অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীরা চাইলেও সিবিআইয়ের দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখতে রাজি নয় সরকার। সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই লোকপাল বিল নিয়ে স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হবে সংসদে। তার পর বর্তমান বিলটি সংশোধন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে নিয়েই দ্রুত সংসদে পেশ করা হবে। কিন্তু সংশোধিত বিলে কোনও ভাবেই সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখা হবে না।
গত সপ্তাহে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে লোকপাল বিল নিয়ে মত জানাতে এসে অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীরা ফের দাবি করেন, সিবিআইয়ের দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনটি তুলে দিতে হবে।
অণ্ণাদের যুক্তি, একই গ্রামে যেমন দুটি থানা থাকতে পারে না, তেমনই দুর্নীতি-দমনের জন্য দু’টি পৃথক সংস্থা থাকতে পারে না। স্বাভাবিক ভাবেই সরকার দাবি না মানলে ফের টিম অণ্ণার সঙ্গে বিরোধের ক্ষেত্র তৈরি হবে। তবে সরকারের এক শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী আজ বলেন, “কংগ্রেস হাইকমান্ডের স্পষ্ট নির্দেশ, অণ্ণারা কী বলছেন তা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হবে না। কারণ অণ্ণার সহযোগীদের গতিবিধি সন্দেহজনক। সরকার যাই করুক না কেন, তাঁরা সমালোচনা করবেন এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার চালাবেন।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, আলোচনার গোড়ার দিকে সিবিআইয়ের দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত কেন পিছু হটছে সরকার? জবাবে ওই মন্ত্রী বলেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রশান্ত ভূষণের মতো অণ্ণা-সহযোগীদের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। সিবিআইয়ের দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় আনলে কখনও বফর্স কাণ্ডের নথি বের করে তাঁরা গোল পাকাবেন।
কখনও বা কফিন কেলেঙ্কারির নথি বের করবেন। অথচ এই সব মামলা সিবিআই তদন্তের পর আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে বিজেপি-সহ বাকি বিরোধীদের পাশে পাবেন বলে আশা করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে সিবিআই নিজেও। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সিবিআই কর্তারা জানিয়েছেন, একটা নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গড়ে তুলতে কয়েক দশক লেগে যায়। সন্ত্রাসবাদের ঘটনা নিয়ে তদন্তের অধিকার আগেই সিবিআইয়ের হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পর যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়, তা হলে সিবিআই কি কেবল খুন-খারাপির তদন্ত করবে?
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকপালের আওতায় না রেখে সরকার সিবিআইকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। প্রস্তাব রয়েছে, লোকপাল নির্দেশ না দিলেও কোনও দুর্নীতির ঘটনায় নিজে থেকেই তদন্ত করার ক্ষমতা থাকুক সিবিআইয়ের। আবার লোকপাল কোনও দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলেই যে তারা তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে, তা-ও নয়।
বরং বিষয়টি ততটা গুরুত্বপূর্ণ কিনা বা আদৌ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সিবিআই। কোনও মতেই সিবিআইয়ের মতো সংস্থার অপব্যবহার যাতে না হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। |