|
|
|
|
নালিশ শুনল প্রতিনিধি দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সব কিছু নিয়েই অভিযোগ। স্নাতক স্তরের প্রশ্নপত্রের ধরণ থেকে হস্টেল, লাইব্রেরি, কলেজ ভবন থেকে শিক্ষকদের শূন্যপদ, পরীক্ষার ফলাফল এবং প্লেসমেন্টের অবস্থাও। এমনকি, ক্যান্টিনের খাবার ও তার দাম নিয়েও অভিযোগ শুনলেন রাজ্য বিধানসভার উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সব শুনে তাঁরা সেগুলির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাসও দিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি শিলিগুড়ি দুটি কলেজ পরিদর্শন করেন। একটি শিলিগুড়ি গর্ভমেন্ট পলিটেকনিক কলেজ এবং আরেকটি শিলিগুড়ি মহিলা মহাবিদ্যালয়। রাজ্যের নয়া সরকার গঠনের পর উত্তরবঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি এই প্রথম পরিদর্শন করল। পরিদর্শনকারী দলে বিধানসভার অফিসার, কারিগরি শিক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারেরা ছিলেন। চেয়ারম্যান আশিসবাবু বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষার পরিবেশ, স্বচ্ছতা, পরিকাঠামো এবং উন্নয়নের মত বিষয়গুলিতে জোর দিয়েছেন। এরজন্য আমরা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যাচ্ছি। যে সমস্যার কথা শুনেছি তা সাপ্তাহিক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের জানানো হবে। পাশাপাশি, বিধানসভায় সুপারিশ করে তা কার্যকরী হচ্ছে কী না তা দেখা হবে।” পরিকাঠামোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার বিষয়গুলিকেই প্রাধন্য দেওয়া হবে বলে আশিসবাবু জানান। তিনি বলেন, “আমরা সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখব। কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ডোনেশন নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে। সেগুলিও দেখছি।” এদিন কমিটির সদস্যার প্রথমেই শিলিগুড়ি গর্ভমেন্ট পলিটেকনিক কলেজে যান। সেখানে কলেজের বিভিন্ন কোর্স, ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া, প্লেসমেন্টে অংশগ্রহনকারী কোম্পানিদের সম্পর্কে তাঁরা খোঁজখবর নেন। এর পরে শূন্যপদের কথা শোনেন। বর্তমানে কলেজে ৪২ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও ২১টি পদ খালি রয়েছে বলে তাঁরা শোনেন। জানতে পারেন গ্রুপ-ডি, লাবরেটরি সহায়ক, টেকনিশিয়ানের অপ্রতুলতার কথাও। |
|
পলিটেকনিকে প্রতিনিধিরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
এ ছাড়া আংশিক এবং চুক্তির ভিত্তিতে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাঠামো, ছুটির বিষয় নিয়েও অবগত হন। সরকার এবং বিভিন্ন দফতরের কাছে পাঠানো এই সম্পর্কিত কাগজপত্রও তাঁরা চেয়ে নেন। কলেজের ছাত্ররা ভুলেভরা মার্কশিট, কলেজের বাস বন্ধ হওয়া ছাড়াও শিক্ষকদের অপ্রতুলতার কথা সদস্যের জানান। কলেজ থেকে বার হওয়ার মুখ্যে আচমকাই আশিসবাবু গাড়ি থেকে নেমে কলেজের ক্যান্টিনে ঢোকেন। সেখানের কর্মীরা কীসের ভিত্তিতে কাজ করেন তা জানার পাশাপাশি নিরামিশ এবং আমিষ খাবারের দরও জেনে নেন। এর পরে দলটি ডাবগ্রামের মহিলা কলেডে যান। সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমেই কলেজের জমি হস্তান্তর না হওয়া, টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে থাকে হস্টেল, অপ্রতুল ক্লাসঘর এবং খুবই কম সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা কলেজে কাজ করছেন বলে জানতে পারেন। কলেজে ১৬০০ উপরে ছাত্রী থাকলেও মাত্র ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকায় দলের সদস্যরা কার্যত অবাক হয়ে যান। পরিকাঠামোর অভাবে বিজ্ঞান বিভাগই খোলা যায়নি বলে তাঁরা জানতে পারেন। এর পরে লাইব্রেরির ঘুর দেখে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই সদস্যারা। বিভিন্ন স্নাতক স্তরের বইপত্র থাকলেও লাইব্রেরির ‘স্ট্যাডি রুমে’র ছাত্রীদের উপস্থিতির বিষয়টি খাতাপত্রে সঠিকভাবে না দেখে হতাশ হন তাঁরা। কমিটির চেয়ারম্যান আশিসবাবু কলেজ কর্তৃপক্ষকে ঠিকঠাকভাবে রাখার নির্দেশ দেন। এর পরে বাইরে ছাত্রীরা পানীয় জল, শৌচাগার, হস্টেল না থাকার বিষয়টি তাঁদের জানান। এমনকি, ভূমিকম্পে কলেজের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থার কথা ছাত্রীদের থেকেই তাঁরা জানতে পারেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈটকের সময় প্রশ্নপত্রের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কমিটির সদস্যারা। বড় প্রশ্নের বদলে ছোট ছোট প্রশ্ন-উত্তর না হওয়ায় ছাত্রীদের কম নম্বর পাওয়া এবং মান কমে যাচ্ছে বলেও ওই সদস্যরা মনে করেন। এই বিষয়ে রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর প্রশ্ন তৈরির বিষয়টি দেখা দরকার বলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের তাঁরা নির্দেশ দেন। দুটি কলেজে কমিটির সদস্যদের কাছে দাবিদাওয়া জানানো নিয়ে যাতে কোনও গোলমাল না হয় সেই জন্য শিলিগুড়ি থানার তরফে বিরাট পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়। আইসি পিনাকী মজুমদারই নিজেই দুটি কলেজে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছিলেন।
শিলিগুড়ির দু’টি কলেজ ঘুরলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। |
|
|
|
|
|