রায়নার পরে কেতুগ্রামেও দলের লোকাল কমিটি সম্মেলন করতে পারল না সিপিএম। শুক্রবার কাটোয়া শহরে দলের কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির সম্মেলন আয়োজন করল তারা। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশের আপত্তি নয়, তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ কারণেই শেষ মূহুর্তে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে বলে দাবি সিপিএমের।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সিপিএমের দু’টি লোকাল কমিটি। কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটি আনখোনা, আগরডাঙা, মোরগ্রাম-গোপালপুর, বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। কান্দরা, পালিটা, রাজুর ও পাণ্ডুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গড়া কেতুগ্রাম ২ লোকাল কমিটির সম্মেলন হয় কমিটির অফিসেই। কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির বিদায়ী সম্পাদক ফারুক মির্জা এ দিন বলেন, “আমরা মোরগ্রাম-গোপালপুর পঞ্চায়েতের হাটমুর গ্রামে সম্মেলন করার কথা ভেবেছিলাম। আক্রান্ত হতে পারি ভেবেই শেষ মূহুর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টেছি।”
বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই কেতুগ্রামে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ জানিয়ে আসছে তৃণমূল। কেতুগ্রাম ১ উত্তর ও দক্ষিণ, দু’টি লোকাল কমিটির কার্যালয়ই দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। বিধানসভা ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনের ‘কড়াকড়ি’ চলাকালীন কিছু দিন অফিস দু’টি খোলা থাকলেও পরে ফের তালা পড়ে যায়। ভোটের দিন কেতুগ্রামে বেশ কয়েকটি বুথে এজেন্টও দিতে পারেনি সিপিএম। তৃণমূলের সন্ত্রাসই এ সবের মূল কারণ বলে অভিযোগ সিপিএম নেতৃত্বের। কেতুগ্রাম ১ লোকাল কমিটির সদ্য নির্বাচিত সম্পাদক তপন কাজির কথায়, “প্রতি মূহুর্তে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করছে তৃণমূল। ওদের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে প্রায়ই বোমা-বন্দুক উদ্ধার করছে পুলিশ। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট এলাকায় সম্মেলন হলে আমরা আক্রান্ত হতে পারতাম। তাই সেখানে সম্মেলন করা হল না।”
পুলিশের কাছে বিষয়টি জানিয়ে নিরাপত্তা চাওয়া হল না কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তপনবাবু বলেন, “লোকাল সম্মেলন ঘেরা জায়গায় করা হয়। সে জন্য আমরা কখনও পুলিশের কাছে অনুমতি বা নিরাপত্তা চাই না। এ বার তার ব্যতিক্রম হবে কেন?” বৃহস্পতিবারই জামালপুরের উচিতপুরে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে মাইক বাজানোর অভিযোগে দলের রায়না পূর্ব লোকাল কমিটির সম্মেলন বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তপন কোনার বলেন, “রবিবার কাটোয়া ২ ব্লকের ওকড়সা গ্রামে লোকাল কমিটির সম্মেলন হবে। আগের মতোই অনুমতি ছাড়া সম্মেলন করা হবে। পুলিশ বন্ধ করে দিলে দেবে।”
এ দিকে, দলের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের অভিযোগ, “মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে তৃণমূলের সন্ত্রাসে প্রায় ১৫০ জন ঘরছাড়া। সন্ত্রাসের জন্যই কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটি সম্মেলন কাটোয়ায় করতে হল।” সিপিএমের তরফে কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে ঘরছাড়াদের তালিকা প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে তাঁদের গ্রামে ফেরানোর দাবি করা হয়েছে। দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “গ্রামছাড়াদের সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এমনকী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ঘরছাড়াদের তালিকা দিয়েছেন। তবু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।” সিপিএম নেতাদের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা পুলিশের সামনে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না। ওই সব দুষ্কৃতীরা মঙ্গলকোট, বক্সিনগর, খেঁড়ুয়া, ব্রহ্মপুর, কামালপুর, কেতুগ্রামের কান্দরা, বামুনডিহি, খাসপুর, শ্রীপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। মহকুমা প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়, ইতিমধ্যে কাটোয়ার গুশুম্ব গ্রামে বেশ কিছু ঘরছাড়াকে ফেরানো হয়েছে। বাকিদেরও ঘরে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
এসডিপিও (কাটোয়া) জ্যোতির্ময় রায় বলেন, “নিরাপত্তার কারণে সিপিএম লোকাল কমিটির সম্মেলনের স্থান পরিবর্তন করেছে, এমন খবর আমার জানা নেই। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।” তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি তথা কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটে দলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “কোথাও কোনও সন্ত্রাস নেই। সম্মেলন করার জন্য ন্যূনতম যে লোকজন প্রয়োজন হয়, সিপিএমের এখন তা নেই। তাই ওরা এমন মিথ্যা প্রচার করছে।”
এ দিকে, শুক্রবার দুপুরে কাটোয়ায় জাহাঙ্গির শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি কেতুগ্রামের ধৃত তৃণমূল নেতা জাহের শেখের সঙ্গে কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারে দেখা করতে এসেছিলেন। পুলিশ জানায়, ধৃতের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি রত্নাকর দে-র অবশ্য দাবি, “পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে আমাদের এক সৎ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।” |