নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মনসুর আলি পটৌডি বেঁচে থাকলে তাঁকে দেখে খুশি হতেন।
একটা চোখ নিয়ে এই তরুণও লড়ে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ স্তরে।
বেটন কাপ ফাইনালে ম্যাচের সেরা হয়ে চণ্ডীগড়ের বলজিৎ সিংহ যখন লেসলি ক্লডিয়াসের পা ছুঁতে এলেন, তখন ইতিহাস এবং লড়াই মাখামাখি হয়ে গেল। “একটা চোখ নিয়ে খেলা যাবে না কেন? শুটাররা তো একটা চোখ দিয়েই জেতে!” আশা শোনালেন তিনটি অলিম্পিক সোনা, একটি রুপো জয়ী ক্লডিয়াস। অয়েল ইন্ডিয়ার গোলকিপার বলজিৎ এসে পা ছুঁয়ে বললেন, “আপনার কথা অনেক শুনেছি। পড়েছি। আশীর্বাদ করুন, যাতে আরও বড় হতে পারি।”
দু’বছর আগে পুণের জাতীয় হকি শিবিরে গল্ফ বল নিয়ে প্র্যাক্টিসের সময় ডান চোখে মারাত্মক আঘাত পান বলজিৎ। চণ্ডীগড়ের ছেলেটির চোখে নানা অস্ত্রোপচার করার পরেও আর ফেরেনি দৃষ্টি। শুক্রবার বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো হকি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ও এন জি সি-র আক্রমণ বারবার রুখে দিলেন তিনি। অয়েল ইন্ডিয়ার ২-০ জয়ে নায়কও বলজিৎই। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন ভাষণ দিতে এসে তাঁর কথা বারবার বলছিলেন।
|
সাইতে ক্লডিয়াসের অভিনন্দন বলজিৎকে। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র। |
আর সাংবাদিকদের সামনে এসে বলজিতের গলায় শুধু জেদ। মাস কয়েক আগে, জাতীয় হকি কোচ ও নির্বাচকরা তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়েছেন। “আমাকে যেন প্রতিবন্ধী হিসেবে না দেখা হয়। ওঁরা আমাকে দল থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভারতীয় দলে আবার ফিরতে চাই।” জেদের পাশাপাশি এক অদ্ভুত নিষ্পৃহতা গলায়। গোটা দল যখন কাপ নিয়ে হইচই করছে, তিনি তখন অনেক দূরে দাঁড়িয়ে। মাইকে তাঁর নাম ঘোষণা হতে কোনও বাড়তি উৎসাহ নেই। বলজিতের লক্ষ্য অনেক দূরে।
গত অলিম্পিকে ভারত যোগ্যতা অর্জন করেনি। লেসলি ক্লডিয়াসের ধারণা, এই অলিম্পিকেও ভারতের ছাড়পত্র পাওয়া কঠিন। নিষ্প্রাণ বেটন ফাইনাল দেখে যখন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বললেন, “সাম্প্রতিক কালের সেরা খেলা দেখলাম”, ক্লডিয়াসের তখন সোজাসাপ্টা কথা, “পারফরম্যান্স বিগ জিরো।” বেটন কাপ দেখে চুড়ান্ত হতাশ হকির গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান। হতাশ বিদেশি কোচ দেখে। এখনও তাঁর মুখে, সেরা কোচ অশোক কুমার।
হতাশার মধ্যে আলো শুধু বলজিৎ। মুখে হাসি নেই। কোনও উচ্ছ্বাস নেই। দীর্ঘ যন্ত্রণা সব কিছু মুছে দিয়েছে। জাতীয় হকি কোচ নবস তাঁকে বাতিলই করে দিয়েছেন। নির্বাচকরাও। বেটন ফাইনালে আপনার লড়াই নির্বাচকরা দেখতে পেলেন না, এটা ভাবলে খারাপ লাগছে না? বলজিৎ সেই নিষ্পৃহ গলায় বলে গেলেন, “নির্বাচকরা নেই। আপনারা সব মিডিয়া আছেন। আপনাদের মাধ্যমেই ওঁরা যদি জানতে পারেন।”
বলজিতের যাওয়ার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন ক্লডিয়াস। |