রাতারাতি ভোলবদল, ফের পাশাপাশি মোদী-আডবাণী
ঙ্ঘকে বার্তা দিতেই গুজরাত সফরের শেষ দিনে ‘গুরু’র সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ঘোচালেন নরেন্দ্র মোদী।
গত কাল গুজরাত প্রবেশের পর থেকেই লালকৃষ্ণ আডবাণী ও নরেন্দ্র মোদীর শরীরের ভাষায় দূরত্ব প্রকট হচ্ছিল। প্রকাশ্য সভায় আডবাণীর পাশে বসেননি মোদী। এক মালায় মাথা গলাননি। প্রকাশ্যে দু’জনে তেমন কথাও বলেননি।
আর আজ? একেবারে উল্টো ছবি। সকাল থেকে একের পর এক সভায় দু’জনে পাশাপাশিই বসলেন। মালা পরলেন। খোশমেজাজে গল্পও করলেন। রথের ছাদে উঠে আলোকচিত্রীর পছন্দের ছবিও তোলালেন। রাতে তাঁর কথার জবাবেই আমদাবাদের শেষ সভায় হাজির জনতা আডবাণীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাল (জন্মদিন কাল)। শুধু তাই নয়, কাল দু’জনের মধ্যে কেন একটি বাড়তি কুর্সি রাখা হয়েছিল, আজ তার সাফাইও দিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। সেটা দিতে গিয়ে অবশ্য যাবতীয় দায় ঠেলে দিলেন সংবাদপত্রের ঘাড়ে। বললেন, “আমার ও আডবাণীর মাঝখানে কাল দলের রাজ্য সভাপতি বসেছিলেন। তাই নিয়ে মুখরোচক কাহিনি ছড়াল সংবাদমাধ্যম। এটা কি দিল্লির কংগ্রেসের শাহেনশাদের চাল?”
মোদী যা-ই দাবি করুন, রাতারাতি যে ভোলবদল ঘটেছে তা রাজনীতিকরাই মানছেন। এখন প্রশ্ন, রাতারাতি এই ভোল বদলের কারণ কী?
সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মস্থানে আডবাণী। সঙ্গে মোদী। ছবি: পিটিআই।
মোদী ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে না গিয়ে এমনিতেই সঙ্ঘের কোপে পড়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই তাঁর অহঙ্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই পরিস্থিতিতে মোদীর লক্ষ্য ছিল, আডবাণীর রথ গুজরাতে ঢুকলে বেনজির লোক জড়ো করা। তাতে নিজের সাংগঠনিক শক্তি জাহির করা যাবে। দেখানো যাবে, গুজরাতে আডবাণীর রথ যা সমর্থন পেল, গোটা যাত্রাপথের কোথাও তা পায়নি। এর মাধ্যমে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের সাংগঠনিক প্রভাবটাও দেখিয়ে দিতে পারবেন মোদী। জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখার আগে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আডবাণীর সঙ্গে দূরত্ব-বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে নিজের সেই লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পড়তে পারেন তিনি। তাই, দু’জনের মধ্যে যে কোনও প্রতিযোগিতা বা মতভেদ নেই, তা স্পষ্ট করার তাগিদ ছিল মোদীর। আর ভিড়ের লক্ষ্যে মোদী এ দিন সফল। আমদাবাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার আগে থেকে রথের পথের পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ। পাঁচ-ছ’হাজার লোক জড়ো হয়েছিল রাস্তার উপরে রাতের জনসভাতেও।
গত কাল আডবাণীর প্রতি শীতল মনোভাব দেখালেও আজ প্রকাশ্যেই তাঁর ‘দিশানির্দেশ’ পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা দেখালেন মোদী। এক সময়ের ‘রাজনৈতিক গুরু’র সঙ্গে পুরনো ছন্দে ফিরে আসার চেষ্টাও করলেন। আমদাবাদের জনসভায় এক পাশে বসালেন আডবাণীকে, অন্য পাশে তাঁর স্ত্রী কমলা আডবাণীকে। উল্টো দিকে মোদীর সাংগঠনিক ক্ষমতার ভূয়সী তারিফ করলেন আডবাণী। বললেন, “গুজরাত তো দশ বছর ধরে মোদীকে চিনছে। আমি তাঁকে বহু বছর ধরে দেখছি। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব মোদীর। আমি মোদীকে বলেছি, তুমি যুগান্তকারী। অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতার সংমিশ্রণ।” শুধু তাই নয়, করমসাদে সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মস্থানে তিনি মোদীকে নিয়েই গেলেন। কেন জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মস্থান থেকে যাত্রা শুরু, তার পরোক্ষ ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে বল্লভভাইয়ের ভূমিকা নিয়েও ভারসাম্য বজায় রাখলেন। এবং কৌশলে এড়িয়ে গেলেন যাত্রা শুরুর সময় স্থান বদলের মূল কারণ। যেটা আসলে তাঁর সঙ্গে মোদীর ঠান্ডা লড়াই-ই।
এখানেই থেমে থাকেননি আডবাণী। আজ ঈদ। মোদীও চাইছেন, তাঁর ‘সদ্ভাবনা মিশনের’ মাধ্যমে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার কলঙ্ক ঘোচাতে। সংখ্যালঘুদের মন জয় করতে। মোদীর হয়ে সভায় সভায় আজ সেই কাজটিই করলেন আডবাণী। বললেন, “যখন থেকে গুজরাতে প্রবেশ করেছি, মোদীর নেতৃত্বে গোটা গুজরাত যাত্রায় সামিল হচ্ছে। শুধু পুরুষ নয়, মহিলারা। শুধু বৃদ্ধ নয়, শিশুরাও। শুধু হিন্দু নয়, মুসলমানরাও।” শুধু মুখে বলাই নয়, আডবাণীর রথও আজ মূলত ২০০২ সালের দাঙ্গা পীড়িত এলাকার মধ্যে দিয়েই আমদাবাদে পৌঁছল।
দুই নেতা পারস্পরিক সম্পর্কের কাঠিন্য ঝেড়ে ফেলায় খুশি বিজেপি নেতৃত্বও। আডবাণীর সফরসঙ্গী এক নেতার কথায়, ‘‘দলের নেতাদের ঠান্ডা লড়াই বন্ধ হলেই তো কংগ্রেসের গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে এক সুরে আক্রমণাত্মক হওয়া যাবে।” আজ কিন্তু সেটাই হয়েছে। আডবাণী দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধীকে আরও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন। মোদীও জানালেন, ইংরেজিতে কংগ্রেসের আদ্যক্ষর ‘সি’ আসলে ‘কোরাপশন’-এর (দুর্নীতি) ‘সি’ অক্ষরেরই সমতুল। আগামিকাল আডবাণীর জন্মদিন। ওই নেতাটির কথায়, “তার আগে আডবাণীর স্ত্রী কমলাকে নিয়ে তাঁদের মেয়ে প্রতিভা দিল্লি থেকে এখানে এসে পৌঁছেছেন। আজ অন্তত বলা যায়, মধুরেণ সমাপয়েত!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.