কাঠগড়ায় আবু আয়েশ
মমতাকে চিঠি দিয়ে বিচারের অপেক্ষায় ‘নির্যাতিত’ কর্মীরা
কদা সিপিএম ছেড়ে আসা দলেরই এক নেতার ‘অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে দলনেত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মন্তেশ্বরের এক তৃণমূল কর্মী। এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে, আজও সে চিঠির জবাব পাননি। দল কোনও ‘ব্যবস্থা’ নিচ্ছে কি না, তা-ও তাঁর অজানা।
শুধু দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। রাজ্য পুলিশের ডিজি, বর্ধমানের পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে দলের জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতাদেরও ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়েছিলেন মন্তেশ্বরের কুলুট গ্রামের তৃণমূল কর্মী মোজতবা আলি মণ্ডল। কিন্তু কোনও তরফেই সাড়াশব্দ মেলেনি।
যে নেতার বিরুদ্ধে মোজতবার অভিযোগ, তৃণমূলের সেই রাজ্য সহ-সভাপতি আবু আয়েশ মণ্ডল এক সময়ে সিপিএমের ‘দাপুটে’ নেতা ছিলেন। মন্তেশ্বরের বিধায়ক এবং কাটোয়ার সাংসদ থাকার পরে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তিনি সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু সিপিএমে থাকাকালীন বিরোধীদের উপরে যে নির্যাতন তিনি চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তার জল এখনও গড়াচ্ছে। মোজতবার অভিযোগ, আবু আয়েশের বিরুদ্ধে তেমনই একটি আক্রমণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁদের উপরে নতুন করে ‘সন্ত্রাস’ নামিয়ে আনা হচ্ছে। যদিও অভিযুক্ত নেতা তা উড়িয়ে দিয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে শিবির বদল করতে থাকা ‘নয়া’ তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে দলের ‘আদি’ সমর্থকদের বিরোধ চলছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই। এক সময়ে যাদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, এখন পটবদলের পরেও তাদের ‘মাতব্বরি’ মানতে পারছেন না শাসকদলের বহু পুরনো কর্মীই। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদের বিরুদ্ধে মোজতবাদের ক্ষোভের উৎসও কার্যত সেখানেই। তাঁদের পরিবারের ফইজুল মণ্ডল, ইকতিয়ার মণ্ডলদের আক্ষেপ, “এক সময়ের অত্যাচারি সিপিএম নেতাকে তৃণমূলে যোগ দিতে দেখে আমরা কালীঘাটে দিদির বাড়ির সামনে হত্যে দিয়েছিলাম। দিদি নির্দেশে মুকুলদা (রায়) বলেছিলেন, তোমাদের কোনও অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানাও। লিখিত ভাবে জানানোর পরেও কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে আবু আয়েশকেই মন্তেশ্বর বিধানসভা আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
নিজে দল ছেড়েও সিপিএমের ঘর বিশেষ ভাঙাতে না পারায় আবু আয়েশ অবশ্য জিততে পারেননি। কিন্তু তার পরেও তাঁর আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী গোলমাল পাকাচ্ছে বলে অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা চলছিল, সেটি অবশ্য ১৯৯৬ সালের। মোজতবাদের অভিযোগ, আত্মীয়দের জমির বিবাদে নাক গলিয়ে সে বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক আবু আয়েশ দলবল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হন। দরজা ভেঙে ঢুকে সকলকে মারধর করা হয়। গাছে বেঁধে পেটানো হয় পরিবারের কর্তা খাদেম আলি মণ্ডল-সহ কয়েক জনকে। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় কালনা আদালতে মামলা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের ২০ জুন বিধায়ক-সহ সব অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পেয়ে যান। মামলার পুনর্বিচার চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মোজতবারা। ২০০৯ সালে কালনা আদালতকে পুনর্বিচারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
বর্তমানে মামলাটি কালনা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু প্রায় দু’বছর কেটে গেলেও এক দিনও শুনানি হয়নি। ওই মামলায় যিনি সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, সেই অরূপ মণ্ডলের বক্তব্য, “মামলার বহু গুরুত্বপূর্ণ নথির খোঁজ মিলছে না। কী ভাবে ওই মামলার পুনর্বিচার শুরু করা সম্ভব, তা নিয়ে এখন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট আর হাইকোর্টের মধ্যে চিঠির আদানপ্রদান হচ্ছে।” এরই মধ্যে আবার নতুন করে হুমকি এবং হামলার অভিযোগও উঠছে। মোজতবার অভিযোগ, “আবু আয়েশ মণ্ডল তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর লোকেরা কালনা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মামলা তোলার জন্য আমাদের চাপ দিতে শুরু করে। তাদের প্রায় সকলেই সিপিএম থেকে আসা। মামলা না তুললে ধনে-প্রাণে মারার হুমকি দিতে থাকে তারা।”
শুধু হুমকিতেই বিষয়টি শেষ হয়নি। মোজতবার অভিযোগ, “গত ১১ অক্টোবর আমার দুই ভাই ফইজুল ও ইকতিয়ারকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় একদা সিপিএমের সঙ্গে থাকা কিছু দুষ্কৃতী। বাড়ি লক্ষ করে ইটবৃষ্টি করা হয়। পুলিশ কয়েক ঘণ্টা পরে দু’জনকে উদ্ধার করে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যেই বলে যায়, আমাদের নেতা আয়েশ সাহেবের বিরুদ্ধে রুজু মামলা না তুললে বাড়ির সবাইকে খুন করব।” মন্তেশ্বর থানা সূত্রে জানা যায়, ওই হামলায় অভিযুক্ত ৯ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিল। তবে তারা জামিনে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে। মোজতবাদের খেদ, দলের জেলা নেতাদেরও হুমকি এবং হামলার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি গ্রামাবাসীদের একাংশও। তবে গ্রামেরই মোরসেলিম আনসারি, শেখ ফইজুলদের আক্ষেপ, “এক সময়ে কংগ্রেস করার অপরাধেই ওদের উপরে হামলা চালাত সিপিএম। তৃণমূলে যোগ দিয়েও ওরা সেই একই অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। দলের কী বিচার!”
আবু আয়েশ মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমায় কখনও থানা-পুলিশ-আদালতের চক্করে পড়তে হয়নি। কুলুটের কিছু লোক আমার নামে সাজানো মামলা করেছিল। সেটাও বেশি দূর এগোয়নি।” পুনর্বিচার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “ভালই তো। আদালতেই ফের প্রমাণ হবে, অভিযোগ মিথ্যা।” রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক অবশ্য বলেন, “দু’পক্ষই আমাদের লোক। আবু আয়েশ মণ্ডলকে বলা হবে, বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। তিনি তা না করলে আইনমাফিক যা চলছে, তা-ই চলবে।” দলের ‘নয়া’ বনাম ‘আদি’ কর্মীদের বিরোধ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “কারা দলে আসছে, আমরা সে দিকে নজর রাখছি। কেউ কোনও খারাপ কাজ করে পার পাবে না।”
মোজতবারা অবশ্য শেষ পর্যম্ত ‘দিদি’র জবাবের অপেক্ষাতেই আছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.