ভবানীপুরেই শেষ নয়। জগদ্ধাত্রীপুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে শহরে গোলমালের ঘটনা আরও বাড়ল। রবিবার রাতে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটেও প্রতিমা ভাসানের সময়ে মহিলাদের সঙ্গে কয়েক জন যুবকের অভব্য আচরণের জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। সোমবার সকালে আবার উত্তর শহরতলির বরাহনগরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় পুলিশি নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে পথ-অবরোধ করে ক্ষুব্ধ জনতা। দু’টি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। ভবানীপুরেও ভাসানের মিছিলে শব্দবাজির উৎপাতের জেরে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। দুর্গাপুজো-কালীপুজো মসৃণ ভাবে উতরে যাওয়ার পরে জগদ্ধাত্রীপুজোয় একাধিক ঘটনায় পুলিশের অপ্রস্তুত দশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নাগরিকদের অভিজ্ঞতা বলছে, দুর্গাপুজোর সময়েও পঞ্চমী-ষষ্ঠীতে ঠাকুর দেখার ভিড়ের বহর আঁচ করতে পুলিশের কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু, ষষ্ঠীর রাত থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। জগদ্ধাত্রীপুজোয় পুলিশি ব্যবস্থাতেও কি তেমন কোনও খামতি ছিল? শহরের পুলিশকর্তারা এই খামতির কথা সরাসরি মানতে না-চাইলেও তাঁরা ভবিষ্যতে জগদ্ধাত্রীপুজোর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবিস্তার পর্যালোচনার পক্ষপাতী। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার শিবাজী ঘোষ বলেন, “এ বারের জগদ্ধাত্রীপুজোর সময়ে অশান্তির ঘটনাগুলি কেন ঘটল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।” তাঁর মতে, “শহরের কয়েকটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দরকার ছিল।” |
মোট ক’টি জগদ্ধাত্রীপুজো হয় কলকাতায়? লালবাজারে তার কোনও হিসেব নেই। বস্তুত, উৎসবের মরসুমে দুর্গাপুজো-কালীপুজো তো বটেই, এমনকী ছটপুজোর জন্যও প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে কী করণীয়, তা ঠিক করে রাখে পুলিশ। দুর্গাপুজো-কালীপুজোয় শহরের প্রধান বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা কত, তার হিসেবও নথিভুক্ত করে লালবাজার। কিন্তু শহরে জগদ্ধাত্রীপুজো দৃশ্যত বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তার কোনও হিসেব রাখার প্রয়োজনীয়তাই বোঝেনি পুলিশ। ঠিক যেমন ঘটেছিল, এ বছর পুজোর পঞ্চমীর দিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। অথচ, শহরের সাধারণ নাগরিক থেকে পুলিশ, সবাই জানে, আগে গুটিকয়েক বাড়িতে বা উত্তর কলকাতার কিছু বিক্ষিপ্ত এলাকায় এই পুজো হলেও এ বছর তা অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার রাতে জগদ্ধাত্রীর ভাসান নিয়ে ভবানীপুরের অশান্তি সামলাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। তাঁর হস্তক্ষেপে সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত আয়ত্তে আসে। এর আধ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিডন স্ট্রিট লাগোয়া নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রিটের বস্তি এলাকা। স্থানীয় একটি ক্লাব আয়োজিত জগদ্ধাত্রীপুজোর বিসর্জনে মহিলাদের সঙ্গে কয়েক জন যুবকের অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ জানায়, ওই যুবকেরা মত্ত অবস্থায় ছিল। পাড়ার ছেলেরা ওই যুবকদের অভব্যতার প্রতিবাদ করলে কাছেই কাটোয়ারবাগান বস্তি থেকে শ’দেড়েক লোক এসে চড়াও হয়। বোতল ছোড়াছুড়ি, ভাঙচুর শুরু হয়। কয়েক জন মহিলা জখমও হন। স্থানীয় সিপিএম লোকাল কমিটির সম্পাদক মতি ঘোষ বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের ছেলেরাই গোলমাল বাধিয়েছে।” স্থানীয় কাউন্সিলর, তৃণমূলের পার্থ হাজারির পাল্টা দাবি, “সিপিএমের কিছু সদস্য-সমর্থক ওই পুজোর আয়োজক। ওরাই আগ বাড়িয়ে গোলমাল পাকায়।” বড়তলা থানায় দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। এ দিন সকালেও এলাকায় উত্তেজনা ছিল।
অন্য দিকে, ব্যারাকপুরের তালপুকুরে দু’টি পুজোর বিসর্জনে শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এর প্রতিবাদে স্থানীয় ক্লাব-সদস্যদের অবরোধে বিটি রোডে কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়। |