নিজস্ব সংবাদদাতা • ধনেখালি |
সমবায় সমিতির মাধ্যমে ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে আলু কেনার ‘আজগুবি’ হিসেব দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে পুলিশ এক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত কিশোরীমোহন সিংহ ধনেখালির জোনাল কমিটির প্রাক্তন সদস্য। তিনি দু’বার জেলা পরিষদের সদস্যও ছিলেন। হুগলি জেলা সমবায়ে দফতরের সহকারী নিয়ামক সম্প্রতি ধনেখালি থানায় ওই নেতা-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। তারই ভিত্তিতে পুলিশ শুক্রবার গ্রেফতার করে কিশোরীমোহনকে। দলের নেতাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি সিপিএমের।
ধনেখালি থানা মাকের্টিং সমবায়ে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছিলেন চাষিরা। কিন্তু বিগত বামফ্রন্ট সরকার সেই অভিযোগে কর্ণপাত করেনি বলে তাঁদের দাবি। গত আলুর মরসুমে ব্যাপক ফলন হয় আলুর। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে চাষিদের সেই আলুর অভাবী বিক্রির পরিস্থিতি হয়। চাষিদের সুরাহা দিতে রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করে। রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় সমিতিগুলিকে চাষিদের থেকে আলু কেনার নির্দেশ দেয়।
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ধনেখালি থানা সমবায় সমিতি চাষিদের থেকে আলু কেনা শুরু করে। কিন্তু সমবায় কর্তৃপক্ষ তাতে নানা কারচুপি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই চাষিদের থেকে সরাসরি আলু না কিনে ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ করা হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখতে পায়, যাঁদের নামে মাস্টার রোল দেওয়া হয়েছে, বহু ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও অস্তিত্বই নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে মৃতদের নামেও মাস্টার রোল তৈরি করা হয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানান, এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ লক্ষ টাকার অসঙ্গতি ধরা পড়েছে ওই সমবায় থেকে। মাস্টার রোলে যে সমস্ত ঠিকানা রয়েছে, বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমবায়ের সহকারী নিয়ামকের তরফে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও এ পর্যন্ত কিশোরীমোহনবাবুকে ধরা গিয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। এর আগে হুগলিরই চণ্ডীতলায় একই অভিযোগ ওঠে একটি সমবাস সমিতির কর্তাদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগে এক বাম নেতাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য মিলবে।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, “ওই ঘটনায় শুধুমাত্র কোনও এক জনকে ধরে ক্ষান্ত হলেই চলবে না। যাঁরা টাকা নয়ছয়ে জড়িত, তাদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে।” অন্য দিকে, সিপিএমের ধনেখালি জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিশোরীমোহনবাবুর গ্রেফতার নিয়ে নতুন করে কী আর বলব! এ ব্যাপারে আমাদের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। কেননা, সর্বত্রই আমাদের দলের নেতাদের এ ভাবেই পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হচ্ছে।” |