লাই ডিটেক্টর চাই ২৪ ঘণ্টা
প্রশ্ন: জেলটা বাড়াবাড়ি হল? না ঠিক শাস্তি?
সৌরভ: ঠিক শাস্তি। যা দোষ করেছে, তার জন্য ঠিক আছে।

প্র: আপনার নেতৃত্ব দেওয়া ভারত নিষ্কলঙ্ক ছিল। কিন্তু কেকেআরে আপনার অধীনে খেলা সলমন বাট জড়িয়ে গেলেন, অবাক লাগছে না?
সৌরভ: অবাক মানে কী? ভীষণ আশ্চর্য লাগছে। সলমন বাট যে এটা করতে পারে আমি ভাবতেই পারছি না। আমার তো আপাত ভাবে ওকে ভীষণ ভদ্রলোকই মনে হত।

প্র: ভারতে যারা ম্যাচ গড়াপেটা করেছিল তাদেরও কি জেলে পাঠানো উচিত ছিল?
সৌরভ: (সতর্ক গলায়) এই ব্যাপারে আমাদের দেশের আইনের ধারাটা ঠিক জানি না। আমার মন্তব্য করা উচিত হবে না।

প্র: আপনার আমলে তো এ সব ঘটতে দেখেছেন। বিশেষ করে যখন আপনি টিমের নিছক একজন ক্রিকেটার ছিলেন?
সৌরভ: সামনাসামনি কখনও বুঝতে পারিনি। এখানে তো টিভি ফুটেজ দেখে পুরো ব্যাপারটা মিলে যেতে দেখলাম। আর তা ছাড়া আমি যে বলব, আমার কোনও প্রমাণ নেই। এক্স, ওয়াই, জেডকে সন্দেহ করেছি সেটাও বলার উপায় নেই।

প্র: আপনি যখন খেলতেন, তখনও তো একটা ম্যাচের কথা শোনা যায়। আমদাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের ফলো অন না করানো নিয়ে কোনও সন্দেহ হয়নি?
সৌরভ: না আমি কিছু বুঝিইনি।

প্র: জয়বন্ত লেলে তাঁর সাম্প্রতিক বইতে লিখেছেন সিদ্ধান্তটা অধিনায়ক তেন্ডুলকরের ছিল না। ছিল কোচ কপিল দেবের।
সৌরভ: হতে পারে। আমার কোনও ধারণা নেই।

প্র: ধারণা নেই কী করে বলছেন? আপনি তো তখন টিমের ভাইস ক্যাপ্টেন?
সৌরভ: আমাকে কেউ এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আমি সত্যিই কিছু জানতাম না।

প্র: তা হলে আরও একটা ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিই। যেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে হয়েছিল। যেখানে টিমের প্রাক্তন এক অধিনায়কের সঙ্গে আপনি ব্যাট করছিলেন। আপনি তখন সেট হয়ে গিয়েছেন। আর ওই প্রাক্তন অধিনায়ক নেমেছেন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে। নেমে আপনাকে বলেন, ক্যাপ্টেন বলেছে চালিয়ে খেলতে। আপনি সেই মতো স্টেপ আউট করতে গিয়ে আউট হয়ে যান। ভারত ম্যাচ হেরে যায়। এর পর ড্রেসিংরুমে ফিরে শোনেন ক্যাপ্টেন সচিনের আদৌ চালিয়ে খেলার কোনও নির্দেশ ছিল না।
সৌরভ: হ্যাঁ, এটা ১৯৯৭-এ ঘটেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তবে তখনও বুঝিনি এ সব সত্যি হতে পারে।

প্র: ২০০০ সালে আপনি অধিনায়ক হওয়ার পর টিম নাকি শপথ নিয়েছিল যে কেউ ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়াবে না। ঠিক কী হয়েছিল বলবেন?
সৌরভ: ঠিকই। কেনিয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে আমরা একটা মিটিং করেছিলাম। সেখানে আমরা পাঁচ-ছ’জন সিনিয়র ক্রিকেটার পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম, এই জিনিস বরদাস্ত করা হবে না। এমনকী কারও সম্পর্কে সন্দেহও যদি হয়, তাকে টিমে নেওয়া হবে না।

প্র: নয়ন মোঙ্গিয়াকে কি সে জন্যই বাদ দেওয়া হয়েছিল?
সৌরভ: না, মোঙ্গিয়া তার পরেও কিছু দিন খেলেছিল। তার পর একটা সময় বোর্ড থেকেই বলা হয় ওকে না নিতে।

প্র: অধিনায়ক হিসেবে আপনার নানান গৌরবের মুহূর্তের মধ্যে এটা কি সর্বাগ্রে থাকবে যে আপনি ভারতীয় ক্রিকেটকে দূষণমুক্ত করতে পেরেছিলেন?
সৌরভ: দেখুন, চারপাশে এখন যা দেখছি, শুনছি তাতে তো মনে হয়ই।

প্র: কেউ কেউ বলছেন, পুরনো কাসুন্দি আর না ঘেঁটে নতুন করে ক্রিকেটের এগোনো উচিত। যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, যে সব অপরাধের শাস্তি হয়নি সেগুলো নতুন করে বিচার হোক। আপনি কোন দলে?
সৌরভ: যে বা যারা অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই ধরা উচিত। দরকার হলে পুরনো ফাইল খুলে।

প্র: ইমরান খান প্রস্তাব দিয়েছেন ক্রিকেটারদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করা হোক।
সৌরভ: আমি মনে করি না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যাপারটা পার্সোনাল ব্যাপার। ওটায় হস্তক্ষেপ করা উচিত না।

প্র: তা হলে কী করা হবে?
সৌরভ: লাই ডিটেক্টর টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে আইসিসিকে। যে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে যেন চব্বিশ ঘণ্টা লাই ডিটেক্টর টেস্টের ব্যবস্থা থাকে। সন্দেহ হচ্ছে কী, পরীক্ষার সামনে ফ্যালো।

প্র: ৩ নভেম্বর ২০১১, ক্রিকেটের সুখের দিন না দুঃখের দিন?
সৌরভ: সুখের দিন, দুঃখেরও।

প্র: আচ্ছা, এই মাজহার মজিদ জাতীয় লোকেরা নানান টোপ নিয়ে ক্রিকেটারদের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। এদের থেকে বাঁচার রাস্তা কী?
সৌরভ: প্রচুর লোক ঘুরে বেড়ায় সেটা তো সত্যি কথা। কিন্তু নিজে ঠিক থাকলেই হল। কোনও সমস্যা নেই। বুকিরাও জানে কাকে ধরতে হবে। আর কাকে ধরে লাভ নেই।

প্র: আপনি পাঁচ বছর ভারত অধিনায়ক ছিলেন। কখনও কেউ আপনাকে বিরক্ত করেনি?
সৌরভ: কোনও দিন না।

প্র: অনেকের মনে হচ্ছে, দুর্নীতি যেখানে সমাজে এত সর্বগ্রাসী, ক্রিকেটার তার বাইরে থাকবে এটা আশা করাই অন্যায়।
সৌরভ: দুর্নীতির প্রশ্নটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে দুর্নীতিপরায়ণ হবে আর কে হবে না, সেটা নিজের ইচ্ছের উপর। তবে আজকের সিদ্ধান্তের পর নিশ্চয়ই একটা ভয় তৈরি হবে। আর আমার মনে হয় এর পরও কেউ যদি অপরাধ করে তার সাজা যেন আরও দ্বিগুণ বা তিন গুণ করে দেওয়া হয়।

প্র: যেহেতু স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ গড়াপেটায় ক্যাপ্টেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, আপনার কি মনে হয় ক্যাপ্টেন বাছার ব্যাপারে সব দেশেরই বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত?
সৌরভ: হ্যাঁ, মনে হয়। ক্যাপ্টেন এমন কাউকে যেন বাছা হয় যার সততা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে যেমন ধোনি। ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু স্ট্রস। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক।

প্র: ভারতীয় ক্রিকেটকে কি সৌভাগ্যবান মনে হয় যে পরপর চার জন এমন অধিনায়ক তারা পেয়েছে, যাদের সততা প্রশ্নাতীত? আপনি, দ্রাবিড়, কুম্বলে এবং ধোনি।
সৌরভ: এর সঙ্গে সচিনও অ্যাড করুন। পরপর পাঁচ জন।

প্র: স্পট ফিক্সিং করে কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স হতে পারে, কিন্তু পিছন ফিরে কি সেই ক্রিকেটার কখনও সেই সুখস্মৃতির অধিকারী হবে যে আমি স্টিভ ওয় বনাম গাঙ্গুলি ম্যাচের সেনাপতি ছিলাম?
সৌরভ: একদমই ঠিক। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে ওঠার যে আমেজ সেটা কোটি কোটি ডলারের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়। শুধু স্টিভ কেন, নাসেরের সঙ্গে লড়াই, ২০০৪-এ পাকিস্তানে গিয়ে জিতে আসা, ন্যাটওয়েস্ট ফাইনাল জেতা, বিশ্বকাপ ২০০৩। পৃথিবীর কোনও বুকির ক্ষমতা নেই ওই শ্রদ্ধা,আনন্দ আর মর্যাদা মানুষকে দেওয়ার।

প্র: উঠতি ক্রিকেটারদের কি এটাই শেখানো উচিত নয়? অনিল কুম্বলে যেমন সম্প্রতি বোর্ডের সভায় প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের উঠতি ক্রিকেটারদের তিনি গ্রুমিং করতে চান।
সৌরভ: গ্রুমিং খুব জরুরি। এটা বোঝানো জরুরি যে পনেরো বছর মাথা উঁচু করে ক্রিকেট খেললে যে শ্রদ্ধা পাওয়া যায়, পৃথিবীর কোনও অবৈধ ধনসম্পদ তোমায় সেটা দিতে পারবে না।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.