পদ্মা গিলছে ঘর, ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ক্লাবের ছেলেরা
দীর উপরে ঝুলে পড়েছিল ঘর। একমাত্র ছেলেকে বুকে আঁকড়ে সেই ঘরের মধ্যেই থরথর করে কাঁপছিলেন হেনা বেওয়া। এখনই ঘর থেকে না বেরোলে ঘরের সঙ্গে তাঁরাও যে পদ্মায় পড়ে যাবেন, সে খেয়ালটুকু পর্যন্ত নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই ঘরে ঢুকেই প্রতিবেশী আসিফ ইকবাল তাঁদের সাহস দিয়ে, সযত্নে হাত ধরে বার করে আনেন।
মুর্শিদাবাদের লালগোলার পদ্মাপাড়ে ময়া গ্রামের হেনা বেওয়ার প্রতিবেশী ময়না বিবিরও আতঙ্কে হাত-পা সিঁটিয়ে গিয়েছিল। তাঁর ঘরও ঝুলছিল পদ্মার পাড়ে। ঘর পড়ে গেলে সেই সঙ্গে জলে পড়বে সব আসবাব, জিনিসপত্রও। চোখের সামনে সংসার ভেসে যাচ্ছে দেখেও কিছু করতে পারছিলেন না। পাড়ার ক্লাবের মেহেরাবুল আলমও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর ঘর থেকে যতটুকু পেরেছেন জিনিসপত্র উদ্ধার করেছেন।
একা আসিফ বা মেহেরাবুল নন। বিপর্যয় শুরু হওয়ার পর থেকে ময়ার দু’টি ক্লাব ময়া মিলন সমিতি এবং পণ্ডিতপুর স্পোর্টস ক্লাবের সদস্যেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভাঙন দুর্গতদের রক্ষা করতে। প্রশাসন এখন তাঁদের জন্য যে অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে, সেখানেও সমান ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই দুই ক্লাবের সদস্যেরা।
গ্রামবাসীদের জিনিসপত্র উদ্ধারে হাত ক্লাবের ছেলেদের। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
এই এলাকায় রবিবার থেকে চারশো মিটার এলাকা জুড়ে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। পাথরে বাঁধানো পাড় ভেঙে এখানে ঢুকে পড়েছে পদ্মা। ২৫টি পরিবার আশ্রয় হারিয়েছেন। যে কোনও সময়ে ছাদ হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন আরও ৩০টি পরিবার। সেই সব পরিবারের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই দুই ক্লাবের সদস্যেরা। এলাকার বিধায়ক কংগ্রেসের আখরুজ্জামানও বলেন, “ক্লাবের ছেলেরা পাশে ছিল বলেই হতাহতের ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। সরকারি ত্রাণের সামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দিতে তাঁরাই এখন মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন।” জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, “প্রশাসন যা করার করছে। কিন্তু বিপদের দিনে প্রতিবেশীরাই যে প্রকৃত বন্ধু, তা আবার প্রমাণ করে দিলেন এই যুবকেরা।”
হেনা বেওয়া বলেন, “সেই দিন থেকে ওঁরা রয়েছেন আমাদের পাশে পাশে। প্রশাসন অস্থায়ী আস্তানা করে দিয়েছে। ত্রাণও দিচ্ছে। কিন্তু যা হারিয়েছি তা ফেরত পাব কী করে? ক্লাবের ছেলেরা আমাদের ভাত ফোটানো থেকে কাঠ কেটে দেওয়া, সব কাজেই তাঁরা সাহায্য করছেন।” গোলাম মুর্তজা বলেন, “ক্লাবের ছেলেরা রোজ এসে জেনে যাচ্ছে ওষুধ লাগবে কি না। চাল বাড়ন্ত হলে, ওদের বলতে লজ্জা করে না।”
এই দুই ক্লাবের সদস্যেরা কিন্তু এই কাজকে স্বাভাবিক কর্তব্য বলেই মনে করেন। তাঁদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষিত। কেউ স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। আবার কেউ স্বল্প শিক্ষিত। চাকরি খুঁজছেন। মিলন সমিতির সম্পাদক সৌমেন মালাকার বলেন, “দশ হাত দূরে মানুষ বিপদে পড়েছে দেখে তো আর চুপ করে থাকা যায় না। সকলে নিজে থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।” সৌমেনবাবুর বক্তব্য, “আমাদের ক্লাবের সদস্যেরা কেউ শিক্ষিত, কেউ ততটা নন। কিন্তু সকলেই এক সঙ্গে থাকি। বিপদের দিনেও এক সঙ্গেই ঝাঁপিয়েছি।” পণ্ডিতপুর স্টার স্পোর্টস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মেহেরাবুল আলমের বক্তব্য, “ক্লাব মানে তো কেবল খেলাধুলো নয়। এক সঙ্গে এতগুলো ছেলে রয়েছি, বিপদে লোকের পাশে দাঁড়ানোই তো উচিত।” তাঁর কথায়, “ঈদ বা অন্য উৎসবেও আমরা প্রশাসনের পাশে দাঁড়াই। পাড়ারই মানুষ যখন বিপদে পড়েন, তখনও তো মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারি না।” লালগোলার বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষের কথায়, “ওই দুই ক্লাবের ছেলেরা একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ নমুনাও রেখেছেন। বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন ভাঙন দুর্গতদের।”
ভাঙন দুর্গতেরা হারিয়েছেন অনেক। কিন্তু এই যুবকদের জন্যই জীবনের উপরে আবার ভরসা ফিরেও পেয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.