আঠারো মাসে বছর!
রাজ্য সরকারের ‘অকেজো’ চেহারা বদলে দেওয়ার জন্য কড়া-নরম, কোনও স্বর ব্যবহারেই কসুর করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে যে লালগোলার ভাঙন ধ্বস্ত গ্রামগুলিকে ভরসা জোগানো যায়নি, সোমবার তা মালুম হল।
স্থানীয় প্রশাসনের ঢিলেমি কিংবা ‘উদাসীন ভাবভঙ্গি’ দেখে সরকারি দফতরের উপরে ভরসা না করে ভাঙন ঠেকাতে লালগোলার ময়া এলাকার বাসিন্দারা এ দিন তাই অরন্ধন, উপোষের পাশাপাশি সেরে ফেললেন নদী-পুজোও। পুজো শেষে ‘ভক্তি ভরে’ গ্রাম বাঁচাতে তাঁরা উত্তাল পদ্মায় ঢাললেন কয়েক সের দুধ। বিশ্বাস, এই ‘বিশেষ পুজো’য় পদ্মা সন্তুষ্ট হলে এ যাত্রা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ময়া গ্রাম। গ্রামবাসীদের স্পষ্ট কথা, ‘সরকার তো কিছু করল না, এখন দেবী পদ্মাই ভরসা!’
প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস ময়ায়। ভাঙন ঠেকাতে রবিবার রাতে ওই গ্রামের পুরোহিত দিলীপ উপাধ্যায় পরামর্শ দিয়েছিলেন পুজোর। এ দিন সকাল থেকেই গোটা গ্রামে ছিল অরন্ধন। উপোষী ছিলেন মহিলারা। পুজো শেষে পদ্মায় দুধ ঢেলে প্রসাদ মুখে দিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাতী মালাকার বলেন, “ভাঙন এক সময়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। পাথর দিয়ে স্পার দেওয়ায় ভেবেছিলাম বোধহয় বেঁচে গেলাম। কিন্তু গত রবিবার স্পার ধুয়ে দেয় পদ্মা। সরকারের তরফে জেলাশাসক, বিডিও এসে আশ্বাস দিয়ে গেলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে কাজ শুরুর। কিন্তু কোথায় কি? তাই বাধ্য হয়েই পুজোর আয়োজন।”গ্রামেরই মহিলা অনিতা সাহার ক্ষোভ, “আট দিন কেটে গিয়েছে। তবু সে ভাবে ভাঙন রোধে কোনও কাজই শুরু হয়নি ময়ায়। সরকারের উপর ভরসা তাই কমেছে গ্রামবাসীদের। তাই পুরোহিতের বিধান মেনেই পুজো শেষে মন্দিরের অর্পিত দুধ ঢেলেছি পদ্মায়।”গ্রামেরই শিক্ষক সৌমেন মালাকারের মতে, “মানুষ যখন সব ভরসার জায়গাগুলো হারিয়ে ফেলে, তখনই ঈশ্বরকে স্মরণ করে তার উপর ভরসা রাখে। এ ক্ষেত্রেও সরকারের কাজে ও কথায় আস্থা হারিয়েছে গ্রামবাসীরা। তাই এভাবে পুজোর আয়োজন।”
গ্রামেরই এক যুবক শান্তনু দাস বলেন, “ময়ার যা পরিস্থিতি তাতে ভাঙন নিয়ে সবাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। গ্রামবাসীরা বেশির ভাগই ভাঙনের ফলে একাধিকবার উদ্বাস্তু হয়েছেন। ভাঙনের আতঙ্কে ঘুম গিয়েছে। মানুষ রাত্রে নদী-পাড়ে পাহারা দিচ্ছেন। অসহায়তা গ্রাস করেছে তাদের। তাই ভাঙন রোধের কাজে ভরসা হারিয়েছেন তারা। ঈশ্বরে বিশ্বাস থেকেই পুজোপাঠে ব্রতী হয়েছে।” লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের সাজাহান আলি। তিনি বলেন, “মজুর পাওয়া নিয়ে সঙ্কটের জন্যই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।” সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ শাখার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তুষার অধিকারির মতে, “ভরসা হারাবার কিছু হয়নি। কাজ শুরু হয়েছে।” এ দিকে ভাঙনগ্রস্ত ৫৬ টি পরিবারকে ত্রাণ সাহায্য করতে এ দিন উদ্যোগী হল লালগোলা শেখালিপুর হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ভাঙনে সর্বহারা মানুষের মধ্যে তাঁরা চাল, আলু ইত্যাদি বিলি করেন। |