গত চার বছরে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে ১৬৫টি অভিযোগ।
পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে ৯৩টিতে।
আদালতের চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছেছে মাত্র দু’টো!
তফসিলি জাতি-উপজাতিদের উপরে ‘অত্যাচার’ সংক্রান্ত মামলাগুলোর হাল যাচাই করতে গিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর।
তফসিলিদের জন্য গঠিত জাতীয় কমিশনের উদ্যোগে গত ২৪ অক্টোবর দিল্লিতে এক আলোচনাসভা হওয়ার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে ১৫ ডিসেম্বর হবে বলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে চিঠি এসেছে। অনুষ্ঠানে থাকবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। মহাকরণ সূত্রের খবর: কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে রাজ্য সরকারের কাছে এ-ও জানতে চাওয়া হয়েছে, তফসিলি জাতি-উপজাতিদের উপরে ‘অত্যাচার’ সংক্রান্ত মামলাগুলো কী অবস্থায় আছে।
আর তখনই খোঁজ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র-কর্তাদের হাতে এসেছে এই খতিয়ান। এ হেন শোচনীয় অবস্থা কেন?
এক পুলিশ-কর্তা বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যে আগের সরকার তেমন সক্রিয় ছিল না, সংশ্লিষ্ট তথ্যই তার প্রমাণ। ৯৩টি মামলায় চার্জশিট হয়ে গেলেও শুনানি হয়েছে মাত্র দু’টোর একটা মামলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার, অন্যটা কার্শিয়াঙের।” পুলিশ অবশ্য যে হিসেব দিচ্ছে, সে সবই বাম আমলের, ২০০৭-এর জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত।
তফসিলি নিগ্রহের মামলা তদন্তের জন্য সিআইডি-র বিশেষ সেল রয়েছে। যে সব জেলা থেকে তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে, সেগুলো হল: বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও পশ্চিম মেদিনীপুর। মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে সিআইডি-র এডিজি (২) ত্যাগরাজু সম্প্রতি একাধিক জেলার পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের কর্তারাও ছিলেন। দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ যে তথ্য দিচ্ছে, তফসিলি জাতি- উপজাতির মানুষের উপরে তার চেয়ে অনেক বেশি অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে। গরিব হওয়ায় ওঁদের অধিকাংশ পুলিশের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন না। গেলেও বহু ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ নেয় না।” এমন ক্ষেত্রে ‘অত্যাচারিত’দের কী করা উচিত?
উপেনবাবু জানাচ্ছেন, অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের নিজস্ব একটি শাখা রয়েছে। যার মূল কাজই হল, পিছিয়ে পড়া মানুষের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা। পুলিশ অভিযোগ না-নিলে ওঁরা যাতে ওই শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে জেলায় জেলায় সচেতনতা শিবির করা হবে। এতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও কাজে লাগানো হবে। উপেনবাবুর কথায়, “একটা ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরে অনলাইনেও অভিযোগ দায়ের করা যাবে।”
কিন্তু মামলাগুলো তো আদালত পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেই না?
রাজ্য আইন ও বিচার দফতরের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতি- উপজাতিদের উপরে অত্যাচার সংক্রান্ত মামলা তুলনায় অনেক কম। যে কারণে অন্য রাজ্যে বিশেষ আদালত থাকলেও এখানে তার দরকার পড়েনি। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতকেই সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করব।” |