সবাই চায় ফুটবলকে নিষ্কলঙ্ক খেলা হিসেবে দেখতে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই সেটা হয়ে ওঠে না। গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রশাসকরা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই দায়িত্বে আছেন। তাঁরা কেউই সারা জীবনে ফুটবলে পা রাখেননি। ফিফায় সেপ ব্লাটার, আর্জেন্তিনার ফেডারেশনে জুলিও গ্রোন্দোনা, ব্রাজিলে রিকার্ডো টেক্সেইরা এবং কনকাকাফ-এ জ্যাক ওয়ার্নারএঁরা প্রত্যেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন ফুটবল সংস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিজেদের বন্ধুদের মধ্যে সেই টাকা বিলিয়ে দিচ্ছেন। এই টাকাটা কী ভাবে ভাগ করা হবে, তার উপর কোনও সরকারি নজরদারি নেই। ফিফার কাতার এবং রাশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়ার মতো কেচ্ছা না ঘটলে এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রশাসকদের কারও কাছে জবাবও দিতে হত না। কনকাকাফ কমিটির সদস্যদের মধ্যে যাঁরা ভোট দিচ্ছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে ৪০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন বলে কাতারের বিন হামাম-কে সংস্থা থেকে বার করে দেওয়া হয়নি। উনি ব্লাটারের বিরুদ্ধে নির্বাচন লড়ছিলেন বলেই সেটা করা হয়েছে।
আফ্রিকায় ফুটবল মাঠ তৈরি থেকে ফুটবল প্রোগ্রামের পৃষ্ঠপোষকতা করা, বিভিন্ন দেশে ‘গোল প্রোগ্রাম’ করা ফিফা যথেষ্ট ভাল কাজও করে। কিন্তু পাশাপাশি ফিফা এমন একটা ব্যর্থ সিস্টেম ধরে রেখেছে যেখানে কারও চেলা হতে পারলে তবেই উন্নতি হবে। কয়েক জন বৃদ্ধ বছরের পর বছর নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। তাঁরা চেয়ার ছাড়তে চান না। দলের মালিকদের হুমকি দিয়ে ভোট আদায় করে দশকের পর দশক ক্ষমতায় থেকে যান। এই কারণে প্লেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেও আর্জেন্তিনার প্রায় প্রতিটা টিম দেউলিয়া। এত টাকা যায় কোথায়? বিশ্বকাপ জয় সেলিব্রেট করার অনুষ্ঠানে পেলে-কে ডাকার প্রয়োজন মনে করেন না টেক্সেইরা। যদিও পেলে দেশের হয়ে তিনটে বিশ্বকাপ জিতেছে। যেখানে টেক্সেইরা জীবনে কোনও দিন ফুটবল খেলেনি। ব্রাজিলীয় ফুটবলে কার অবদান বেশি? পেলে না টেক্সেইরা?
ফুটবল এখন কোটি কোটি টাকার বৃহৎ শিল্প। কিন্তু ফিফা-র পরিকাঠামো একই থেকে গিয়েছে দুর্ভেদ্য এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারও চেলা হয়ে কাজ করা, ঘুষ দেওয়া এবং পক্ষপাত এ সব কিছুই ফুটবলের মতো সুন্দর খেলার সাহায্য করে না। যারা ফুটবলকে সত্যিই ভালবাসে, তাদের কষ্টই দেয় শুধু! |