|
|
|
|
সিউড়ি হাসপাতালে রেফার-কাণ্ড |
ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও সিউড়ি |
এক আসন্ন প্রসবার ‘ঠিকমতো’ চিকিৎসা ‘না করেই’ রেফার করে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত সিউড়ি সদর হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। সব খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ইতিমধ্যেই ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হয়েছে।
বুধবার সিউড়ি হাসপাতালে রেখা বাউরি নামে এক আসন্ন প্রসবা বধূকে দেবাশিসবাবু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেন। রোগিণীর পরিবারের পক্ষ থেকে সিউড়ি হাসপাতালেই চিকিৎসা কবার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও দেবাশিসবাবু গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। রেখাদেবীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হন তাঁর স্বামী। দুবরাজপুর থানার কাছে পথেই শিশুপুত্রের জন্ম দেন ওই বধূ। এ দিন ওই থানায় দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন রেখাদেবীর স্বামী আনন্দ বাউরি।
|
অভিযুক্ত চিকিৎসক
দেবাশিস দেবাংশী |
স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, “সব পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও ওই রোগীকে কেন ফেরানো হল, তা বুঝতে পারছি না। এটা চূড়ান্ত কর্তব্যহীনতা।” সিউড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই ‘কর্তব্যহীনতা’র অভিযোগেই এ দিন দেবাশিসবাবুকে ‘শো-কজ’ করেছেন হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে শো-কজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। যদিও এ দিন সন্ধ্যায় দেবাশিসবাবুর দাবি, “আমি এখনও পর্যন্ত কোনও চিঠি পাইনি। যদি পাই, যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব।”
পাশাপাশি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতাল সুপার। মানবেন্দ্রবাবু এ দিন বলেন, “হাসপাতালের এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার এবং নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্টকে নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাঁরা কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন।” তদন্ত-রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তদন্ত কমিটির সদস্যেরা রেখাদেবীর সঙ্গেও কথা বলবেন। তাঁরা মূলত যে-সব বিষয় খতিয়ে দেখবেন, সেগুলি হল:
১) ওই অন্তঃসত্ত্বাকে আদৌ রেফার করা জরুরি ছিল কি না।
২) কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে রেফার করা হয়েছিল।
৩) রেফার করার ক্ষেত্রে অন্য কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কি না।
৪) হাসপাতালের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কি না।
দেবাশিসবাবুর যুক্তি ছিল, রেখাদেবীর রক্তচাপ খুব বেশি থাকায় তাঁর খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তিনি ঝুঁকি না নিয়ে এবং ডাক্তারি ‘ম্যানুয়াল’ মেনেই রোগিণীকে রেফার করেছেন। তবে বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালের যা পরিকাঠামো, তাতে এই ধরনের প্রসূতিকে বাইরে কোথাও ‘রেফার’ করার প্রয়োজন থাকে না বলেই মনে করছেন ‘বেঙ্গল অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি’-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “আমি ২০ বছর আগে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ছিলাম। তখনও এই ধরনের প্রসূতিকে বাইরে কোথাও রেফার করিনি। আর এখন তো সদর হাসপাতালগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো থাকার কথা। তা ছাড়া এই ধরনের রোগিণীকে রেফার করার আগে সহকর্মী চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করলে কাজ করতে সুবিধা হয়।”
সদর হাসপাতালের রেজিস্টার অনুযায়ী, দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসা রেখাদেবীকে মঙ্গলবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সারা রাত তাঁকে কোনও চিকিৎসক দেখেননি বলে রেখাদেবীর অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, রাতের রাউন্ড তো বটেই, গভীর রাতেও রোগী বা প্রসূতির বাড়াবাড়ি হলে চিকিৎসকদের হাসপাতালে যেতে হয়। দরকারে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারও করতে হয়। অথচ সদর হাসপাতালেরই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ এবং রোগীদের অভিযোগ, দেবাশিসবাবু সাধারণত সন্ধ্যার পরে আর হাসপাতালমুখী হন না। দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, “হাসপাতালের ম্যানুয়াল নিয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বলুন।” |
|
|
|
|
|