যত দিন যাচ্ছে ততই নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে দলমার দামালেরা। এমনকী তারা বদলে নিচ্ছে নিজেদের খ্যাদ্যাভ্যাসও। আর এই অভিযোজনের ফলেই হাতির দলকে কোনও একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু হাতিকে জঙ্গলেই আটকে না রাখা গেলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়ারই আশঙ্কা। এখনই গ্রাম ছাড়িয়ে শহরাঞ্চলেও ঢুকে পড়ছে হাতির পাল। মেদিনীপুর, দুর্গাপুর, এমনকী হাওড়ার কাছাকাছিও হাতির পৌঁছে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের জঙ্গলে ফেরাতে হিমসিম খেতে হয়েছে বন দফতরকে। যত দিন যাবে হাতি যে আরও এলাকা বাড়াবে তা নিয়ে সংশয়ও নেই বনাধিকারিকদের। দুশ্চিন্তা তাই বাড়ছে সব মহলেই।
দলমা থেকে হাতির দল এ রাজ্যে আসা শুরু করেছিল আশির দশকে। প্রথমে অবশ্য ৫-৭টি করে হাতি আসত। তখন তারা বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কখন কখনও লালগড়ের কাছাকাছিও অবশ্য চলে আসত। তবে কংসাবতী নদী পার হত না। কয়েক বছর এ ভাবেই চলেছিল। তার পর নদী পার করে লালগড় হয়ে গোয়ালতোড় ও গড়বেতায় পৌঁছনো শুরু হল। তবে তখনও শিলাবতী পেরিয়ে গড়বেতার শেষ প্রান্তে যেত না। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে শিলাবতী পেরোনোও অভ্যাস করে নিয়েছে হাতির দল। পৌঁছে গিয়েছে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত। যতবার পথে নদী পড়েছে, হাতির পাল আটকে থেকেছে দু’চার বছর। তার পর নদী পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। এ ভাবেই ক্রমশ এলাকা বাড়াচ্ছে হাতির পাল। শীতের আগে এ রাজ্যে ঢুকে পড়া, তার পর লালগড়, গড়বেতা হয়ে বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফের লালগড়, কাঁটাপাহাড়ি হয়ে দলমায় ফিরে যেত হাতির দল। ১৯৯৫ সালের পর থেকে সেই এলাকা ক্রমে বাড়ছে।
এখন অগস্ট মাসেই দলমা থেকে হাতির দল ঢোকে রাজ্যে। পরের মার্চ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। ১৯৯৫ সাল থেকে হাতির দল লালাগড়, কাঁটাপাহাড়ি থেকে শালবনিতেও ঢুকছে। তার পর শালবনি থেকে আরও এগিয়ে চাঁদড়া, গুড়গুড়িপাল, মেদিনীপুর শহর-ঘেঁষা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও এখন চলে আসছে। এমনকী কাঁসাই পেরিয়ে কলাইকুণ্ডা হয়ে কেশিয়াড়ি, নয়াগ্রাম, দাঁতনেও চলে যাচ্ছে।
গড়বেতা থেকেও হাতির পাল এখন মাঝেমধ্যেই ঢুকে যাচ্ছে সন্ধিপুর এলাকাতে। অর্থাৎ পুরো জঙ্গলমহল তো বটেই, আরও বৃহত্তর এলাকা এখন দলমার দাঁতালদের দখলে। কেশিয়াড়ি, নয়াগ্রামে প্রচুর আখ চাষ হয়। এখন সেই আখই হাতিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওই পর্যন্ত। আর চাষির দুর্ভোগ বাড়ছে।
কেন বাড়ছে হাতির হানার এলাকা? বন দফতরের বক্তব্য, মূলত খাবারের সন্ধানেই নতুন নতুন এলাকা খুঁজে নিচ্ছে হাতিরা। খাদ্যাভ্যাসও বদলে নিচ্ছে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুসারে। এক সময়ে হাতির প্রিয় খাবার ছিল বাঁশ, কলাগাছ, বিভিন্ন গাছের ডালপালা, ঢাড্ডা ঘাস, কুম্ভি, লাটো চালতা। কিন্তু এখন ধান, আলু, বাঁধাকপি সবই খাচ্ছে। বাদ দিচ্ছে না লাউ, পটল, টমেটোও! বাড়িতে হামলা চালিয়ে রান্না করা ভাতও খেয়ে নিচ্ছে। অগস্ট মাসে হাতির দল ঢোকার সময়ে মাঠে থাকে পাকা ধান। ধান ওঠার পরেই হয় আলু ও সব্জি চাষ। সারা শীতকাল জুড়েই সব্জি চাষ হয় জেলায়। শীতের মরসুমের সেই সব্জিও যাচ্ছে হাতির পেটে।
|