|
|
|
|
প্রতারণা মামলা |
টাকা ফেরতের আবেদন অর্থমন্ত্রীর দ্বারস্থ শতাধিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
অর্থলগ্নি সংস্থায় আটকে থাকা টাকা উদ্ধারে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চান শিলিগুড়ির শতাধিক বাসিন্দা। একাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে গোটা ঘটনা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তাঁরা জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের মাধ্যমে মহাকরণে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করারও চেষ্টা করবেন। গত বছরের জুন মাসে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা শিলিগুড়িতে কয়েক মাসে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-সহ কয়েকশো মানুষ সেখানে টাকা বিনিয়োগ করেন। ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য সঞ্চয়, ব্যাঙ্কের ফিক্সড ভেঙেও ওই সংস্থায় বিনিয়োগ করেন। মেয়াদ ফুরানোর পরে অধিকাংশ লোকই টাকা পাননি। এই ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হলে পুলিশ ইতিমধ্যেই মুম্বই থেকে ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছাড়াও শিলিগুড়ি থেকে ৩ জনকে ধরে। ধৃতদের কাছ থেকে বিলাসবহুল গাড়ি, মোটর বাইক আটক করা হয়েছে। কিন্তু টাকা ফেরতের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ফলে অবসরপ্রাপ্তরা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “রাজ্যের অর্থমন্ত্রী নিজেই এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করুন এবং প্রতারিতদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করুন।” এই ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত আর্জি জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মল চক্রবর্তী ওই সংস্থায় প্রায় বিনিয়োগ করেছিলেন। অবসরের পরে পাওয়া টাকারই একটি অংশ বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, “খুব পরিচিত এক ব্যক্তির আশ্বাসে টাকা বিনিয়োগ করি। তখন বুঝিনি যে কমিশনের জন্য তিনি এ ভাবে ফাঁদে ফেলে দেবেন। আমার মতো আরও অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। সকলে মিলে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।” শিলিগুড়ি সূর্যসেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ক্ষীরোদ দামও বিনিয়োগ করেছিলেন। একই এজেন্টের মাধ্যমে তিনিও বিনিয়োগ করেন। এখন ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “এমন হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। টাকাটা ফেরতের ব্যবস্থা না-হলে বিপদেই পড়তে হবে। সেই জন্যই অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার।” চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটি টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করলে বিষয়টি পুলিশের নজরে পড়ে। কয়েকজন লগ্নিকারী শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ জানান। কিন্তু তদন্তের কাজ খুব বেশি এগোয়নি। সম্প্রতি পুলিশের তৎপরতায় ওই ৪ অভিযুক্ত ধরা পড়ে। ধৃতদের মধ্যে মুম্বইয়ের ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশা গণেশ সাহেবরাম চৌধুরী ছাড়াও রয়েছে শিলিগুড়ির ৩ এজেন্ট রাজীব ভদ্র, রণবীর দাস এবং দেবব্রত পাল। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “মুম্বইয়ের ওই সংস্থার একজনকে ধরা হয়েছে। অন্যদের খোঁজ চলছে। তারাই মূল অপরাধী। তবে যাঁরা কমিশনের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে এই সংস্থায় বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তারাও অপরাধী। এমন বেশ কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। কাউকে ছাড়া হবে না।” কমিশন এজেন্টদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি সম্পত্তির হদিশও করছে পুলিশ। এই ব্যাপারে শিলিগুড়ির নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাঙ্ক প্রতিদিনই হানা দিচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা। পাশাপাশি জেরা করা হচ্ছে ধৃতদেরও। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “আদালতের অনুমতি নিয়েই কমিশন এজেন্টদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। আইনের পরিধি নিয়েও আলোচনা চলছে।” এ বার রাজ্য অর্থ দফতর তদন্তের কাজে হস্তক্ষেপ করলে অর্থ ফেরতের সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্তরা। শিলিগুড়ির এক রেলকর্মী বলেন, “ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। আরও টাকার দরকার ছিল। খুব পরিচিত এক ব্যক্তি বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়ায় লোভ সামলাতে পারিনি। এখন টাকা ফেরত না-পেলে ছেলের পড়াশোনার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|