উন্নত মানের প্রযুক্তি লাগানো হয়েছে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের দাবি।
আর এমনই ‘আধুনিক’ সেই প্রযুক্তি যে, খারাপ হলে মেরামত করার লোক পাওয়া মুশকিল!
এবং তাতেই বিপত্তি। মাঝরাতে ভুগলেন কয়েক হাজার যাত্রী।
রবিবার রাতে হাওড়া-খড়্গপুর শাখার ভোগপুর স্টেশনে যাবতীয় ইন্টারলক প্রযুক্তি খারাপ হয়ে যাওয়ায় ছ’ঘণ্টা সিগন্যাল বন্ধ থাকে। ফলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত হাওড়া-মুম্বই, হাওড়া-পুরী এবং হাওড়া-চেন্নাই লাইনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সব মিলিয়ে আপ ও ডাউন লাইনে মোট ন’টি মেল ও এক্সপ্রেস এবং ১২টি লোকাল ট্রেন গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি দেরিতে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে আপ ফালুকনুমা, জগন্নাথ, পুরী এক্সপ্রেস; ডাউন রূপসী বাংলা, কাণ্ডারী, জনশতাব্দী এক্সপ্রেস এবং আরও তিনটি মেল ও এক্সপ্রেস। এর মধ্যে কাণ্ডারী এক্সপ্রেস হাওড়ায় এসেছে প্রায় চার ঘণ্টা দেরিতে।
মাওবাদী উপদ্রবে খড়্গপুরের পরে এমনিতেই রাতের সব যাত্রী-ট্রেন চলাচল দেড় বছর ধরে বন্ধ। তাই হাওড়ায় পৌঁছনোর আগে ট্রেনগুলি আচমকা মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা প্রথমে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক পরে অবশ্য আসল কারণ জানতে পেরে সেই আশঙ্কা দূর হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, রেল-কর্তৃপক্ষ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারে যাত্রীদের কিছুই জানাননি।
যাত্রীদের কেউ কেউ অত রাতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন থেকে লাইনে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, সিগন্যালে যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এই বিষয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি হাওড়া স্টেশনেও। ফলে যে-সব যাত্রীর বাড়ির লোকজন তাঁদের আনতে স্টেশনে গিয়েছিলেন, তাঁরাও অধৈর্য হয়ে বারবার অনুসন্ধান অফিসে যোগাযোগ করতে থাকেন। কিন্তু কখন সিগন্যাল সারাই হবে, তা অনিশ্চিত বলেই তাঁদেরও ট্রেনের ঠিক সময় জানানো যায়নি।
সিগন্যাল ব্যবস্থার শুরুতে ছিল হাতে টানা লিভার প্রযুক্তি। তার বেশ কিছু বছর পরে আসে ‘রুট রিলে ইন্টারলক’ বা আরআরআই সিস্টেম। তার পরে রিলের বদলে নতুন প্রযুক্তি এল ‘মাইক্রো প্রসেসার’। এই প্রযুক্তি সব জোনেই আস্তে আস্তে চালু করার কাজ শুরু হয়েছে বলে রেল বোর্ড সূত্রের খবর। রেল ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, এই প্রযুক্তিতে সিগন্যাল ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মোট ৩০৫টি স্টেশনের মধ্যে অবশ্য এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫২টি স্টেশনে এই প্রযুক্তি বসানো হয়েছে। এবং তারই একটিতে গোলমালের ফলে রবিবার রাতের এই দুর্ভোগ।
যন্ত্র চললেই তাতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকলে তবেই কম সময়ে সেই বিভ্রাট সারিয়ে ফেলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অভাবে সেটা করা যায়নি। রেলকর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না-থাকায় মেরামতিতে বিস্তর সময় লেগেছে। এই নতুন প্রযুক্তির মান নিয়ে আপাতত কোনও সংশয় নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, নয়া প্রযুক্তি লাগানোর আগে সংশ্লিষ্ট রেলকর্মীদের (সিগন্যাল ও টেলি-যোগাযোগ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি কেন?
ট্রেনের দেরির কথা স্বীকার করে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “ট্রেনের দেরি হয়েছে ঠিকই। আসলে প্রযুক্তিটা নতুন বলে সড়গড় হতে কিছুটা সময় লাগছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেই, এ কথা ঠিক নয়। সব কর্মীর হয়তো এখনও প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি। তবে অনেকেরই প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে।”
যে-সংস্থা ওই আধুনিক প্রযুক্তি লাগানোর দায়িত্বে আছে, খড়্গপুর থেকে তাদের কর্মীদের আসার কথা। কিন্তু পথে একটি দুর্ঘটনার জেরে তাঁরাও আটকে পড়েন। ফলে ট্রেন স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লেগে যায়। ওই কর্মীরা এসে মেরামতিতে হাত লাগানোয় রাত ১টা নাগাদ অকেজো সিগন্যাল প্যানেল বোর্ড ফের চালু করা হয়। |