|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত |
হাইস্পিড করিডর |
গতি রোধ |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
কথা ছিল ১৪ মাসের মধ্যেই তৈরি হবে রাস্তা। কিন্তু ঘোষণার পরে আঠারো মাস পেরিয়ে গেলেও কয়েকশো মিটার মাটি সমান করা ছাড়া কোনও কাজই হয়নি। উচ্ছেদ হয়নি জমির দখলদারি, অধিগৃহীত জমিতে রাস্তার এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজও (ডিমার্কেশন) হয়নি পুরোপুরি। এমনকী, রাস্তার জমি হস্তান্তরও করা যায়নি নির্মাণকারী সংস্থার হাতে। তাই পূর্ণাঙ্গ রাস্তা নির্মাণের কাজ কার্যত থমকেই রয়েছে। রাজারহাট উপনগরী থেকে মধ্যমগ্রাম পুরসভার গঙ্গানগর এলাকায় যশোহর রোড পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ‘হাইস্পিড করিডর’ নির্মাণের রাজ্য সরকারি পরিকল্পনা ঘিরে অনিশ্চয়তা দানা বেঁধেছে। গত বছরের ১১ এপ্রিল সরকারি ভাবে এই রাস্তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। রাজ্য আবাসন দফতর ও পরিবহণ দফতরের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। রাজারহাটের জগারডাঙা লাগোয়া ২১১ নম্বর বাসরাস্তার ধারে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ফলকের আবরণ উন্মোচন করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছিলেন, “নিউ টাউনের উত্তরপ্রান্ত, রাজারহাট রোড ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ এই ‘হাইস্পিড করিডর’ নির্মাণ করা হবে ১০ লেনের। |
|
দু’দিকে খুব দ্রুতগামী গাড়ির জন্য থাকবে ৩টি করে লেন। এর জন্য প্রথম পর্যায়ে খরচ ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১০ কোটি দেবে হিডকো, ১০ কোটি দেবে পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন সংস্থা এবং বাকি ২২ কোটি টাকা দেবে রাজ্য সরকার।” অসীমবাবু আরও বলেছিলেন, “এই নথিতে সই করে তবেই শিলান্যাস হচ্ছে। ১৪ মাসের মধ্যে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ হবে।” অর্থমন্ত্রীর ওই প্রতিশ্রুতির পরেও এক বছর বামফ্রন্ট সরকারই রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু হাইস্পিড করিডরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়নি। রাস্তাটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এইচআরবিসি-কে। মাত্র কয়েক মাস আগে রাস্তার সেই নির্মাণ কাজ শুরু করেছে এই সংস্থা। কিন্তু কাজ চলছে ২১১ নম্বর বাসরাস্তা থেকে ৯১ নম্বর বাসরাস্তা পর্যন্ত কম-বেশি এক কিমি দূরত্বের মধ্যে। সংস্থা সূত্রে খবর, রাস্তার জন্য বাকি জমি হস্তান্তর করা হয়নি তাদের। এ ছাড়া, এই এক কিলোমিটারের মধ্যের বাড়িগুলিও সরানো হয়নি বলে রাস্তা নির্মাণে সমস্যা হচ্ছে।
কয়েক বছর আগে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার এক থেকে চার নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকশো একর জমিতে ট্রাক টার্মিনাল তৈরির জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতর জমি অধিগ্রহণ শুরু করে। প্রায় একই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয় টার্মিনালের পাশ দিয়ে ওই ‘হাইস্পিড করিডর’ তৈরির জন্যও। রাজারহাট উপনগরীর মেজর আর্টারিয়াল রোড থেকে বেরিয়ে ওই রাস্তাটি ২১১ নম্বর বাসরাস্তা পেরিয়ে রাজারহাট পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল, জগারডাঙা হয়ে ৯১ নম্বর বাসরাস্তা পেরিয়ে ক্রমান্বয়ে ২, ৪, ৩ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিহাটি, গাঁতি হয়ে রোহন্ডা-চণ্ডীগড় পঞ্চায়েত এলাকা ছুঁয়ে মধ্যমগ্রাম পুরসভার গঙ্গানগরে যশোহর রোডে যুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু ট্রাক টার্মিনালের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে এলাকায় অসন্তোষ তৈরি হয়। |
|
ক্রমাগত কঠিন হয়ে ওঠে জমি অধিগ্রহণ। এলাকার মানুষের মতে, যেহেতু হাইস্পিড করিডরের শিলান্যাসের সময়েও ওই রাস্তা নির্মাণের জন্যবেশ কিছু জমির অধিগ্রহণ বাকি ছিল এবং পরবর্তী কালে সরকারের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি ধাক্কা খায়, তাই রাজারহাট পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ডে রাস্তার জন্য জমি দখল ও চিহ্নিতকরণ (ডিমার্কেশন) করা হয়নি। এর পরে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও হাইস্পিড করিডরের পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসীর ধন্দ থেকেই গিয়েছে।
এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আমাদের হাতে ১.১ কিমি রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। ওই জমিতে কম-বেশি চার কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। আপাতত ২১১ নম্বর বাসরাস্তা থেকে ৯১ নম্বর বাসরাস্তা পর্যন্ত প্রায় এক কিমি রাস্তার নির্মাণ আমরা শুরু করেছি। কিন্তু এই এলাকার মধ্যেও বেশ কিছু বাড়ি রয়েছে। সেগুলি বাদ দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হবে। কিন্তু পিচের কাজ হবে না। পরবর্তী কালে যখন যেমন জমি আর টাকা পাওয়া যাবে, তখন তেমন ভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।”
হিডকো-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন দাসের বক্তব্য: “ওই জমি হস্তান্তরের দায়িত্ব হিডকোর নয়, পরিবহণ দফতরের। তারাই জমি হস্তান্তরের বিষয়ে বলতে পারবে।” যদিও পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ধীমান মুখোপাধ্যায়ের কথায়: “রাস্তাটি পরিবহণ ও আবাসন দফতরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে। পরিবহণ দফতর কিছু টাকা দিয়েছে। জমি হস্তান্তর করার দায়িত্ব আবাসন দফতরের।” আবাসন দফতরের সচিব উৎপল সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমি সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
|
|
|
|
|