হ্যাজাকের আলোয় জগদ্ধাত্রীর আরাধনা
নেক বছর আগে এ গ্রামে বিদ্যুতের আলো এসেছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সন্ধ্যায় আলো জ্বলে। কিন্তু, গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আজও জ্বলে হ্যাজাকের আলো। পাত্রসায়রের বামিরা গ্রামের প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন এই পুজোয় এটাই রীতি।
এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, পুজোর প্রায় সমস্ত কাজ করেন তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষজনেরা। তাঁদের বাস বামিরা লাগোয়া রাখাশোলে। তাঁরাই পুজোর সমস্ত উপকরণ জোগান দেন। ভোগের চাল থেকে রান্নার কাঠ- এমনকি মাটির মন্দিরের ছাউনির খড়ও। শুধু তাই নয়, এই পুজোর পরেই তাঁরা নিজেদের জমির ধান কাটা শুরু করেন। বছরের পর বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। অথচ। এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন বামিরার বাসিন্দা রায়বাহাদুর কুমুদকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: শুভ্র মিত্র।
তাঁর উত্তরসূরি অরূপ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পিতৃপুরুষদের কোনও ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি সুরাই কিস্কু, দুর্গা মণ্ডি, দিবাকর বাগদিরা আমাদের এই পুজোকে নিজেদের করে নিয়েছে। ওঁরাই নিজেদের বাঁশ, খড় নিয়ে এসে মন্দির তৈরি করেন। ভোগ রান্না ও যজ্ঞের কাঠ তাঁরাই নিয়ে আসেন। পুরোহিত শুধু পুজোটুকু করেন। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চলে আনন্দানুষ্ঠান।”
পরিবারের সদস্যেরা জানান, তাই পুজোর অন্যতম আয়োজক ওই আদিবাসী ও তফশিলিজাতির মানুষেরাও এখড় পুজোর সমান ভাগিদার হয়ে উঠেছেন। প্রায় ১২০০ মানুষ দেবীর অন্নভোগ খান এক পংক্তিতে বসে। এখনও হ্যাজাক জ্বালানো হয় কেন? অরূপবাবু বলেন, “পুজোকে ঘিরে আমরা কোনও জৌলুস চাই না। সাবেক কালের প্রতিমার সঙ্গে সাবেক হ্যাজাকের আলোই বেশ মানায়। পূর্ব পুরুষদের সমস্ত নিয়মই আমরা মেনে চলছি।” আজ শুক্রবার, এক সঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো হবে। মল্লরাজ আমলের প্রাচীন ভেঙে পড়া পাথরের মন্দিরের পাশে খড়ের চালার নতুন মাটির মন্দিরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলের মালা ও আম্র পল্লব জড়ো করা হচ্ছিল। মন্দির চত্বের ঢাক বাজাতেই আশপাশের ডান্না, কৃষ্ণবাটি, লবাসন, বালসি, পাত্রসায়র, ঠাকুরহাটি গ্রাম থেকেও এসেছেন দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যে নামতেই জ্বলে উঠল সাত-সাতটি হ্যাজাকের আলো। হ্যাজাকে পাম্প দিতে দিতে গণেশ হেমব্রম, মিত্তন হাঁসদা, শেখর বাগদিরা বলেন, “মা আমাদের সকলেরই। পুজোর দিনগুলির জন্য সারা বছরের প্রতীক্ষা।” অরূপবাবুর মা ৭০ ছাড়ানো ছবিরানিদেবী বলেন, “৫০ বছরের বেশি ধরে এই বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে আসছি। সবাই মিলে বরাবর আমরা দেবীর পুজো করে আসছি। মনে হয়, মা আমাদের এক বৃন্তে ধরে রেখেছেন। এই পুজো তাই মানুষকে ভালবাসার পুজো।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.