দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
উদ্যোগ
মেলবে গতির ডানা
মি-জট ছাড়িয়ে জোকা-বিবাদী বাগ রুটের প্রস্তাবিত মেট্রো প্রকল্পের কাজে গতি আনতে উদ্যোগী হয়েছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন আরভিএনএল-এর কর্তারা। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই জট দ্রুত না কাটলে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে একটু দেরি হতে পারে। প্রকাশ্যে অবশ্য তাঁরা জানাচ্ছেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
২০১০-এর ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জোকায় মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। ১৬.৭৫ কিলোমিটার পথে চলবে মেট্রো। এর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ২৬১৯ কোটি টাকা। ৩০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত নানা সমস্যায় কাজ শুরু করা যায়নি। মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যূষ ঘোষ বলেন, “কাজ শুরু হতে জুন মাস হয়ে গিয়েছে। কাজ শেষ হতে যাতে দেরি না হয়, জমি-জট কাটানোর পাশাপাশি প্রকল্পের অন্যান্য কাজেও গতি আনা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী।”
জোকা-র দিকে টার্মিনাল তৈরির জন্য পাঁচটি মৌজার ২৫ হেক্টর জমি দরকার। মূলত মহেশতলা ও বিষ্ণুপুর মৌজার শাখারিপোটা, রসপুঞ্জ, বনগ্রাম, কলাগাছিয়া এবং হাঁসপুকুরিয়া এ সব মৌজার চিহ্নিত জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। প্রত্যূষবাবু বলেন, “এ সব জায়গা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করার প্রয়োজনও হয়নি। কারণ জমিগুলি ফাঁকা ছিল।” কিছু সমস্যা রয়েছে সেচ দফতরের ৪.৮৮ একর জমি নিয়ে। সেচ-কর্তারা নীতিগত ভাবে এই জমি রেলকে দিতে রাজি হয়েছেন। তবে, সে ক্ষেত্রে জোকা ও হাঁসপুকুরিয়া মৌজায় পরিবর্ত নিকাশি-পথ তৈরি করতে হবে। কী ভাবে তা হবে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ট্রাম ডিপোর অদূরে চড়িয়াল খালের ধারে বিদ্যুৎ পর্ষদের একটি দফতর আছে। সেখানকার ৯৬ বর্গমিটার জমি দরকার মেট্রো প্রকল্পের জন্য। এ জন্য ওখানকার বিদ্যুৎ পরিবহণের কিছু সংযোগ সরাতে হবে। বিদ্যুৎকর্তারা নীতিগত ভাবে তা মেনে নিলেও এতে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আরভিএনএল-এর এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “ওই সংযোগ সরানো না হলে ওখানে আরও দু’জায়গায় জমি নেওয়ার দরকার হবে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
জমির জন্য আরভিএনএল-কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কারণ, অতীতে নানা সময়ে বন্দর তাদের জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ দিয়েছে, এমন কয়েকটি সংস্থার কিছু জমি মেট্রো প্রকল্পের জন্য দরকার।
এর মধ্যে আছে মোমিনপুরে (আলিপুর) টাঁকশাল, নৌ-বিষয়ক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাঝেরহাট স্টেশন সংলগ্ন একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রভৃতি। ভাঙতে হবে সিইএসসি-র তারাতলা অফিসের একাংশ। আরভিএনএল-এর এক অফিসার বলেন, “বৃদ্ধাশ্রমের যে অংশ ভাঙা হবে, নতুন বাড়ি তৈরি করে তার আবাসিকদের রাখার ব্যবস্থা আমাদেরই করার অনুরোধ করেছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ।”
সমস্যা রয়েছে নিউ আলিপুরের একটি প্রতিবন্ধী-কল্যাণ সংস্থা নিয়েও। বন্দর সূত্রের খবর, যে জমিতে ওই সংস্থার তিন তলা ভবন, সেটির মালিক বন্দর-কর্তৃপক্ষই। কিন্তু বিশেষ কারণে কর্তৃপক্ষ ওই সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে অথবা পরিবর্ত জায়গা দিতে চান না। বন্দরের তরফে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে আরভিএনএল-কেই।
মাঝেরহাট সেতুর কাছে বন্দরের থেকে লিজে পাওয়া দু’টি বেসরকারি সংস্থার কিছু জমিও দরকার মেট্রো প্রকল্পের জন্য। এগুলির ব্যাপারেও কথা চলছে বন্দর-আরভিএনএল এবং সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের মধ্যে। আরভিএনএল-এর এক পদস্থ অফিসার বলেন, “এ সব কোনও ক্ষেত্রেই এখনও পর্যন্ত আইনি জটিলতা নেই। কাকে কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সে সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ছবি : পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.