গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মহকুমা হাসপাতাল
তবু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে
বঞ্চিত কাকদ্বীপের মানুষ

হরের সরকারি হাসপাতালগুলির বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে সম্প্রতি যে ভাবে হইচই হচ্ছে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা মহকুমা হাসপাতালগুলিতেও সেই একই ছবি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা---চারটি ব্লক নয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা। অধিকাংশ ব্লকই নদী-নালা-জঙ্গল বেষ্টিত। এই সব দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য ২০০৬ সালে কাকদ্বীপ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে মহকুমা হাসপতালে রূপান্তরিত করা হয়। মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পরে এই সব এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন তাঁরা আগের চেয়ে অন্তত কিছুটা উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। রাত বিরেতে রোগী নিয়ে তঁদের আর প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরের ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হবে না। কিন্তু তাঁদের সেই আশা আর পূরণ হয়নি। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোয় বন্দি তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা। এখনও প্রতিনিয়ত তাঁদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালের।
কিন্তু এই অবস্থা কেন? কেন মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পরেও হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে উঠে নানা অভিযোগ?
ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ার চিহ্ন।-নিজস্ব চিত্র।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে উন্নত পরিকাঠামোর প্রয়োজন, কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে তা নেই বললেই চলে। ২০০৬ সালে মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও আজ পর্যন্ত এখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়নি। অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় কোনও রোগী এলে তাঁকে পাঠিয়ে দিতে হয় ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের জন্য কোনও চিকিৎসক নেই। এ ক্ষেত্রেও বড় কোনও ঘটনায় রোগীকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে রেফার করা হয়। বাসপাতালে কোনও ওয়ার্ড মাস্টার নেই। নেই স্টোরকিপার। ১০০ শয্যা থাকলেও রোগীর চাপ এত বেশি যে মেঝেয় ঠাঁই নিতে হয়। সুইপারের অভাবে হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র জমে থাকে আবর্জনা।
কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে পরিকাঠামোর চিত্রটি এ রকম মেডিক্যাল অফিসার থাকার কতা ২০ জন। সে জায়গায় আছেন ১১ জন। জেনারেল ডিউটির মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ৯ জন। আছেন ৫ জন। চতুর্থশ্রেণির কর্মী ৩৯ জনের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ১০ জন। হাসপাতালে একটিই অ্যাম্বুল্যান্স। ফলে সেটি কাজে বেরিয়ে গেলে ফের প্রয়োজনে রোগীরা আর অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধা পান না। ওষুধপত্র থেকে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রেও রয়েছে সমস্যা।
হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও রোগীদের ক্ষোভের শেষ নেই। হাসপাতালের চারধারে কোনও প্রাচীর না থাকায় রাতের অন্ধকারে অসামাজিক কার্যকলাপের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। বেহাল নিকাশির জন্য সামান্য বৃষ্টিতেই হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় জল দাঁড়িয়ে যায়।
এতকিছুর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিত্য প্রায় চার-পাঁচশো রোগী হাসপাতালে ভিড় করেন। হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার তনুশ্রী দাস বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে। তবে আমি এবং সুপার তার মধ্যেই চেষ্টা করি রোগীদের যতটা চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই রোগীকে অন্যত্র পাঠাতে হয়।” হাসপাতালের নানা সমস্যার ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে বলে জানালেন সুপার উজ্জ্বলবিকাশ মণ্ডল। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকায় আরও ২০০ শয্যার ব্যবস্থা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে নতুন ভবন নির্মাণ করে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। সেইসঙ্গে চিকিৎসকও পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.