অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর কিশোর। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার। সে দিনই গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার বাঘা যতীন স্টেশনের কাছে রেললাইনে একটি ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার সকালে শিয়ালদহ জিআরপি মর্গে ওই দেহটিই তাঁর ছেলের বলে শনাক্ত করেছেন পাটুলির উত্তর ফুলবাগানের বাসিন্দা সুধন্য দাস।
পুলিশ এবং জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সঙ্গম দাস (১৪)। স্থানীয় ‘প্রান্তপল্লি হাইস্কুল’-এর নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানবাড়িতে পরিবেশনের লোক পাঠানোর কাজও করত ওই কিশোর। সঙ্গমের মা বন্দনা দাসের আশঙ্কা, ছেলের কোনও বন্ধুই তাকে খুন করেছে। যদিও, সোমবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি। বন্দনাদেবী জানিয়েছেন, শনিবার সর্দি-জ্বর ছিল তাঁর। রাত আটটা নাগাদ সঙ্গম তাঁর জন্য ওষুধ কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোয়। রাত বাড়লেও সে না-ফেরায় খোঁজ শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। সঙ্গমের কয়েক জন বন্ধুকে ফোন করা হয়। কিন্তু, ওই কিশোরের হদিস না-মেলায় রবিবার সকালে পাটুলি থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করা হয়।
জিআরপি সূত্রের খবর, শনিবার রাত সওয়া আটটা নাগাদ সোনারপুরের স্টেশন মাস্টারের তরফে যাদবপুর জিআরপি-র কাছে একটি মেমো পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়েছিল, শিয়ালদহ-বারুইপুর লোকালের চালক জানিয়েছেন, বাঘা যতীন স্টেশনের কাছে তাঁর ট্রেনের সঙ্গে কারও ধাক্কা লেগেছে। এর পরে তদন্তকারী অফিসারেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডাউন লাইনের পাশ থেকে একটি ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করেন। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের মাথা থেঁতলে গিয়েছিল। দু’টি পা এবং ডান হাত ভাঙা ছিল। ট্রেনটি ওই দেহটিকে যে কিছু দূর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিল, তারও চিহ্ন পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে রেলপুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সকালে মর্গে গিয়ে সঙ্গমের দেহ শনাক্ত করেন ওই কিশোরের পরিজনেরা। সোমবার রাত পর্যন্ত থানায় এ বিষয়ে ওই কিশোরের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সঙ্গমের কয়েক জন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তার মোবাইলের ‘কল লিস্ট’-ও। ওই কিশোরের বাড়ি থেকে বাঘা যতীন স্টেশনের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। ওষুধ কেনার জন্য সঙ্গম ওই রাস্তায় কেন গিয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শিয়ালদহের এসআরপি তাপসরঞ্জন ঘোষ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।” |