বরদাস্ত করবে না স্বাস্থ্য দফতর
ডাক্তার ‘কম’, ছুটির দিন বন্ধ বাঙুরের ব্লাড ব্যাঙ্ক
পাঁচ জন চিকিৎসক আর আট জন টেকনিশিয়ান নিয়ে সপ্তাহে সাত দিন ব্লাড ব্যাঙ্ক খুলে রাখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। তাই জরুরি পরিষেবা হিসেবে যে ব্লাড ব্যাঙ্ক ১২ মাস ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকার কথা, সেটি প্রতি রবিবার ও ছুটির দিন তালাবন্ধ রাখেন তাঁরা। ওই সব দিনে কোনও কারণে রক্তের প্রয়োজন হলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দিশাহারা হতে হয় মানুষকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তা মেনে নেওয়ায় বহু দিন ধরে এমনটাই চলে আসছিল এম আর বাঙুর হাসপাতালে। তবে, সেটা আর বরদাস্ত করতে রাজি নন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি হচ্ছে দেখেও কেন স্বাস্থ্য দফতরে তা জানিয়ে চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান চাওয়া হয়নি? কেন এত দিন সব মেনে নিয়ে চুপ করে ছিলেন কর্তৃপক্ষ?
স্বয়ং স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাকের প্রশ্ন, “এত দিন ধরে কি বাঙুর কর্তৃপক্ষ ঘুমোচ্ছিলেন? কেন ডাক্তার বা টেকনিশিয়ান চাওয়া হয়নি? কেন রবিবার ও ছুটির দিন ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার ব্যাপারটি তাঁরা মেনে নিয়েছেন?” এম আর বাঙুরে ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান অনিতা চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য খুব স্পষ্ট। তিনি বলেন, “এত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ সামাল দেওয়া অসম্ভব। তার উপরে রবিবার রক্তদান শিবিরে যেতে হয়। লোক না বাড়ালে রবিবার ও ছুটির দিনগুলিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা রাখা যাবে না।” অনিতাদেবী আরও বলেন, “আশপাশে ন্যাশনাল মেডিক্যাল-সহ অনেক হাসপাতাল আছে। রবিবার বা ছুটির দিনে রক্তের দরকার পড়লে লোকে সেখানে যেতে পারেন। খুব প্রয়োজন পড়লে টেলিফোনে আমাদের ডেকে পাঠাতে হবে।”
চিকিৎসকদের এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যকর্তারা উদাহরণ দিয়ে বলছেন, হাওড়া জেলা হাসপাতাল বা উলুবেড়িয়া জেলা হাসপাতালে সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তিন জন বা দু’জন চিকিৎসককে দিয়ে তারা সাত দিন ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা রাখছে। সেখানে প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে। তা হলে বাঙুর তা করবে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা ও হাসপাতালের কর্মসংস্কৃতির উন্নতির কথা বলেছেন। কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশ যে কর্মবিমুখতার পরম্পরা ছাড়তে নারাজ, এম আর বাঙুরের ঘটনায় তা আরও এক বার প্রমাণিত হল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
নতুন দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক গত ১ নভেম্বর আচমকা এম আর বাঙুর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর কথায়, “খাতাপত্র খুঁজে আমরা দেখেছি, একাধিক রবিবার কোনও রক্তদান শিবির না-থাকা সত্ত্বেও ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলেনি।” তাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হলে চিকিৎসকেরা তার লিখিত উত্তরে জানান, ‘‘চিকিৎসক ও কর্মী না বাড়ালে যেমন চলছে, তেমনই চলবে!” এতে ক্ষুব্ধ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শিখা অধিকারী বলেন, “এটা তো বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। যে ভাবে ওঁরা লিখেছেন, এ তো সাংঘাতিক! এ সব বরদাস্ত করা হবে না। জেলাশাসকের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এত কিছুর পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু চিকিৎসকদের প্রতি কিছুটা নরম মনোভাব দেখানোর পক্ষে। সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক জানান, তিনি এখনই কড়া শাস্তির পথে না গিয়ে চিকিৎসকদের ‘বুঝিয়ে-সুঝিয়ে’ রাজি করাতে চান। এর জন্য সাত দিন সময়ও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বোঝালেই কাজ হবে বলে যদি সুপার নিশ্চিত হন, তা হলে এত দিন তিনি সে চেষ্টা করেননি কেন? আর বোঝালেই যদি চিকিৎসকেরা রবিবার ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলেন, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কম থাকার কারণে ব্লাড ব্যাঙ্ক খুলতে না পারার যুক্তিও তো ধোপে টিকবে না।
তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস্ ফোরাম’-এর তরফে সভাপতি নিমাই নাথ সেই কারণেই বলছেন, “ডাক্তার না থাকাটা আসলে অজুহাত। ইচ্ছা থাকলেই কাজ করা যায়। ফাঁকিবাজি ধরা পড়ে যাওয়াতেই ডাক্তারের অভাবের কথা শোনানো হচ্ছে।” বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস্’-ও এ ব্যাপারে তৃণমূলপন্থীদের সঙ্গে একমত। তারাও বলছে, “সরকারি নির্দেশ যখন আছে, তখন ব্লাড ব্যাঙ্ক কোনও দিনই বন্ধ রাখা যায় না। নিজেদের সমস্যাটা ডাক্তারেরা স্বাস্থ্য ভবনে জানাতে পারেন। কিন্তু যত দিন না তার সুরাহা হচ্ছে, কোনও না কোনও ভাবে তাঁদের জরুরি পরিষেবা দিতেই হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.