মিড-ডে মিলের দায়িত্ব থেকে শিক্ষকদের অব্যাহতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিলেন জেলাশাসক। ঘটনাটি পুরুলিয়ার। সম্প্রতি পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ এ ব্যাপারে নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি বলেন, “সরকারি বিধি অনুযায়ী মিড-ডে মিল পরিচালনার দায়িত্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদেরই। এই বিধি তাঁরা অমান্য করতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ স্কুলগুলিকে দেওয়া হয়েছে।”
গত দু-তিন মাস ধরে এই জেলার রঘুনাথপুর ২, পাড়া, আড়শা, বাঘমুণ্ডি-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা দাবি তুলেছিলেন তাঁদের মিড-ডে মিলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এই দাবিতে তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট বিডিওদের। এক ধাপ এগিয়ে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ৯৮টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনকে জানান, তাঁদের দাবি না মানার কারণে মিড-ডে মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল বন্ধ রাখা হবে বলে তাঁরা জানিয়েও দিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই জেলাশাসকের এই নির্দেশ বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |
তবে প্রশাসনের দাবি, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কোনও স্কুলে মঙ্গলবার থেকে মিড-ডে মিল বন্ধ নেই। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গল ও বুধবার ওই ব্লকের বেশিরভাগ স্কুলেই মিড-ডে মিল বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার কিছু স্কুলে ফের মিড-ডে মিলের রান্না হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক বলেন, “সরকারি নির্দেশ না মানা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এই অবস্থায় আগের অবস্থান বজায় রাখা সম্ভব নয়।”
তবে এই নির্দেশ ঘিরে জেলা শিক্ষক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বস্তুত, মিড-ডে মিল থেকে অব্যাহতি চাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষকদের যুক্তি ছিল, ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা স্কুলগুলিতে কম। তাই পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া কোনও কারণে চাল বা টাকা সময়মতো না পাওয়ার জন্য কিছু দিন মিড-ডে মিল বন্ধ থাকলে গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের একাংশ শিক্ষকদের হেনস্তা করছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মিড-ডে মিল পরিচালনার দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও গ্রাম শিক্ষা কমিটির হাতে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) অজয় আচার্য বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে জেলাশাসককে বৈঠকে কয়েক জন বিধায়ক ও শিক্ষক সংগঠনগুলি জানিয়েছিলেন। কিন্তু, মিড-ডে মিল কোনও কারণেই বন্ধ করা যাবে না।এটাই সরকারি বিধি।” তবে শিক্ষকদের পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জয়ন্তকুমার আইকত বলেন, “প্রধান শিক্ষক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সব জায়গায় মিড-ডে মিল পরিচালনা করেন। এখানেও তা মানতে হবে।”
অন্য দিকে, মিড-ডে মিল বন্ধ করা উচিত নয় বলেই জানিয়েছে দুই শিক্ষক সংগঠন তৃণমূলের শিক্ষা সেল ও সিপিএমের এবিটিএ’র জেলা নেতৃত্ব। শিক্ষা সেলের কার্যকরী সভাপতি গোপাল দাস বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্র সরকারও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী মিড-ডে মিল থেকে শিক্ষকরা অব্যাহতি পেতে পারেন না।” তবে শিক্ষকদের বাস্তব সমস্যা ও বিকল্প প্রস্তাব তিনি অস্বীকারও করতে পারেন নি। তিনি জানান, কিছু বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদেরই মিড-ডে মিল দেখাশোনা করতে হবে। এবিটিএ’র জেলা সম্পাদক অনিল মাহাতো বলেন, “শিক্ষকদের মিড-ডে মিলের বাজারও করতে হয়। মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এ নিয়ে সমস্যা চলবেই। প্রশাসনের তরফে ঘাটতি পূরণ করা দরকার।” তবে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন)-এর স্পষ্ট বক্তব্য, “শিক্ষকরা সরকারি কর্মী হিসেবে বেতম পাচ্ছেন। সরকারের নীতি ও বিধি মানা তাঁদের পক্ষে বাধ্যতামূলক। অন্যথায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |