সে দিন লর্ডসে হাজির থাকা অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমী দেখেছিলেন, পাকিস্তানি বোলাররা তিনটে নো বল করলেন। দর্শকদের কাছে সেটা তখনও পর্যন্ত ছিল খুবই স্বাভাবিক একটা ক্রিকেটীয় ঘটনা। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রাও যে মাঝে মাঝে ভুল করেন, সেটাই যেন আর একবার দেখা গিয়েছিল। সে দিনের দর্শকেরা অন্তত তাই মনে করেছিলেন।
সে সময় কেউই বুঝতে পারেননি, নো বলগুলো ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে। করেছিলেন মহম্মদ আসিফ এবং মহম্মদ আমের। এবং করা হয়েছিল অধিনায়ক সলমন বাটের কথা মতোই।
২৬ অগস্ট, ২০১০ লর্ডসে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের চতুর্থ টেস্ট শুরু হওয়ার সময় কেউ ভাবতেও পারেননি কী ঘটতে চলেছে। আসিফ-আমেরের করা তিনটি নিছক নো বল যে ক্রিকেটকে কতদূর কলঙ্কিত করবে, সেটা তখনও বোঝা যায়নি।
ভাগ্যের এমন পরিহাস, যে কাগজে ‘লর্ডসগেট’ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছিল, তারাই এখন বেআইনি কাজের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেলেও ক্রিকেট দুনিয়ার ভিত পর্যন্ত নড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। তাদের ‘স্টিং অপারেশন’-এ দেখা যায়, পাক ক্রিকেটারদের এজেন্ট মাজহার মজিদ অর্থের বিনিময়ে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পরিচয় গোপন করে আসা সাংবাদিককে মাজহার জানিয়ে দেন, লর্ডস টেস্টের বিশেষ সময়ে পাক পেসাররা তিনটে নো বল করবেন। এর জন্য মজিদকে প্রায় দেড় লাখ পাউন্ডও (ভারতীয় মুদ্রায় ১ কোটি ১৮ লাখের কাছাকাছি) দেওয়া হয়। যে অর্থের অনেকটারই আর হদিশ পাওয়া যায়নি।
এই গোপন টেপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর গোটা ক্রিকেট দুনিয়া কেঁপে যায়। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর সলমন বাট, মহম্মদ আসিফ, মহম্মদ আমেরের হোটেল ঘরে হানা দিয়ে প্রচুর অর্থ উদ্ধার করে পুলিশ। যে অর্থ নাকি মজিদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের সাংবাদিক।
তিন ক্রিকেটারের পতনের সেই শুরু। প্রথমে তাঁদের সাসপেন্ড করে আইসিসি। তার পরে লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে শুরু হয় মামলা। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে মামলা চলার পর তিন ক্রিকেটার এবং তাঁদের এজেন্ট মজিদকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
এক বছর আগে অগস্টের এক দুপুরে যে অন্ধকারের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন তিন ক্রিকেটার, তা শেষ হল লন্ডনের জেলে গিয়ে। |