|
|
|
|
লালবাগ হাসপাতাল |
‘দায়সারা’ চিকিৎসার নালিশ উঠেছে আগেও |
শুভাশিস সৈয়দ • লালবাগ |
শিখা বিবি একা নন।
চিকিৎসায় গাফিলতি কিংবা দায়সারা মনোভাব শব্দটা লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের সঙ্গে প্রায় সর্মাথক হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
গত ৪ঠা এপ্রিল ‘গাফিলতির’ জেরেই মারা যান নবগ্রাম থানার নারকেলবাগানের বাসিন্দা কাশেম শেখ (৫৪)। গত বছর ১২ মার্চ চিকিৎসকের ‘গাফিলতি’তে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদ পুরসভা এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশগোলার বাসিন্দা তথা লালবাগ সিংঘি প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বিশাল শূর (৭)-এর। দুটি ক্ষেত্রেই এই লালবাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে।
কাশেম শেখের মৃত্যুতে ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকের উপরে চড়াও হয়েছিলেন। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। একই ভাবে ভর্তির দু-ঘন্টার মধ্যেই বিশালের মৃত্যুর পরে তার পাড়ার লোকেরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। কাশেম শেখের ভাইপো হাফিজুর শেখের অভিযোগ, “হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার কাকাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ভর্তি করানোর পরে ডাক্তারবাবু দেখতেও যাননি। কাকার শারীরিক অস্বস্তি শুরু হলে যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি ছিলেন, সেই ডাক্তারবাবুকে বার বার অনুরোধ করিএকটি বার গিয়ে দেখার জন্য। কিন্তু তিনি কাকাকে দেখতে আসার প্রয়োজনই মনে করেননি। আমাদের চোখের সামনে কাকা মারা গেলেন।”
লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “জ্বর, বমি ও খিচুনি হওয়ায় বিশালকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু চিকিৎসক সরকারি আবাসনে চেম্বার খুলে রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকায় হাসপাতালে রোগী দেখতে যেতে দেরি করেন। শিশুটি মারা যায়। পরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিশালের পরিবার।” স্বপনবাবুর কথায়, “সেই সময়ে লালবাগ এসিজেএম আদালতের নির্দেশে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই চিকিৎসকের কোনও শাস্তি হয়নি। তিনি এখনও বহাল তবিয়তে হাসপাতালেই রয়েছেন।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, “এক শ্রেণির চিকিৎসক কলবুক দেওয়া সত্ত্বেও চেম্বারে রোগী দেখতে বা নার্সিংহোমে অপারেশনে ব্যস্ত থাকায় দেরি করে হাসপাতালে পৌঁছানোর ফলেই সমস্যা তৈরি হয়। সময় মত হাসপাতালে না পৌঁছানোর জন্য প্রায় প্রতি দিনই রোগীর বাড়ির আত্মীয়-পরিজনদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের মধ্যে কোনও হেলদোল নেই।” এ ছাড়াও হাসপাতালের খাবারের গুণগত মান থেকে প্রতিবন্ধীদের শংসাপত্র বিলি নিয়ে দালাল রাজ তো হাসপাতালের চর্চিত বিষয় ছিল।
হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের পরিকাঠামোগত অভাব রয়েছে। পাশাপাশি দুটি বেডে চার জন প্রসূতিকে রাখা হয়েছে। সদ্যোজাতদের আলাদা ভাবে রাখার জন্য মায়েদের বিছানার পাশে কোনও ‘বেবিকট’ নেই। মরচে পড়া তিনটে ‘বেবিকট’ ঘরের এক কোণে পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে সদ্য মা হওয়া ভারতী মণ্ডল, প্রতিমা মণ্ডল থেকে ধনী বিশ্বাসদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের কথায়, “প্রসবের সময়ে লেবার রুমে কোনও নার্সের দেখা পাওয়া যায় না। আয়াদের হাতেই আমাদের বাচ্চা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|