|
|
|
|
রাজ্য কমিটি |
জেলা স্তরে ‘সংরক্ষণের’ দাবি সিপিএম নেতাদের |
প্রসূন আচার্য • কলকাতা |
এ বার সংরক্ষণের দাবি উঠল সিপিএমে!
দলীয় সম্মেলন প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দেশিকায় তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসি এবং মুসলিম নেতাদের আনুপাতিক ভাবে জেলাস্তরের বিভিন্ন কমিটিতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আলিমুদ্দিন। সেই সূত্রেই রাজ্য কমিটির শেষ বৈঠকে দাবি উঠেছে আরও বেশি করে মুসলিম, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি নেতাদের রাজ্য কমিটিতে স্থান দিতে হবে। বৈঠকে একাধিক জেলার নেতারা বলেন, বিধানসভা ভোটে মুসলিম, তফসিলি জাতি, আদিবাসী এবং ওবিসি-দের বড় অংশের ভোট সিপিএমের বিরুদ্ধে গিয়েছে। সেই ভোট ফেরাতে এই শ্রেণির প্রতিনিধিদের আরও বেশি করে দলীয় নেতৃত্বে আনতে হবে। শুধু নিচুতলা নয়, রাজ্য কমিটিতেও তাদের আরও বেশি জায়গা দিতে হবে।
আগামী ৯ নভেম্বর থেকে লোকাল স্তর দিয়ে সিপিএমে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। রাজ্য সম্মেলন হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। তার আগে আরও দু’বার রাজ্য কমিটির বৈঠক বসার কথা। সেখানে জেলার নেতাদের দাবি নিয়ে শীর্ষনেতারা কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই দেখার। কারণ, জাতিসত্তা মেনে নিয়েও কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে সিপিএম ‘জাতভিত্তিক ব্যবস্থা’ মানে না। বিশ্বাস করে ‘শ্রেণিভিত্তিক ব্যবস্থা’য়।
নেতৃত্বে আরও বেশি মুসলিম ও তফসিলি নেওয়ার দাবিতে দলের মধ্যে বহুদিন ধরেই সরব রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা ও কান্তি বিশ্বাস। বস্তুত, তাঁদের সামনে রেখেই জেলার নেতারা ‘কোটা’ বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। তাঁদের যুক্তি, লোকাল, জোনাল বা জেলা কমিটিতে সামাজিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ জাত ও ধর্ম দেখে নেতা
নির্বাচিত করা হলে রাজ্য কমিটিতে হবে না কেন? সেখানে কেন প্রতিনিধিত্বে উচ্চবর্ণের মানুষরাই থাকবেন ৮০ শতাংশের বেশি?
সিপিএমের ৮৭ জনের রাজ্য কমিটিতে রেজ্জাক মোল্লা, মহম্মদ সেলিম-সহ মুসলিম প্রতিনিধি রয়েছেন মাত্র ছ’জন। কান্তিবাবুকে ধরে তফসিলি জাতির প্রতিনিধি মাত্র তিন জন। আর আদিবাসী দু’জন দেবলীনা হেমব্রম এবং রূপচাঁদ মুর্মূ। রাজ্য কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “বামফ্রন্ট ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও রাজ্য কমিটিতে উচ্চবর্ণের নেতারা ৮৫%। এর বদল না করলে যুগের সঙ্গে তাল মেলানো যাবে না।”
রাজ্যে তফসিলি জাতির সংখ্যা প্রায় ২৩%, উপজাতি ৬%, মুসলিম ২৪% এবং হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে অন্যান্য অনগ্রসর (ওবিসি) জাতির সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সত্যিই সামাজিক জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হারকে নেতৃত্বে স্থান দিতে হলে রাজ্য কমিটির অর্ধেক সদস্যই নতুন নিতে হবে!”
নদিয়ার প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি রমা বিশ্বাস, উত্তর ২৪ পরগনার অমিতাভ নন্দী, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রেজ্জাক মোল্লা, পূর্ব মেদিনীপুরের নির্মল জানা, পুরুলিয়া জেলার নকুল মাহাতো, বাঁকুড়ার অমিয় পাত্র এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদেরা প্রতিনিধিরা রাজ্য কমিটিতে ওই দাবি তোলেন। বৈঠকে এক সদস্য বলেন, রাজ্য কমিটিতে রেজ্জাক মোল্লা মুসলিমদের আর কান্তি বিশ্বাস তফসিলি-আদিবাসীদের কথা বলবেন, তাতেই হয়ে যাবে? এ ভাবে পার্টি চলতে পারে না! তাঁকে সমর্থন করেন অনেকে। অমিতাভবাবু বলেন, তফসিলি-মুসলিমরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতেই উত্তর ২৪ পরগনায় বামেদের বিপর্যয় ঘটেছে। তাদের সমর্থন পেতে দলে সর্বস্তরে আরও বেশি করে তফসিলি-মুসলিম প্রতিনিধিকে স্থান দিতে হবে। এমনকী, রাজ্য কমিটিতেও। বিমান বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ‘কটাক্ষ’ করে রেজ্জাক বলেন, রাজ্য কমিটিতে তো কয়েক জন মুসলিম প্রতিনিধি রয়েছেন! মুসলিমদের কথা বলার জন্য জেলায় লোক দরকার। তাঁকে বরং জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তাতে ভাল হবে!
তবে রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলে সংরক্ষণের বিষয়টি উঠে আসায় দলের একাংশ চিন্তিত। রাজ্য কমিটির সদস্য উত্তরবঙ্গের এক প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, “কমিউনিস্ট পার্টি কখনও বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো জাত বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে পারে না। আমরা শ্রেণিভিত্তিক রাজনীতি করি। এখন দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।” সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু হারের পর কথা হচ্ছে ভোট-ব্যাঙ্কের কথা ভেবেই। যে সব জেলা থেকে জাত ও ধর্মভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের দাবি উঠেছে, সেখানে সংখ্যালঘু, আদিবাসী বা তফসিলিদের সংখ্যা বেশি। স্বভাবতই বেশি মানুষের সমর্থন পেতে জেলার নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠী থেকে নেতা তুলে আনতে সওয়াল করেছেন।
২০০৫-এ দিল্লির পার্টি কংগ্রেসে আদিবাসীদের জন্য দলিলের মূল প্রবক্তা ছিলেন বিমানবাবু। তখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। দিল্লির ইউপিএ সরকারও চলছিল বাম-সমর্থনে। এখন বিমানবাবু ক্ষমতাহীন দলের রাজ্য সম্পাদক। ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে কি তিনি দলে ‘সংরক্ষণ’ মেনে নেবেন? |
|
|
|
|
|