সাত মাস আগে যখন দুর্গাপুরে এসেছিলেন, তখন বিরোধী নেত্রী। ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসানের পরে এ বার এলেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাজ্য রাজনীতিতে ‘পরিবর্তনের কাণ্ডারী’র কোনও পরিবর্তন হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১২টা নাগাদ দুর্গাপুর হাউসে এসে পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়। অত রাতেও গেটে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন। গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মমতা তাঁদের বাড়ি চলে যেতে বলেন। হাউস চত্বরে ঢুকে গাড়ি থেকে নামার পরেও ভিড়টা যায়নি দেখে তিনি ফের সটান হেঁটে আসছিলেন গেটের দিকে। কিন্তু বাদ সাধল এক অতি উৎসাহী মহিলার চিৎকার করে স্লোগান। বিরক্ত দলনেত্রী মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন হাউসের ভিতরে। |
শুক্রবার সকালে অবশ্য অন্য পরিস্থিতি। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। তার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে হাউসের সামনের রাস্তায় কড়া পুলিশি প্রহরা উপেক্ষা করে দাঁড়ান অনেকে। ভিড় বাড়তে বাড়তে এক সময়ে তা চলে যায় ভবনের গেটের সামনে। ভবন থেকে মমতাকে হেঁটে আসতে দেখেই পুলিশের কর্ডন ভেঙে যায়। মমতাকে ঘিরে ধরে জনতা। ভিড়ে মিশে যান মুখ্যমন্ত্রী। কোনও ক্রমে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে গাড়িতে নিয়ে যান।
বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারে এসেও দুর্গাপুর হাউসেই উঠেছিলেন মমতা। সে বারও একই রকম পরিস্থিতি হয়েছিল হাউসের বাইরে। তবে সে বার ভিড় পেরিয়ে গাড়িতে চড়ার পরে রাস্তায় উঠে ফের মানুষের হাতে আটক হয়ে যান তিনি। গাড়ি থামিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে হাতও মেলাতে হয়। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা ভিড় সরিয়ে গাড়ি যাওয়ার পথ করে দেন। এ বার অবশ্য সেই পরিস্থিতি হয়নি। পুলিশ আগে থেকে তৎপর থাকায় দু’পাশে জমা ভিড় রাস্তার উপরে আসতে পারেনি। ধীর গতিতে বেরিয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। |
সাত মাস আগে বিরোধী দলনেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন ওয়ারিয়ার সুখেন গড়াই, বিশ্বনাথ সিংহ, বি-জোনের অপর্ণা সাউ, দেবাশিস মিত্রেরা। শুক্রবারও গিয়েছিলেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের স্বগতোক্তি, “মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দিদিকে আর আগের মতো পাব কি না, সে নিয়ে চিন্তা ছিল। কিন্তু এতটুকুও বদলাননি তিনি। রয়ে গিয়েছেন আগের মতোই, সবার ধরাছোঁয়ার মধ্যেই।”
রাত তখন ৯টা ২০। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ফিরছিল বাঁকুড়া থেকে। দুর্গাপুর স্টেশন পেরিয়ে গ্যামন ব্রিজের মোড়ে আসতেই দেখা গেল সেই পরিচিত ছবিই। আলো-আঁধারের মধ্যেই দলনেত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন জনা তিরিশেক তৃণমূল কর্মী ও সমর্থক। কনভয়ের গতি গেল কমে। জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হাত ছুঁয়ে গেল কয়েক জনকে। এর মিনিট পনেরোর মধ্যেই কনভয় ঢুকে গেল দুর্গাপুর হাউসে। আজ, শনিবার সকালে এখান থেকেই বীরভূমের দিকে রওনা হয়ে যাবেন তিনি। |