আমের মান উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে বাজার ধরতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মাধ্যমে মালদহের জেলাশাসক ৭১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা চাইলেন। এই ব্যাপারে একটি প্রকল্প রাজ্য সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। উদ্যান পালন দফতরের উপ অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহি বলেন, “এই প্রজেক্ট অনুমোদিত হলে জেলার আম ভিত্তিক অথর্নীতির ব্যাপক উন্নতি হবে। এখন বছরে ২০০-৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। সেটা এ বার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মালদহ থেকে জাপান সহ বিদেশের বাজারে ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন আম রফতানি হবে। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “মন্ত্রকের সচিব আমাকে ফোনে জানিয়েছেন মালদহের আমের প্রকল্প রাজ্য সরকার অমুমোদন করেছে। যে প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল সেটা ঠিকঠাক কাযর্কর হলে যায় তবে মালদহ জেলার আম সারা দেশে সেরা হয়ে উঠবে। আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অথর্নৈতিক উন্নতি হবে।” রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আমের বাগান মালদহে। উৎপাদনেও রাজ্যের মধ্যে প্রথম। প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে প্রতি বছর আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আমের ফলন হচ্ছে। রাজ্যে সর্বাধিক আম ফলিয়েও গুণগত মান খুব ভালো না হওয়ায় জেলার আম বাইরে রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে লাগোয়া বাংলাদেশে যেখানে প্রতি বছর ১ থেকে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন আম রফতানি হত। সেখানে এ বছর মাত্র ১৫ হাজার মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৫০ শতাংশ আমবাগানের গাছ পুরানো হয়ে যাওয়ায় ফলন কমে যাচ্ছে। এমনকী বেশি ফলনের আশায় ব্যবসায়ীরা গাছে সিন্থেটিক কীটনাশক ও নানা ধরনের হরমোন ব্যবহারের ফলে সেই সমস্ত গাছের আমের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। মালদহের আমের চাহিদাও দিন দিন কমছে। জেলার আমের ফলন ও গুণগত মান বাড়াতে আমের চারা গাছ তৈরি থেকে শুরু করে গাছ থেকে পরিপক্ক আম কীভাবে পেড়ে ও তা কোথায় কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তার জন্য জেলার কোথায় কী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে তার বিস্তারিত তালিকা দিয়ে প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ওই রিপোর্টই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প রিপোর্টে ‘প্রি-হারভেস্টিং’ ও ‘পোষ্ট-হারভেস্টিং’ দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রি-হারভেস্টিংয়ে নতুন গাছ লাগানোর পাশাপাশি পুরাতন গাছের পরিচর্যা, আমবাগানের লিজ দেওয়ার প্রবণতা কমানো, সুসংহত ভাবে গাছের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা, জৈব সারের ব্যবহার সহ ১৪টি সতর্কতা অবলম্বন করা কথা বলা হয়েছে। পোষ্ট হারভেস্টিংয়ে বলা হয়েছে আম পাকলে হলে তা বোঁটা সমেত ভেঙে প্লাস্টিক পাত্রে রাখতে হবে। এরপর প্যাক হাউসে পাঠিয়ে সেই আমের প্রসেসিং করতে হবে। এর জন্য জেলার বতর্মানে ১৪৪টি কালেক্টিং সেন্টারের মধ্যে অমৃতি, রতুয়া, পুকুরিয়া মোড়, মথুরাপুর, কালিয়াচক, বাঙিটোলা, বৈষ্ণবনগর, সাহাপুর, একলাখি-সহ ৯টি কালেক্টটিং সেন্টারকে অত্যাধুনিক কালেক্টটিং সেন্টার করতে হবে। উদ্যান পালন দফতরের উপ অধিকর্তা বলেন, “কালেক্টটিং সেন্টার আধুনিক করতে ৪২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া মালদহ শহরের ইংরেজবাজার রেগুলেটেড মার্কেটে ও সামসি রেগুলেটেড মার্কেটে আমের পালপ নির্বীজকরণ করার প্লান্ট এবং মালদহে ভেপার হিট চেম্বার তৈরি করার প্রস্তাব ওই প্রজেক্ট রিপোর্টে দেওয়া হয়েছে। |