রেফারে রাশ এখনই ‘অসম্ভব’
কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে বিশেষ ‘শিশু ব্লক’
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালেই হয়তো তাঁর প্রসব হতে পারত নির্বিঘ্নে। অথচ সেই আসন্নপ্রসবাকে নিয়ে আত্মীয়-পরিজনেরা সোজা কলকাতা রওনা হলেন। পথের ধকলে তাঁর নিজের শরীরের ক্ষতি তো হলই, গর্ভস্থ শিশুও হয়ে পড়ল বিপন্ন। শেষে মহানগরের কোনও হাসপাতালে যখন শিশুটি জন্ম নিল, দেখা গেল তাকে বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন। মায়ের প্রাণও সঙ্কটে।
অপ্রয়োজনে কলকাতায় রোগী ‘রেফার’ বন্ধ করতে জেলায় জেলায় সরকারি চিকিৎসা-পরিকাঠামো উন্নতির যতই চেষ্টা হোক, স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন যে, আমজনতার মনে এখনও গ্রাম বা মফস্সলের সরকারি চিকিৎসা সম্পর্কে তেমন ভরসার জায়গা তৈরি হয়নি। অনেক সময়ে দরকার না-থাকলেও তাঁরা দূরদূরান্ত থেকে কলকাতায় পাড়ি দিচ্ছেন, এমনকী পূর্ণ গর্ভবতীকে নিয়েও। যার পরিণতি দাঁড়াচ্ছে বিপর্যয়ে। সমস্যাটির সমাধান যে রাতারাতি সম্ভব নয়, স্বাস্থ্যকর্তারা তা-ও মানছেন। তাই শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এ বার কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘বিশেষ ব্লক’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তা থাকবে মেডিক্যাল কলেজগুলোর বাইরে, নিকটস্থ অন্য হাসপাতালে।
পশ্চিমবঙ্গে শিশুদের জন্য একমাত্র ‘রেফারেল’ হাসপাতাল যেটি, কলকাতার সেই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে তিন মাস আগে ২৪ ঘণ্টায় ১৮টি শিশুর মৃত্যুর পরে রেফারেল ব্যবস্থাকে যুক্তিসঙ্গত করে তুলতে নানান পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দেখা গিয়েছিল, ওই সব শিশুর বেশ কয়েক জন গ্রাম থেকে জেলায়, পরে জেলা থেকে কলকাতায় ‘রেফারড’ হয়ে এসেছিল। দিন কয়েক আগে ওই হাসপাতালে ফের বেশ কিছু শিশুমৃত্যুর পরেও একই প্রসঙ্গ উঠে আসে। স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, অল্প সময়ের মধ্যে ‘রেফারেল’ ব্যবস্থায় কাম্য পরিবর্তন আনা অসম্ভব। অবিলম্বে তাই বিকল্প বন্দোবস্ত জরুরি।
তাঁদের এই ‘বোধোদয়ের’ই প্রথম ফলশ্রুতি, বিশেষ শিশু-প্রসূতি ব্লক। স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের নির্দেশে তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্থির হয়েছে, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোর বিশেষ প্রসূতি ও শিশু ব্লক থাকবে কাছাকাছি অন্য হাসপাতালে, যেখানে রোগীর ভিড় তুলনায় কম। যেমন কলকাতা মেডিক্যালের বিশেষ ব্লক খুলছে লেডি ডাফরিনে, এসএসকেএমের ব্লক শম্ভুনাথ পণ্ডিতে, আর জি করের অবিনাশ দত্তে, ন্যাশনালের বাঘা যতীন হাসপাতালে। এনআরএসে শিশু বিভাগে চাপ বেশি হওয়ায় সেটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
কারা ভর্তি হবেন ওই সব ব্লকে? চিকিৎসাই বা করবেন কারা? স্বাস্থ্য সূত্রের খবর: সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে সব শয্যা ভর্তি হয়ে গেলে রোগীদের নতুন ব্লকে পাঠানো হবে। সেখানে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকবেন মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরাই। কোনও চিকিৎসক সে দায়িত্ব না-সামলালে ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা’র হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। উল্লেখ্য, বিসি রায়ে সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যুর ঘটনার দিন কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনেকে ডিউটি থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে হাজির ছিলেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার খোদ স্বাস্থ্যসচিব এ নিয়ে হাসপাতালের অধ্যক্ষের রিপোর্ট তলব করেছেন।
এ দিকে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি: পশ্চিমবঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ঊর্ধ্বমুখী। ২০০৫-০৬ সালে যা ছিল ৫০.৭%, ২০১০-১১-য় তা ৬৯.৫%। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও প্রসবের ব্যবস্থা হয়েছে। তবু কলকাতায় ভিড় করার প্রবণতা কেন? এক শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা, “কোনও আসন্নপ্রসবা যদি ঠিক করেন যে, তাঁর সন্তান গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বদলে কলকাতার হাসপাতালে হবে, কে তাঁকে আটকাবে? গ্রামের ডাক্তার তো জোর করতে পারবেন না!” এই অবস্থায় তাঁর উপলব্ধি, “আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। যা এখনই করা যাবে না, তা নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। যাতে হাতেনাতে সুফল মিলবে, সেটাই করা হচ্ছে।”
তাই বিশেষ ব্লক তৈরির পাশাপাশি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোয় শয্যাও বাড়ানো হচ্ছে। বুধবার স্বাস্থ্যসচিব আচমকা পরিদর্শনে ন্যাশনাল মেডিক্যাল চত্বর ঘুরে দেখেন। কোন জায়গায় নতুন ওয়ার্ড গড়ে শয্যা বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। অন্য হাসপাতালগুলোতেও নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। গত জুলাইয়ে বিসি রায়ে পরের পর শিশুমৃত্যুর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যদিও শুধু বিসিরায় ছাড়া কোথাও তা হয়নি। এখন স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, আগামী মার্চের মধ্যে ৩৬টি এসএনসিইউ খোলা হবে। অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে এমআর বাঙুর, ডায়মন্ড হারবার ও আরামবাগ। তবে চিকিৎসা ছাড়াও শিশুমৃত্যুর পিছনে যে সব ‘সামাজিক’ কারণ থাকে, সেগুলোও সামনে আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। যে কারণে বয়ঃসন্ধির মেয়েদের স্বাস্থ্য, প্রসূতির পুষ্টি ও অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.