দুর্গাপুজো-কালীপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই জগদ্ধাত্রীর আরাধনায় আবার মেতেছে তেহট্ট।
মঙ্গলবার থেকেই পুজো শুরু হয়েছে ক্লাব সেমনেস বয়েজের। সাবেকি সাজের প্রতিমা হলেও মণ্ডপসজ্জা ও থিম কিন্তু অভিনব। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা অসীম মণ্ডল জানান, ‘‘আমাদের এবারের থিম গ্লোবাল ওয়ার্মিং। বাজেট লক্ষাধিক টাকা।’’ প্রতি বছরই বড় বাজেটের পুজো করে তেহট্ট হাটপাড়া আমরা সবাই ক্লাব। এ বার থাকছে সাধক বামা ক্ষ্যাপাকে নিয়ে একটি কুড়ি মিনিটের প্রদর্শনীও। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা গৌর সাহা বলেন, ‘‘আমাদের পুজো মণ্ডপে এসে দর্শনার্থীদের মনে হবে সত্যিই তাঁরা যেন পাহাড়ে চলে এসেছেন। পাহাড় কেটে দরজা তৈরি হয়েছে। সেই দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে তুষারাবৃত পাহাড়। আর এখন সন্ধ্যার পরে একটু একটু ঠাণ্ডাও পড়ছে। সব মিলিয়ে গোটা ব্যাপারটা কিন্তু জমে যাবে। এছাড়াও থাকছে বাহারি আলো ও ড্রাই ফ্লাওয়ারের উপর বিশেষ কাজ। এ বারের পুজোর গোটা পরিকল্পনাটাই তেহট্টের সৌমিত্র বিশ্বাসের।’
তেহট্টের বর্গীডাঙাপাড়া যুব সঙ্ঘের এ বারের থিম তারাপীঠের মহাশ্মশান। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সমীর দত্ত বলেন, ‘‘তারাপীঠের শ্মশানকে একেবারে জীবন্ত বলে মনে হবে।’’ তেহট্ট দত্তপাড়া বারোয়ারির পুজো এ বার ১২ বছরে পা দিল। পুজো কমিটির সম্পাদক সৈকত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের এবারের থিম প্লাস্টিক বর্জন করুন। নানা ভাবে স্মরণ করা হবে স্বামী বিবেকানন্দকে।’’ প্রতি বারের মত এ বারও বেশ ধুমধাম করে পুজো করছে তেহট্টের ক্লাব বন্ধন ও ক্লাব ইউনিক। পুজোর কর্মকর্তা সুভাষ ঘোষ বলেন, ‘‘পাট ও পাটের দড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা ও মণ্ডপ। সবটাই তৈরি করছেন ক্লাবের সদস্যরা।’’ এ ছাড়াও বাইনপাড়া বারোয়ারি, তেহট্ট বাজার সোনাপট্টি, তেহট্ট হাইস্কুলপাড়া বারোয়ারি, তেহট্ট সিনেমাহলপাড়া, তেহট্ট কালীতলাপাড়া ও তেহট্ট চাতরপাড়াতেও বেশ জাঁকজমক করে পুজো হয়।
তেহট্টের সঞ্জয় দত্ত জানান, ‘‘তেহট্টে এখন সবথেকে বড় উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মানুষের আবেগ দেখার মত। দূরদুরান্ত থেকে লোক আসেন এই পুজো দেখতে। কিছু পুজো কমিটি পুজোতে সবার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ করছেন। আমরাও পুজো উদ্যোক্তাদের সচেতন করছি যাতে ভাসানের পরে জলঙ্গি নদী দূষিত না হয়। অনুরোধ করছি বিসর্জনের পরেই যেন নদী থেকে কাঠামো তুলে নেওয়া হয়।’’
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন,‘‘ এবছর তেহট্টে ৮০টিরও বেশি জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে। বেশ কয়েক দিন আগে পুজো উদ্যোক্তা, পুলিশ, দমকল ও অন্যান্য বিভাগের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলো রাস্তা মেরামতির কাজ করছে। বিসর্জনের দিন নদীর ধারে আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রতিটি মোড়ে থাকবে পুলিশ। বিসর্জনের পরেই নদী থেকে যাতে কাঠামো তুলে নেওয়ার ব্যাপারেও নজর রাখা হবে। ’’ |