এনজেপি-র ঘটনায় ধৃত ৫
বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’, ক্ষোভ চরমে
রযাত্রী হিসেবে আসা দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদেরই গুলিতে এলাকার এক যুবকের প্রাণ গিয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আর এক জন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। রবিবার রাতের ঘটনায় তুমুল ক্ষিপ্ত এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকার মানুষ। তবে স্রেফ দুষ্কৃতী-হামলা তাঁদের ক্ষোভের কারণ নয়। এলাকাবাসীর বক্তব্য, “এমনিতেই স্থানীয় সমাজবিরোধীরা যথেষ্ট উৎপাত করে। কিন্তু রবিবারের ঘটনায় যারা জড়িত, তারা বহিরাগত। আমরা বহু বার পুলিশকে বলেছি, এলাকার গুন্ডাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন। তাতে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও ঠেকানো যাবে। কিন্তু পুলিশ সেই নিষ্ক্রিয়ই। কাজের কাজ যে হয়নি, তার প্রমাণ মিলল রবিবার।”
এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু অনেক এলাকাবাসীরই অভিযোগ, ওই এলাকায় বিদেশি পণ্য চোরাচালান, গাড়ি চুরির মতো কাজে এলাকার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বাইরের কিছু সমাজবিরোধীর নিয়মিত লেনদেন হয়। রাত বাড়লে তাদের আসর জমে।
রবিবার এনজেপি স্টেশন লাগোয়া শহিদ কলোনির বাসিন্দা দীনেশ রায়ের এক আত্মীয়ার সঙ্গে রায়গঞ্জের গাড়ির চালক নিতাই বর্মনের বিয়ে হয়। পুলিশের দাবি, সেই বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে আসা রায়গঞ্জের কাশীবাটির বাসিন্দা পলাশ বর্মন এবং গৌর বর্মন পুরনো দুষ্কৃতী। পলাশ ও গৌরের বিরুদ্ধে ডালখোলা জিআরপি-তে একটি খুনের মামলা চলছে। পলাশ ওই মামলায় জামিনে রয়েছে। গৌর এ পর্যন্ত পুলিশের খাতায় পলাতক ছিল। পক্ষান্তরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকায় ব্যবসায়ী বলে পরিচিত দীনেশ রায়ের বিরুদ্ধেও সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে শহিদ কলোনি এলাকায় নিয়মিত ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণ’ করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশও সে কথা জানে। ফলে, দীনেশের আত্মীয়ার বিয়েতে দুষ্কৃতীদের নিমন্ত্রণ থাকাটা অস্বাভাবিক বলেমনে করার উপায় নেই। শুধু স্থানীয় পুলিশ একটু ‘সক্রিয়’ থাকলেই রবিবার রাতের ঘটনা এড়ানো যেত।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন প্রসেনজিতের মা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ঠিক কী হয়েছিল ওই রাতে? পুলিশ সূত্রের খবর, বরযাত্রী হিসেবে আসা পলাশ, গৌর, রায়গঞ্জের কাশীবাটির বাসিন্দা সত্যজিৎ দে ওরফে কার্তিক এবং রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লির বাসিন্দা অভিজিৎ বেরা ওরফে রাজেশ (গাড়ির চালক) একটি গাড়ি নিয়ে শহিদ কলোনি এলাকায় রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে জোরে গান চালিয়ে নাচানাচি শুরু করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের মধ্যে দু’জন রাস্তায় মদের বোতল হাতে চিৎকার করছিল। স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু বর্মন দুষ্কৃতীদের বিয়েবাড়িতে চলে যাওয়ার অনুরোধ করলে বচসা বাধে। আচমকা এক দুষ্কৃতী মন্টুবাবুকে গুলি করে। তিনি লুটিয়ে পড়েন। বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে পালাতে যায়। কিন্তু, সামনে থেকে আর একটি গাড়ি আসায় তারা থমকায়। তখন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী প্রসেনজিৎ দাস গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে এলাকাবাসী গৌরকে গাড়ি থেকে টেনে নামান। শুরু হয় মার। অন্যেরা পালায়।
প্রসেনজিৎ দাস
পুলিশ সূত্রের খবর, পলাতকদের ধরা হয়েছে রায়গঞ্জের করণদিঘি থেকে। তাদের কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল এবং ৪ রাউন্ড গুলিও মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে করণদিঘির দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় একাধিক গুলি চালানোর পরে দুষ্কৃতীরা পুলিশের নজর এড়িয়ে অতটা পথ গেল কী করে? জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেনের জবাব, “তদন্ত চলছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সদ্য বিবাহিত নিতাই বর্মন-সহ মোট ৫ জনকে ধরা হয়েছে। এক জন গণপ্রহারে জখম হওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের জেরা করা হচ্ছে। এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ-পিকেটও বসানো হয়েছে।”
যাঁর আত্মীয়ার বিয়ে ঘিরে এই কাণ্ড, সেই দীনেশবাবুকেও পুলিশ জেরা করছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিনি তাদের কাছে দাবি করেছেন, বরযাত্রীদের মধ্যে দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলে জানতেন না। গ্রেফতার হওয়া বর, নিতাই বর্মনের বক্তব্য, “বরযাত্রী হিসেবে বন্ধুদের বলেছিলাম। ওরা যে সঙ্গে পিস্তল রাখে, জানতাম না।”
নিহত প্রসেনজিতের বাবা পরেশবাবু এ দিন বলেন, “এই এলাকায় দুষ্কৃতী দমনে পুলিশ-প্রশাসন গোড়া থেকে কঠোর মনোভাব দেখালে বাইরের গুন্ডারা আমার ছেলেটাকে মারার মতো সাহস পেত না।”
ঘটনায় বিরক্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “পুলিশ সুপারকে বাসিন্দাদের ক্ষোভ-অভিযোগের ব্যাপারে সবই জানিয়েছি। আশা করি, এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পুলিশ সতর্ক থাকবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.