাড়া, রুটও নির্দিষ্ট নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে এমন অবস্থা। প্রশাসনের তরফে ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুজোর সময়ে তা মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রী থেকে বিধাননগরবাসীদের। প্রশাসনের তরফে এ বারেও অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে গোছের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
রাত ৯টা। বিধাননগর রোড স্টেশনে যাবেন বলে সিটি সেন্টারের কাছ থেকে অটোতে উঠে ভাড়া জিজ্ঞাসা করতেই চমকে উঠলেন খন্নার বাসিন্দা শুভঙ্কর বসু। বেশি নয়, ১২ টাকা। দিনে সে রুটেই ভাড়া ৯ টাকা।
সকাল ১০টা। বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে করুণাময়ী যেতে গিয়ে সোদপুরের চার যুবকের ভাড়া লাগল ৪৮ টাকা। অথচ অন্য সময়ে তা কমে মাথাপিছু হয় ৯ টাকা।
পুজোর সময়ে প্রতিটি রুটেই ভাড়া বেড়েছে। কলকাতায় যেমন চার জনের বেশি যাত্রী নিলে জরিমানা ধার্য করতে পারে কলকাতা পুলিশ, এখানে তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে ছ’জন যাত্রী নিয়েও আকছার চলাচল করেন অটোচালকেরা। প্রশ্ন উঠেছে, যাত্রী সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করে কবে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন? প্রশাসনের তরফে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অটোর ভাড়া, স্ট্যান্ড, রুট নির্দিষ্ট করা হবে। প্রতিশ্রুতিটুকুই সার। দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেড় বছর পার হয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পুজোর আগে থেকে আচমকা ভাড়া বেড়ে গেল। ট্যাক্সি, বাসের ভাড়া যদি না বাড়ে, অটোর ভাড়া কী ভাবে বাড়ানো যায়? প্রশাসন কেন নিশ্চুপ? সোদপুর থেকে বিধাননগরের অফিসপাড়ায় কর্মসূত্রে আসেন সঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলেন, “ভাড়ার চার্ট কোথাও দেখা যায় না। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দেন মারমুখী অটোচালক। কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকেন তাঁরা। প্রশাসন তা হলে কোথায়?”
এই অভিযোগ স্বীকার করে সিটু নিয়ন্ত্রিত অটো ইউনিয়নের নেতৃত্বের অভিযোগ, এখন বিধাননগরে তৃণমূলেরই একাধিক অটো ইউনিয়ন। তাঁরা এক এক জন নেতার অনুগামী। কেউ কারও কথা শোনে না। ফলে বিভিন্ন রকম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট ভাড়া, যাত্রী পরিবহণ নিয়ে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাঁরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সল্টলেক অটো অপারেটর্স ইউনিয়নের নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সমস্যা হল, ইউনিয়ন অনেক। এক দল ভাড়া বাড়ালে অন্য দলও বাধ্য হচ্ছে ভাড়া বাড়াতে। এ ছাড়া ‘ফ্লাইং অটো’তেও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। দলকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।” পাশাপাশি, অটো ইউনিয়নগুলির একটি অংশের দাবি, বিধাননগরে প্রতি দিন প্রায় পাঁচ হাজার অটো চলে। তার মধ্যে অধিকাংশ অটোর বৈধতা নিয়েই সন্দেহ আছে। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না। বাসিন্দাদের কথায়, আগে অটো ইউনিয়নগুলি মূলত সিটুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নও অটো নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আগে যা-ও বা ভাড়ার সমতা ছিল এখন তা-ও উঠে গিয়েছে। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সল্টলেক স্টেডিয়ামে কোনও খেলা কিংবা অনুষ্ঠান হলে, অটোর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ অন্য রুটের অটোও তখন স্টেডিয়াম পর্যন্ত চলে যায় এবং ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যায়।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রণধীর কুমারের কথায়: “বিধাননগর এলাকায় মাঝেমধ্যেই পরিবহণ দফতরের থেকে হানা দেওয়া হয়। প্রচুর বেআইনি অটো আটকও করা হয়েছে। তবে ফের যখন এমন অভিযোগ উঠেছে, তখন অবিলম্বে সেই অটোগুলি ধরার জন্য অভিযান চালানো হবে।” অভিযোগ স্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পরিবহণ) অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তবুও আমরা মহকুমাশাসককে ব্যাপারটি জানিয়েছি।” বিধাননগরের মহকুমাশাসক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কী বলছে পরিবহণ দফতর?

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.