|
|
|
|
ভবানীপুর-কাণ্ড |
তোপ দেগে বাম নালিশ রাজ্যপালকেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
যাঁর বিরুদ্ধে ‘অন্যায়’কে সমর্থন করার অভিযোগ তাদের, তাঁর কাছেই প্রতিকার চাইতে গেল বামফ্রন্ট! দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের জন্য আচরণবিধি জারি হয়ে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ভবানীপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হল বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল। ওই ঘটনায় যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘তৃণমূলের প্রবক্তা’ হিসাবে কাজ করার অভিযোগ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই এনেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু!
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের জন্য দিল্লিতে থাকায় এ দিন সিপিএমের তরফে আনিসুর রহমান, আরএসপি-র সুভাষ নস্কর, ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহ, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক এবং সিপিআইয়ের আনন্দময় মণ্ডল রাজভবনে গিয়েছিলেন বর্ধমান এবং ভবানীপুরের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানাতে। কিন্তু ভবানীপুর-কাণ্ডে রাজ্যপালের যে ভূমিকার সমালোচনা বিমানবাবু করেছিলেন, তা নিয়ে কোনও কথা সামনাসামনি তাঁরা রাজ্যপালকে বলেননি। স্মারকলিপিতেও সরাসরি কিছু লেখেননি। প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষবাবু ব্যাখ্যা দেন, “রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যা বলার বলেছেন। আমরা মনে করি, রাজ্যপাল ওই কথা (মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা সমর্থন) বলতে পারেন না। কিন্তু পরিষদীয় দলের তরফে আমরা নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপালের কাছে সকলে ‘প্রোটেকশন’ চাইতেই যায়।” সুভাষবাবুর আরও দাবি, তাঁরা ‘অন্য ভাবে’ রাজ্যপালের সমালোচনা করেছেন। আনিসুরেরও বক্তব্য, তাঁরা রাজ্যপালের সমালোচনা করতে রাজভবনে যাননি।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনকে ঘিরে গোলমালের রাতে থানায় হাজির হয়ে ‘বড় গোলমাল এড়াতে’ সাহায্য করেছিলেন বলে চেন্নাইয়ে মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যপাল নারায়ণন। তার প্রেক্ষিতেই বিমানবাবু বলেন, তৃণমূলের ‘অন্যায়ের শরিক’ হয়ে উঠছেন রাজ্যপাল। ‘তৃণমূলের প্রবক্তা’ হিসাবে রাজ্যপালের এই ভূমিকা ‘অবাঞ্ছিত’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি করতে এ দিন প্রথা মেনে সেই রাজ্যপালের কাছেই গিয়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। ভবানীপুর-কাণ্ড নিয়ে সামগ্রিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল তৃণমূলের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টির কৌশল এ দিন স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে একই বিষয়ে রবীন দেবের নেতৃত্বে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের অভিযোগ জানাতে যাওয়ার ঘটনায়। সিপিএমের অভিযোগ, নির্বাচনী আচরণবিধি জারি থাকায় দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকায় পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের আওতায়। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুর থানায় উপস্থিত হয়ে নির্দেশ দেওয়ার ঘটনা বিধিভঙ্গ।
রাজভবনে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর বলেন, “রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্টের প্রচেষ্টা চলছে। বর্ধমানে সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্মেলন পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগে পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিআইয়ের লোকাল সম্মেলনে তৃণমূলের হামলা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে রাজ্যপালকে উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানিয়েছি।” রাজ্যপাল তাঁর পক্ষে যা ‘করণীয়’, তা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে বাম বিধায়কদের দাবি। |
|
|
|
|
|