রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
‘দাদার কীর্তি’ জমল না।
অশনিসঙ্কেত কেটে ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছে এমনও নয়। স্কোরবোর্ড যা-ই বলুক।
আর পাঁচ পয়েন্ট? তিন পয়েন্টের স্টেশনে পৌঁছতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু পাঁচের জংশন বহু দূর।
রঞ্জি অভিযান শুরুর দিনে তা হলে কী পেল বাংলা?
ছোট করে বললে, ‘ছোটে দাদা’ এবং তাঁর অপরাজিত সেঞ্চুরি (১২০ ন:আ:, ২০টি বাউন্ডারি সমেত)। যা স্বস্তিকচিহ্ন এঁকে দিচ্ছে বাংলা ড্রেসিংরুমে।
আইপিএলের বাজারে ‘ছোটে দাদা’ কে, সেটা বলার জন্য কোনও পুরস্কার থাকার কথা নয়। তিনি যে মনোজ তিওয়ারি, এবং তাঁকে যে হালফিলে এই নামে ডেকে থাকেন নাইট রাইডার্স মালিক শাহরুখ খান সেটা আর কে না জানে? আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি কল্কে পাচ্ছেন না। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাকে যে টানবেন বহু দিন, তার কিছু নমুনা বৃহস্পতিবারের ইডেনে পাওয়া গেল। অক্সিজেনের অভাবে যে ভাবে একটা সময় ভুগছিল বাংলা!
অথচ এলেবেলে প্রতিপক্ষ বললেও কম বলা হয়। ব্যাটিংয়ে শুধু পার্থিব। আর বোলিং? ময়দানের দ্বিতীয় ডিভিশনের বোলারও আরামসে ঢুকে পড়বেন এই গুজরাত টিমে। যেমন পেস, তেমন স্পিন। লাইন-লেংথের বালাই নেই। নেই স্পিনের কারিকুরি। যা দেখে সিএবি-র তিন তলায় রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরক্তিতে বলেই ফেললেন, “এটা বোলিং হচ্ছে? খুব খারাপ।” মোদ্দা কথা, ব্যাটসম্যান ভুল না করলে উইকেট যাওয়ার গল্প ছিল না। |
আর ঠিক সেই গল্পটাই শুরতে লিখে ফেলল বাংলা!
ভুল বোঝাবুঝিতে অরিন্দম দাস (০) রান আউট। তিনে নেমে ‘অন্য’ অরিন্দমও (ঘোষ) (২৯) নির্ভরতা দিতে পারলেন না। বাংলা অধিনায়কের ব্যাটও চলছে ঢিমেতালে। রান উঠছে না, স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ৮১-৩, বাংলাকে বাঁচায় কে?
আর কে? সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রথম তিন বল একটু দেখে নেওয়া। এবং চার নম্বরটাই ছুটল বাউন্ডারিতে। একে-একে সাতটা। কোনওটা কভার দিয়ে, কোনওটার ঠিকানা মিড উইকেট বাউন্ডারি। ক্লাবহাউসের আপার টিয়ারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা শ’খানেক দর্শকের থেকে উড়ে আসছে সিটি। মুর্হুমুহু হাততালি। এবং সৌরভের সেঞ্চুরির গন্ধে যখন ইডেনে ভিড় জমাচ্ছে জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলো, তখনই বিপত্তি। কয়েক বছর আগে হলে যেটা নিশ্চিত ‘বাপি বাড়ি যা’ হত, এ দিন সেটাই হয়ে গেল ‘মিসটাইমড’ শট। ৬৩ বলে ৩৪, রান হিসাবে আহামরি নয়। কিন্তু সৌরভের ওই ছোট্ট ইনিংসই ঝিমিয়ে পড়া বাংলা-ব্যাটিংকে তাতিয়ে দিয়ে গেল। মনোজও তো হাত খুললেন ওই সময় থেকে।
পিচে প্রথম দিন থেকেই ঘুরছে বল। বাউন্স উঁচু-নীচু। বাংলা শিবিরের টার্গেট, অন্তত সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো চাপিয়ে বিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। ক্রিজে ঋদ্ধি আছেন। আছেন মনোজ। তার পর লক্ষ্মীরতন শুক্ল। আজ রানটা তিনশো ছুঁলে কাজটা সহজ হত। বাংলা অধিনায়ক আবার ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথাও শুনিয়ে রাখলেন। বলছিলেন, “ডাবল সেঞ্চুরি মাথায় রেখেই কাল নামব।”
উপায় কী? অজিঙ্ক রাহানেরা যে ভাবে এগোচ্ছেন!
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ২৬১-৪ (মনোজ ব্যাটিং ১২০, সৌরভ ৩৪, ঋদ্ধি ৪১ ব্যাটিং, পাঞ্চল ২-২২)। |