|
|
|
|
|
শিশু চিকিৎসার জন্য বিশেষ ইউনিট,
সংশয় হাসপাতালেই
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
|
রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কয়েকটি ক্ষেত্রে একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় সেই বিতর্ক আবারও সামনে চলে এসেছে। জেলাগুলিতে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত বছর জুলাই মাসে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কলকাতার বিসিরায় হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও এই পরিষেবা চালু হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যে রাজ্যে আরও ৩৬টি এসএনসিইউ খোলা হবে। যে তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল। ইউনিটের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ এখানে। ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনিটটি চালু হওয়ার কথা। কিন্তু পরিষেবা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মূল কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব।
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রচুর। হুগলি জেলা তো বটেই বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া ও দুই মেদিনীপুর থেকেও বহু রোগী আসেন এখানে। শিশুবিভাগে থাকার কথা চার জন্য চিকিৎসকের। কিন্তু বাস্তবে আছেন মাত্র ১ জন। এই পরিকাঠামোয় বহির্বিভাগের চাপ সামলে প্রতিদিন অন্তর্বিভাগে গড়ে একশো শিশুরোগীর যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সুষ্ঠু পরিষেবার অভিযোগ তুলে রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাদানুবাদ প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাড়ে তিনশো শয্যাবিশিষ্ট আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৩৭ জন। আছেন মাত্র ২০ জন। তিন জন চিকিৎসক এসএনসিইউ-এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে গিয়েছেন। মহকুমা হাসপাতালের তিনতলায় সদ্যোজাত শিশুর চিকিৎসার জন্য এসএনসিইউ তৈরির কাজ শেষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই ইউনিটটি চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু হাসপাতালের যা সামগ্রিক পরিকাঠামো, তাতে এই পরিষেবা কতটা সুষ্ঠু ভাবে দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের মধ্যেও।
হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “শিশুমৃত্যুর হার কমাতে প্রকল্পটি খুবই ভাল। টাকারও অভাব হয়নি। কিন্তু প্রকল্পটির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-সহ অন্যান্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব আছে। এই পরিস্থিতিতে যথাযথ পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।” প্রসঙ্গত, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে গড়ে মাসে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ৬। বছর দু’য়েক আগে এই সংখ্যাটা ছিল ৮। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিষেবা দেওয়াতেই শিশুমৃত্যুর হার কমছে বলে মনে করেন সুপার।
নতুন ইউনিট চালু করার ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তড়িঘড়ি যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলের একাংশ সন্তুষ্ট নন। তাঁদের বক্তব্য, মাত্র চার সপ্তাহে প্রশিক্ষণ কী ভাবে সম্ভব? অন্তত এক বছরের প্রশিক্ষণ ছিল। আবার রোগীকে ‘রেফার’ করা যাবে না বলা হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এত দিন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জন্মগত সমস্যায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলে প্রধানত ‘রেফার’ করা হত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব থেকে যাওয়ায় ইউনিটটি চালু হলেও সেই সব সমস্যা কতটা মিটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যে তিন জনকে একমাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের এক জন শিশু বিশেষজ্ঞ, এক জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মেডিক্যাল অফিসার, এক জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। আরএমও হিসাবে এঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এঁরাই হবেন ইউনিটের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত। মহকুমা হাসপাতালের বাকি শিশু চিকিৎসকেরাই ‘কনসাল্ট্যান্ট’ হিসাবে দিনে দু’বার রাউন্ড দেবেন। হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “খুব শীঘ্রই ইউনিটটি চালু করার নির্দেশ থাকায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমস্যা যে আপাতত থেকেই যাচ্ছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন তিনি।
এসএনসিইউ চালুর ব্যাপারে পূর্বতন বাম সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আরামবাগ হাসপাতালের এর নির্মাণ খাতে বরাদ্দ হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। যার অনুমোদন মেলে ২০১০ সালের ১ নভেম্বর। চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়ে নির্মাণের কাজ শেষ করেছে পূর্ত (নির্মাণ) দফতর। পৃথক বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য ১১ কেভির একটি ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। সুপার জানান, ৬০ জন শিশুকে এই ইউনিটে বিভিন্ন পর্যায়ে রাখা যাবে। মায়েদের থাকারও ব্যবস্থা থাকছে। এ দিকে, তিন জন চিকিৎসককে নতুন ইউনিটের কাজে ব্যবহার করায় হাসপাতালের সার্বিক পরিষেবা নিয়েও সমস্যা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা সুপারের। বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিএমওএইচ। |
|
|
|
|
|