দুর্নীতি মোকাবিলায় ‘দাওয়াই’ পঞ্চায়েতে
প্রধানের ঘরের সামনে রাখে কাঠের বাক্স। অভিযোগ থাকলে সেখানে জমা করতে বলা হয়েছে। গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে, গাছের গায়ে পোস্টার সাঁটা। সেখানে বলা হয়েছে, অভিযোগ থাকলে জমা দিন পঞ্চায়েতে। কীসের অভিযোগ? প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত কর্মী যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তা লিখিত ভাবে জমা দেওয়া যাবে পঞ্চায়েতেই। যা খতিয়ে দেখবে ব্লক প্রশাসন।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল পঞ্চায়েতে এই বন্দোবস্ত চালু হয়েছে প্রধান কল্যাণ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে। ২০০৮ সালে এখানে জিতে আসে তৃণমূল। প্রধান নির্বাচিত হন সুজাতা মণ্ডল। কিন্তু দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কয়েকজন অনুগামীকে সঙ্গে করে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তৃণমূলেরই সদস্য কল্যাণবাবু। অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে যান সুজাতাদেবী। প্রধান পদে নির্বাচিত হন কল্যাণ। দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য কল্যাণবাবু ও তাঁর পাঁচ জন অনুগামীকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। দলের ছায়া নেই মাথার উপরে, কিন্তু পঞ্চায়েতকে ‘দুর্নীতিমুক্ত’ করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ জমা দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন। আবার লিফলেট, পোস্টার সেঁটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারও চলছে। গ্রামে মাইকের মাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। কল্যাণবাবু বলেন, “বেনিয়ম করলে আমার বিরুদ্ধেও গ্রামবাসীরা অভিযোগ করতে পারেন।”
ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
আর প্রচারের ফল? পেশায় দিনমজুর প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক দাসের নামে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বছর দুই আগে ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, তৎকালীন প্রধান এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করতে বলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিই তাঁকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যান। দু’দফায় ৩৫ হাজার টাকা তোলা হয়। তার মধ্যে থেকে ২৫ হাজার টাকা তাঁকে দেওয়া হয় বলে মানিক দাসের অভিযোগ। তিনি বলেন, “সেই টাকারও বেশির ভাগটাই আমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয় ইট, বালি, সিমেন্টের দাম মেটানোর নাম করে। সেই ইট, বালি, সিমেন্ট আর আসেনি। তিনি বলেন, “মাইক প্রচার শুনে প্রধানের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি।” পাতিহাল গ্রামের শ্যামাপদ সামন্ত বলেন, “আমি বাড়ি তৈরির অনুমতি আনতে গিয়েছিলাম। পঞ্চায়েতের এক সদস্য আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন। কোনও রসিদ দেননি। আমিও অভিযোগ জমা দিয়েছি।” এ রকম আরও অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে বলে কল্যাণবাবু জানান। সে না হয় হল। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে কী করছেন? পঞ্চায়েতের ক্ষমতা সীমিত। কল্যাণবাবু বলেন, “সব অভিযোগ বিডিওর কাছে পাঠিয়েছি।”
বিডিও সলমন হুসনি বলেন, “প্রধানের এই ভূমিকাটি ভাল। তিনি আমার কাছে কিছু অভিযাগ পাঠিয়েওছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” একই সঙ্গে অবশ্য তাঁর প্রশ্ন, “আগের প্রধানের আমলে উনি তো পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। তখন তাঁর ভূমিকা কী ছিল?” কল্যাণবাবু বলেন, “এক জন সাধারণ সদস্য হিসাবে একক ভাবে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দুর্নীতিতে এই পঞ্চায়েত আকণ্ঠ ডুবে গিয়েছিল। তাই আমি এবং আমার পাঁচ জন অনুগামী প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনি। এর জন্য আমাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দমানো যাবে না।” ২০০৩ সালে কল্যাণবাবু নিজেই ছিলেন পঞ্চায়েতের প্রধান। তখন কী করেছেন? কল্যাণাববুর দাবি, “তখনও দুর্নীতি রোধ করার নানা প্রকল্প নিয়েছিলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.