উৎসবের নগরীর পরিবেশ সব দিক থেকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সতর্ক প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও। উৎসবের দিনগুলিতে শহরের বাইরে থেকেও আসেন বহু মানুষ। তাঁদের যাতে কোনও ভাবে অসুবিধার মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য সতর্ক নগরবাসীও।
প্রশাসন জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে শহর থাকে লোকে লোকারণ্য। কৃষ্ণনগরের বহু মানুষের বাড়িতে এসে ওঠেন আত্মীয় স্বজনেরা। ফলে এই সময় শহরের বিক্রিবাটাও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বহু গুণ বেড়ে যায়। আর সেই চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেয়ে যান বিক্রেতারা। বিশেষ করে সব্জি বাজারের ব্যবসায়ীরা এই কয়েকটা দিন শহরের চাহিদা মেটাতে সত্যিই খুব সমস্যায় পড়েন।
শহরের অন্যতম প্রধান বাজার পাত্রবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস বলেন, “এই সময়ে জিনিসপত্রের চাহিদা পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে অনেকেরই বাড়িতে আত্মীয় পরিজনেরা আসেন, তা ছাড়া হোটেল লজগুলিও এই সময়ে ভর্তি থাকে। ফলে এই সময়ে চাহিদা মেটাতে সব্জির দাম একটু বেড়েও যায়।” তাঁর কথায়, “তবে জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণেই থাকে। কারণ ব্যবসায়ীরা আগে থেকে বেশি করে জিনিসপত্র তুলে রাখেন। তা ছাড়া, ব্যবসায়ীদের উপরে নজর রাখি আমরাও। যাতে কোনও ভাবেই কেউ বেশি দাম নিতে না পারেন, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকে।”
প্রশাসনের কাছে কৃষ্ণনগরের মানুষের দাবি, এই সময় অনেক ভুঁইফোড় খাবারের দোকানও গজিয়ে ওঠে। সেই সব দোকানে যাতে খাবারের মান ও দাম ঠিক থাকে তার দিকে কড়া নজর রাখা হোক বলে তাঁরা জানান। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণত বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের খারাপ মানের খাবার বেচে দেওয়া প্রবণতা রয়েছে কিছু দোকানের। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলির উপরেও কড়া নজর রাখা হবে।
এই সময়টির অপেক্ষায় থাকেন শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা থেকে খাবারের দোকান পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এই শহরে দুর্গা পুজোর থেকেও বেশি জমজমাট উৎসব হয় জগদ্ধাত্রী পুজোয়। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “এই দিনগুলিতে শহরে কোটি টাকার উপরে ব্যবসা হয়। সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই লাভের মুখ দেখেন। তাই সকলেই চান উৎসব নির্বিঘ্নে হোক এবং ক্রেতারা ঠিক দামে ঠিক পরিষেবা পান।”
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে সোনা অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। কারণ এই পুজোর প্রথাই হল সোনার অলঙ্কার দিয়ে মঙ্গলকামনায় মানত করা। তাই উৎসবের দিনগুলিতে শহরের সোনার দোকানগুলিতে উপছে পড়ে ভিড়। এ বার কিন্তু ব্যতিক্রম। সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে। অক্ষয়বাবু বলেন, “সোনার দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে মানুষ আর অত টাকা খরচ করে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করাতে পারছেন না।”
কৃষ্ণনগরের প্রায় ২৬টি হোটেলে প্রায় ছ’শো মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা তার কয়েক গুণ বেশি। সেই সুযোগেই কোনও কোনও হোটেলের ঘর ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জেলার হোটেল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “চাহিদার তুলনায় ঘরের সংখ্যা খুবই কম। ফলে খুব কম সংখ্যক, মানুষকেই আমরা থাকতে দিতে পারছি। তবে এই সুযোগে কোনও কোনও ব্যবসায়ী ঘর ভাড়া বেশি নেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না।” |