কবর থেকে তোলা হল শিশুর দেহ
সদ্যোজাতের মৃত্যুও কি অ্যাসিডে, ময়না-তদন্ত
প্রসবের পরে সাফসুতরো করতে গিয়ে জীবাণুনাশকের বদলে ‘অ্যাসিড’ ব্যবহারে পুড়ে গিয়েছিলেন প্রসূতি। এমনই ছিল অভিযোগ। ‘দায়সারা’ চিকিৎসার শিকার শিখা বিবি নামে ওই মহিলার সদ্যোজাত শিশুটিও কি অ্যাসিড-দগ্ধ হয়েই মারা গিয়েছিল?
এ বার সেই প্রশ্ন ওঠায় মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের ওই অ্যাসিড-কাণ্ডের পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে শিখা বিবির সদ্যোজাতের দেহটি তাই কবর থেকে তুলে পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে। বুধবার রাতে ওই মহিলার দেওর ওয়াসেফ শেখ স্থানীয় থানায় ‘চিকিৎসায় গাফিলতির’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এ দিন তারই তদন্তে নেমে জেলা পুলিশ ওই শিশুর ময়না-তদন্তের অনুমতি চায় জেলাশাসকের কাছে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পারভেজ সিদ্দিকি আপত্তি করেননি। তবে তাঁর নির্দেশে শিশুটির ময়না-তদন্ত লালবাগে নয়, করা হয় বহরমপুর জেলা সদর হাসপাতালে।
পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই হাসপাতালের নার্স শ্যামলী কর্মকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ দিন বিকেলে লালবাগ হাসপাতালে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাকের সই করা বরখাস্তের সেই চিঠিটি এসে পৌঁছয়। লালবাগ হাসপাতালের সুপার শাশ্বতী নাগ বলেন, “গত ৩১ অক্টোবর, লেবার-রুমের দায়িত্বে ছিলেন শ্যামলী কর্মকার। তাঁর নির্দেশেই সাফসুতরো করার কাজে ওই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল। বিকেলেই ওঁকে স্বাস্থ্য অধিকর্তার চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
শিখা বিবির পায়ের ক্ষত পরীক্ষা করে এ দিন মহকুমা হাসপাতালের তিন সদস্যের তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ‘কেমিক্যাল বার্ন’। ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ বীরেন্দ্রপ্রসাদ সাউ বলেন, “তিন সদস্যের বোর্ড একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে ওই প্রসূতির পোড়া দাগ কেমিক্যাল বার্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাফাইয়ের সময়ে জীবাণুনাশক বলে যা ব্যবহার করা হয়েছিল তা পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে।” কিন্তু জীবাণুনাশকে কি এ ভাবে পুড়ে যাওয়া সম্ভব? সেই প্রশ্নের উত্তর এ দিন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামলীদেবীর নির্দেশে হাসপাতালের আয়া ঊষা হাজরা সে দিন প্রসূতি সদনে ওই সাফাইয়ের কাজ করেছিলেন। হাসপাতালের চৌহদ্দিতে তাঁকে না পাওয়া গেলেও নিজের বাড়িতে বসে ঊষাদেবী বৃহস্পতিবার বলেন, “জীবাণুনাশক না অ্যাসিড, তা জানি না। তবে তা ঢালতেই ওই প্রসূতির পা কালো হয়ে গিয়েছিল। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেছিলেন।” তাঁর দাবি, “ডিউটিতে যে নার্স ছিলেন তিনি আমায় বলেন, ঘরের কোণায় রাখা শিশিতে যা রয়েছে তা দিয়েই বিছানা পরিষ্কার করতে। কিন্তু ওই শিশিটা বিছানায় উপুড় করতেই জলের মতো কিছু একটা গড়িয়ে পড়ল, আর সঙ্গে সঙ্গে মহিলার পা কালো হয়ে গেল। আমি ভয় পেয়ে ওই নার্সকে ডাকতে থাকি। উনি তখন বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তুই এ বার যা।’ এ ব্যপারে পাঁচ কান করতে বারণ করেন তিনি।”
ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন শিখা বিবি। এ দিন তিনিও বলেন, “ওই ঘটনার পরে আয়া আর নার্স দু’জনেই আমার কাছে ভুল স্বীকার করে ব্যাপারটা সবাইকে বলতে বারণ করেন।” তিনি জানান, লেবার রুম থেকে শয্যায় দেওয়ার পরে জ্ঞান ফিরলে নার্স এসে শরীরের পোড়া জায়গায় জ্বালা করছে কি না, তা-ও জিজ্ঞেস করে যান। তাঁর দাবি, জ্বালা কমাতে তাঁকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
শিখা বিবি বলেন, “বোতল থেকে আমার শরীরে কী একটা ঢেলে দিল। আর তার পরেই যন্ত্রণায় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কখন, কী ভাবে আমার সন্তান হয়েছে, আমি কিছুই জানি না। লেবার রুম থেকে হাসপাতালের শয্যায় দেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার জ্ঞান ফেরে। আয়া এসে জানায়, আমার ছেলে হয়েছে। ভাল আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য অন্য এক আয়া এসে জানিয়ে যায়, ছেলে মারা গিয়েছে।”
তা হলে, অ্যাসিডই কি শিশুটির মৃত্যুর কারণ? মুখে কুলুপ আঁটা পুলিশ কিংবা স্বাস্থ্য কর্তারা বলছেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলে বলা সম্ভব নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.